বগুড়ার শেরপুরে শিক্ষকের নির্মম নির্যাতনে শিশু জান্নাতী হাসপাতালে
চপল সাহা, এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খন্দকারটোলা বেসরকারি (রেজিঃ) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিশু ছাত্রী শিক্ষকের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণীর ওই ছাত্রীর নাম জান্নাতী খাতুন। গত ৩ এপ্রিল মঙ্গলবার শ্রেণীকক্ষের ভেতরে ওই শিক্ষক মারপিট করে তাঁর হাত ভেঙে দেয়। বর্তমানে সে শেরপুর হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডের ৫নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ভেঙে যাওয়া হাতটি পলাস্টার করে গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার রাতেই ভুক্তভোগী শিশুর ভগ্নিপতি আল আমিন বাদি হয়ে নির্যাতনকারী ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক আবুল হাসেমকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে রাতেই পুলিশ তাকে আটক করে থানায় আনে। তবে ঘটনাটিকে ধামাপাচা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল থানা, উপজেলা ও গ্রাম এলাকায় দফায় দফায় দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ছাত্রী নির্যাতনকারী ওই শিক্ষককে বাঁচাতে লক্ষাধিক টাকার মিশন নিয়ে মহলটি মাঠে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা স্থানীয় শিক্ষা ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, শিক্ষকের নির্যাতনে শিশু হাসপাতালে আর নির্যাতনকারী ওই শিক্ষককে বাঁচাতে মহলটি জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ শিক্ষা বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা জেগে ঘুমোচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জান্নাতী খাতুন জানায়, তখন বেলা অনুমান ৩টা হবে। বিজ্ঞান পড়াতে ক্লাসে আসেন আবুল হাসেম স্যার। স্যার পড়াচ্ছেন। আর আমি সে মোতাবেক খাতায় লিখছি। হঠাৎ স্যার এসে আমাকে বলেন, ‘তুই এখনও পড়া বের করতে পারিস নাই। এই কথা বলে স্যার মাথার চুল ধরে আমাকে বেত দিয়ে পিঠে এবং হাতে আঘাত করতে থাকে। এতে বাম হাতে ভীষণ ব্যাথা পাই। একপর্যায়ে আবারও স্যার মাথার চুল ধরে বই রাখার বেঞ্চের সঙ্গে আমার মাথা ৪-৫বার জোরে জোরে আঘাত করেন। ফলে মুখ মন্ডলেও প্রচন্ড ব্যাথা পাই। এমনকি ঠোঁঠ দিয়ে রক্ত ঝরে। তখন স্যারের কাছে পানি খেতে চাই। কিন্তু স্যার আমাকে পানি খেতে দেয়নি। উল্টো আমাকে ক্লাস রুমের ভেতর আটকে রাখেন। পরে স্কুল ছুটি হলে ব্যাথার যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি যাই। এরপর স্কুল ব্যাগ ও টিফিন বক্স ফেলে দিয়ে বিছানায় ঠাস করে পড়ে যাই। মুহুর্তে আমার বড় আপু জিজ্ঞাস করে, তোর কি হয়েছে। আমি তখন সবকিছু খুলে বলি।
শিশু জান্নাতীর ভগ্নিপতি আল আমিন ও তাঁর মা আমেনা বেগম জানান, জান্নাতীর বাবা শহিদুল ইসলাম এবং তাঁর মা জাহেদা বেগম ঢাকায় একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। এর সুবাধে জান্নাতীও ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করতো। কিন্তু গেল ১মাস আগে তাঁর মা-বাবা খন্দকারটোলাস্থ মেয়ের জামাই বাড়ি আল আমিনের কাছে রেখে যায়। এরপর জান্নাতীকে স্থানীয় খন্দকারটোলা বেসরকারি (রেজিঃ) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করে দেওয়া হয়। সে ‘ক’ শাখার ছাত্রী। তার রোল নং ১১৬। তাঁরা আরও জানান, শিক্ষক আবুল হাসেম কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনা শুনে জান্নাতীকে প্রথমে স্থানীয় একজন ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়। পরে ওই চিকিৎসক জান্নাতীর শারীরিক অবস্থা দেখে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা ২০মিনিটে তাকে শেরপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁরা নির্যাতনকারী ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ওই ছাত্রী শক্ত আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। তার বাম হাতের কনুইয়ের কিছু অংশ নেমে গেছে। এদিকে ঘটনাটিকে অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক দাবি করে খন্দকারটোলা বেসরকারি (রেজিঃ) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুনছুর আলী বলেন, বিষয়টি জানার পর মুহুর্তে আমি হাসপাতালে জান্নাতীকে দেখতে যাই এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নেই। তবে কোন শিক্ষকের পক্ষেই এধরনের কাজ করা উচিত নয় বলে এই প্রধান শিক্ষক মনে করেন। থানায় আটক অভিযুক্ত শিক্ষক আবুল হাসেম বলেন, ভুলবশত ঘটনাটি ঘটে গেছে। এ জন্য আমি অনুতপ্ত এবং দুঃখিত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ওই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানুষিকভাবে শাস্তি দেওয়া আইনত অপরাধ। ওই শিক্ষক যে কাজ করেছে তা আইনের মারাত্মক লংঘন। তাই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে চিঠি দেওয়া হবে। এর বাইরে আপতত আমার কিছুই করার নেই। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আলম প্রধান বলেন, আমি ওই শিক্ষকের কঠোর শাস্তির পক্ষে। তবে কেউ আপোষ করলে আমার-ই-বা কী করার আছে।