সিলেট জেলা রেজিস্ট্রারের রহস্যজনক মৃত্যু
জালালউদ্দিন সাগর, এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার মো. আনোয়ার হোসেনের (৫৫) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ১৪ এপ্রিল (শনিবার) গভীর রাতে তার ভাড়া বাসায় অসুস্থ হয়ে মুখ দিয়ে সাদা লালা বের হয়ে তিনি মারা যান। আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু রহস্যজনক মনে হওয়ায় কতোয়ালী পুলিশ সিআইডিকে তলব করে। সিআইডি পুলিশ তার শয়ন কক্ষ থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। লাশের ময়নাতদমত্ম শেষে আত্মীয়দের কাছে গতকালই লাশ হসত্মামত্মর করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনার সময় থাকা আনোয়ার হোসেনের খালি ভাড়া বাসা হতে পূর্ণিমা (২৫) নামের এক যুবতীকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা সাব রেজিস্ট্রার আনোয়ার হোসেন ৫ দিনের ছুটি শেষে শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় সিলেটের জামতলার ভাড়া বাসায় ফিরেন। আটককৃত যুবতি নিজেকে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের নকলনবীশ বলে পুলিশের কাছে দাবী করেছেন। পূর্ণিমা জানান, বাসায় ফিরেই আনোয়ার হোসেন তাকে মুঠোফোনে কল দিয়ে বাসায় আসতে বলেন।
পূর্নিমা জানান, আনোয়ার হোসেন তাকে খুব স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। তাই সে আনোয়ার হোসেনের আহবানে সাড়া দিয়ে গভীর রাতে তার বাসায় আসেন।
পূর্ণিমা আরো জানান, বাসায় আসার পর দেখতে পায় আনোয়ার হোসেন রাতের খাবার তৈরী করছেন। পূর্নিমা রান্না করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে আনোয়ার তাতে রাজি হননি। রাত ১২টার দিকে তারা রান্না করা খাবার খেয়ে শোবার ঘরে যান।
এরআগে তিনি কিছু ওষুধ খেয়েছেন। ওষুধ খাওয়ার পর থেকে আনোয়ার অস্থির হয়ে ওঠেন, অস্বভাবিক আচরণ করতে থাকেন। কি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার শরীর খারাপ করছে।’ পূর্নিমা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে পূর্নিমাকে চুপ থাকতে বলেন। এসময় আনোয়ার হোসেনের সারা শরীর ঘামতে থাকে। রাত তখন ২টার দিকে আনোয়ারের মুখ দিয়ে সাদা লালা বের হতে থকলে একপর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে পূর্নিমা বিষয়টি বাসার মালিক হেলাল আহমদকে জানান। হেলাল আহমদ ও পূর্নিমা রাত আড়াইটার দিকে একটি আটোরিকশাযোগে অচেতন অবস্থায় আনোয়ার হোসেনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সকালে খবর পেয়ে কতোয়ালি থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে।
পুলিশ জানায়, সকাল ১০টার দিকে সিআইডি পুলিশ জামতলার বাসায় আনোয়ার হোসেনের কক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করে। । গতকাল দুপুরে কতোয়ালি পুলিশ ওই বাসা থেকে কিছু ওষুধ উদ্ধার করেছে। এগুলোর মধ্যে হোমিও তরল জাতীয় ওষুধ ছাড়াও আছে বেটালক ২৫, মেটফার, এ্যটভা ২০, ডায়ামাইক্রোন এসআর, ডাইহার্ট এসআর। ওই বাসায় থেকে ‘‘যুগে যুগে হোমিও’’ শিরোনামের একটি বইও উদ্ধ্যার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ নিহতের লাশ আত্মীয়ের কাছে হসত্মমত্মর করেছে। নিহতের ভাতিজা রকিব হোসেন জানান, আনোয়ার হোসেন সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেছেন গত জানুয়ারি মাসে। প্রথম থেকে তিনি জামতলার এই ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন। নিহত আনোয়ার ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার লামাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের পুত্র। ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার সুবিধার্থে নিহতের স্ত্রী মনি ঢাকায় বসবাস করেন। আনোয়ারের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে মনির আমেরিকায়, ছোট ছেলে তারেক আইডিয়েল স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র। মেয়ে সাবিরা তাহেরা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স করছে।
পুলিশের ধারণা, আনোয়ার হোসেনকে তার দেহ রক্ষিতা পূর্নিমা বিষাক্ত কিছু খাইয়ে খুন করতে পারে। তাই তাকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিলেট কতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু রহস্যজনক। তাই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত পূর্নিমাকে আটক করা হয়েছে। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের ময়নাতদমত্ম রিপোর্ট পাওয়া পর্যমত্ম অপেক্ষা করতে বলেন।
সিলেট জেলা সাব রেজিষ্ট্রি অপিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায় পূর্নিমা দত্ত সুনামগঞ্জের ছাতকের দেবের গাঁওয়ের উবেন্দ্র কুমার দত্তের মেয়ে। বর্তমানে সিলেট নগরীর দাড়িয়াপাড়া বসবাস করে। পূর্নিমা সিলেট সাব রেজিস্ট্রারি অফিসের একজন নকলনবিশ। এরবাইরে সে দেহব্যবসার সাথে জড়িত থাকতে পারে সন্দেহ করছেন অনেকেই। স্থানীয়রা মনে করেন, টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় পূর্ণিমাকে। তার আরেক সহযোগী পারভিন। দীর্ঘদিন ধরে পূর্নিমা ও পারভিন এ কাজের সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করছে অনেকে।