সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের আহ্বান

সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের আহ্বান

এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্ক: চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় পার্লামেন্টে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সনাতন পার্টির কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে মনীন্দ্র নাথ বলেন, চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় আপনি এমন একটি জায়গা তৈরি করবেন, যাতে করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভোটে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে গিয়ে তাদের কথাগুলো তুলে ধরতে পারেন এবং এর মাধ্যমে একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। একইসঙ্গে এমন ব্যবস্থাও করবেন, যাতে পার্লামেন্টে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে সংখ্যানুপাতিক হারে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ থেকে ২০২৪- দীর্ঘদিন থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ইতিহাস বঞ্চনার ইতিহাস। একাত্তরের পরে এ দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার হতে থাকে। এমন প্রেক্ষাপটে ১৯৮৮ সালে মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জন্ম হয়। গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরে আমরা আশা করেছিলাম, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সেই বঞ্চনা-বৈষম্য দূরীভূত হবে, কিন্তু তা হয়নি। বরং দীর্ঘদিনের বঞ্চনা-বৈষম্যের কথা বলায়, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কথা বলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ আগস্টের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ঘটা নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমরা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে দুই ধাপে সারা দেশে নির্যাতন-নিপীড়ন, ধর্ষণ, দখল, হত্যার ঘটনাগুলো তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু সত্য ঘটনাগুলোকে এই সরকার স্বীকার করতে চায় না।

মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, একাত্তরের পরে ৮ দফার দরকার হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে ধারাবাহিক বঞ্চনা-বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে ৮ দফা দেওয়া হয়। আমরা অবিলম্বে এই ৮ দফার বাস্তবায়ন চাই। একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় প্রতিবাদ করতে হবে। এই প্রতিবাদ শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিবাদ নয়; এই প্রতিবাদ হবে মানবিক প্রতিবাদ, দেশকে রক্ষা করার জন্য প্রতিবাদ, সরকারের সত্য ঘটনাকে প্রকাশ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এই সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা দেখেও দেখছেন না। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ সরকারকে এক সময় ধিক্কার দেবে। পূর্বের ধারাবাহিকতায় গত মার্চ মাসেও দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ঐক্য পরিষদের এই নেতা।

অনুষ্ঠানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুরঞ্জন ঘোষ বলেন, ভোটের জন্য আন্দোলন হয়েছে। আবু সাঈদ, মুগ্ধরা রক্ত দিয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই আন্দোলনের ফসল। তাই সরকারকে বলব নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিন।

উদ্বোধকের বক্তব্যে বাংলাদেশ সনাতন পার্টির উপদেষ্টা অধ্যাপক অশোক তরু বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীর কোনো অপরাধ নেই। তারপরও তিনি অন্তরীণ। সুতরাং দাবি আদায়ে সনাতনীদের আরও ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় বলেন, আমরা ধর্মের জন্য দেশ ছাড়ব না। আগামীর বাংলাদেশেও আমরা এ দেশের মাটি ছাড়ব না। এ দেশ আমাদের। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমেছে। সেজন্য ৩৬ দিনে স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়েছে। আমাদের মধ্যে এই একতা তৈরি করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সভাপতি আশীষ কুমার দাশ বলেন, বিভিন্ন সময় জাতীয় সংসদে হিন্দু এমপিরা ছিলেন। কিন্তু সনাতনীদের স্বার্থে তারা কাজ করেননি। তারা বলতেন যে, তারা আওয়ামী লীগের এমপি, বিএনপির এমপি। তাই আমাদের প্রয়োজন সনাতনীদের এমপি, যারা সনাতনীদের স্বার্থে কাজ করবে। তিনি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবি করেন।
বাংলাদেশ সনাতন পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়ের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- অনিক সাধু, হিন্দু যুব মহাজোটের প্রদীপ কান্তি দে, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট লিটন বনিক, প্রাণতোষ তালুকদার, সাংবাদিক শ্যামল কান্তি নাগ, সদস্য নয়ন বিশ্বাংগ্রী। এছাড়া দলের আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের মধ্যে সায়ন বালা, অজয় ভট্টাচার্য, মিঠুন ভট্টাচার্য শুভ, উজ্জ্বল বিশ্বাস, রঞ্জন গোস্বামী, গৌরাঙ্গ প্রসাদ দে প্রমুখ বক্তব্য দেন।।

এসবিডি নিউজ ডেস্ক