তীব্র লোডশেডিং আর পানিসংকটে অতিষ্ট জনজীবন!
সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। রাজধানীতে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পানির সংকট। যতদিন যাচ্ছে পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। একদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং এবং অন্যদিকে পানির সংকটে রাজধানীবাসীর জীবনযাপন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও লোডশেডিং কমাতে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। আর ঢাকা ওয়াসা এবারের গ্রীষ্মে পানি সংকট হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। বরং রাজধানীতের পানির জন্য হাহাকার বেড়েই চলেছে।
জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার) এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সব শ্রেণীর গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। এ সময় কমিশনের চেয়ারম্যান লোডশেডিং কমাতে পিডিবি তাদের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেশি সময় ধরে চালাবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু এতে সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদরা এতে ভরসা করতে পারছেন না। বরং সরকারের সোয়া ৩ বছরে উৎপাদিত প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এখনই লোডশেডিং কমছে না। বরং বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ানো লাগতে পারে। চলতি বছরের জুন এবং ডিসেম্বর দু’দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। জুনের মধ্যে ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে আরো কয়েকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা। এসব কেন্দ্রে জ্বালানির তেলের খরচের জোগান দিতে গিয়ে ব্যয় আরো বাড়বে। তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বিদ্যুতের দামও বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না।
চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে সারাদেশেই অসহনীয় লোডশেডিং হচ্ছে। গতকাল শনিবারও সারাদেশেই সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাত এমনকি গভীর রাতেও বিদ্যুৎ ঘন ঘন যাওয়া আসা করেছে। অন্য সকলের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পিডিবির হিসাবে দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো। এর বিপরীতের উৎপাদন প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। ফলে ঘাটতি থাকছে ৫০০ মেগাওয়াটের মতো। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো। সেই হিসাবে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট।
এদিকে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সবধরনের শিল্প উৎপাদনের ব্যয় বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে জনসাধারণের ওপর। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে জিনিসপত্রের দাম আরো এক ধাপ বাড়বে। সার্বিক জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে এমন সব আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। এতে জনস্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এভাবে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে সার্বিক অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে উৎপাদক পর্যায়ে ব্যয় বাড়বে। সেটার চাপ ভোক্তার ওপরই পড়বে। সব মিলিয়ে এটা ভোক্তার ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানান, ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষকে নতুনভাবে বিদ্যুতের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে সেচে। নতুন শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে বসতবাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হচ্ছে। নতুন উৎপাদিত বিদ্যুৎ নতুন গ্রাহকদের দেওয়ায় বিদ্যুতের বাহ্যিক উন্নতি বোঝা যাচ্ছে না।
এদিকে পানি নিয়ে রাজধানীবাসীর নানা ক্ষোভ আর অভিযোগের শেষ নেই। গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পানির দাবিতে বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটছে। পানির অভাবে অনেক এলাকায় রান্নাবান্না থেকে শুরু করে গোসল, বাথরুম কোনোটাই সময়মতো করা যাচ্ছে না। নিজ এলাকায় পানি না থাকায় অন্য এলাকায় গিয়ে কষ্ট করে পানি আনতে হচ্ছে। অন্যদিকে অনেক এলাকায় পানি থাকলেও তাতে দুর্গন্ধ ও ময়লা থাকায় তা পান করা যাচ্ছে না। এই পানি খেয়ে অনেকে ডায়রিয়াসহ নানাবিধ পেটের পীড়ায় ভুগছেন বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীরা অভিযোগ করেন।
২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা ওয়াসা ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিন এ খান ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী বছর (২০১২) সায়েদাবাদে দূষিত পানির প্রাক-শোধনাগার চালু হবে, তখন আমাদের সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধ থাকবে না। এ বছরের জন্য (২০১১) নগরবাসীকে একটু কষ্ট সহ্য করতে হবে। ওয়াসার এমডির এ কথা কাজে আসেনি।
এবার বছরের শুরুতে ওয়াসার এমডি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জানিয়েছেন, এ বছর গ্রীষ্মে রাজধানীতে পানির সংকট হবে না। পানি সংকট মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপের কথাও জানান তিনি। কিন্তু পুরো গ্রীষ্ম মৌসুমের আগে রাজধানীতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তার এবারের ঘোষণাও কাজে আসবে না বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।