পুলিশের দুর্নীতিঃ বরগুনার এসপিসহ সাতজনের নামে সমন জারি
জাফরুল হাসান রুহান, বরগুনা, এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বেআইনিভাবে আটক, ভয় দেখিয়ে ঘুষ আদায় ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বরগুনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে আদালত। আগামী ২৪ এপ্রিল তাদের আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেন বিচারক। বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল ইসলাম এই আদেশ দেন বলে রোববার আদালত সূত্রে জানা যায়। এদিকে আসামিরা এই আদেশের বিরুদ্ধে গত রোববার বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন আবেদন করেন। আগামী ২৩ এপ্রিল রিভিশন আবেদনটি শুনানির দিন ধার্য করেন বিচারক।
মামলার বিবাদিরা হলেন, বরগুনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এনামুল কবির, বরগুনা সদর থানার ওসি জাকির হোসেন ফকির, তালতলী থানার ওসি শামসুল হক, এসআই সাইদুজ্জামান, এএসআই মো. হানিফ, খায়রুজ্জামান, তালতলী উপজেলার ছোটবগি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ও তার বাবা কামরুজ্জামান খালেক। এদের মধ্যে এসআই সাইদুজ্জামান ছাড়া সকলের বিরুদ্ধে সমন জারি করে আদালত। বরগুনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এনামুল কবির রোববার বলেন, আমার জানা মতে, বিচারক সমন অর্ডার করে নাই, সম্ভবত নথিতে লিখছিল। কিন্তু আমরা ডিস্ট্রিক জজের কাছে রিভিশন করেছি এবং রিভিশন মঞ্জুরও হয়েছে। জজ সাহেব আদালতের কর্মকা- স্থগিত করে নথি তলব করেছেন এখন ডিস্ট্রিক জজ সাহেব এটা নিষ্পত্তি করবেন। আদালত সূত্র জানায়, বেআইনিভাবে আটক, ঘুষ আদায় ও নির্যাতনের অভিযোগে বরগুনা পুলিশ সুপার ও পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাসহ আটজনের বিরুদ্ধে ১ এপ্রিল তালতলী উপজেলা ছোটবগি ইউনিয়নের মো. মোফাচ্ছেল হক বাদী হয়ে বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে ওইদিনই তা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম সানির আদালতে পাঠান। তিনি ৩ এপ্রিল মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য আদেশ দেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রধান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম কবির হোসেন তদন্ত শেষে গত ১২ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওইদিনেই বরগুনা সদরের সিনিয়র জুডিশিযাল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল ইসলাম মামলাটির অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলার আসামি বরগুনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুল ইসলাম বাদে অন্য সকলের প্রতি সমন জারি করেন। মামলার আর্জিতে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জের ধরে প্রতিপক্ষরা তাকে (বাদী) হয়রানি করার জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা চালায়। এর জের ধরে তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুল হক, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. হানিফ ও খায়রুজ্জামান তাকে (বাদী) গত ২৫ মার্চ বাড়ি থেকে আটক করে তালতলী থানায় নিয়ে আসে। পরে বরগুনার পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) এনামুল কবির ও সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেনের নির্দেশে তালতলী থানার পুলিশ ২৭ মার্চ তাকে পিছমোড়া করে বেঁধে হাতে রশিসহ হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে বরগুনা থানায় আনে। বরগুনা থানায় আনার পর বরগুনা থানার এসআই সাইদুজ্জামান ও অপর এক কনস্টেবল তাকে বেধড়ক পেটায়। এ সময় হত্যা মামলায় জড়িয়ে ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আসামিরা তার (বাদী) পরিবারের কাছ থেকে ৩০ হাজার ও মামলার সাক্ষি মো. ছগির ও স্বপন মৃধার কাছ থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা আদায় করে। পরে ওইদিন বিকাল সাড়ে তিনটায় বরগুনা থানার একটি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। বাদীর অভিযোগ, পুলিশ তাকে আটকের পর মোট ৫৩ ঘণ্টা থানা হাজতে আটক করে রাখে। কিন্তু আইনানুযায়ী ২৪ ঘণ্টার বেশি কোনো আসামিকে আটক রাখার এখতিয়ার নেই। এছাড়া পুলিশ তাকে বিনা অপরাধে, অন্যের প্ররোচনায় আটক করে এবং নির্যাতন করে। পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় ও ২৯ ঘণ্টা আটক রাখে।