ছয়মাস হাজতবাসের পর ভারত থেকে ফিরছে ১৪ জেলে
জাফরুল হাসান রুহান, বরগুনা প্রতিনিধি, এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ অবৈধ অনুপ্রবেশের অপরাধে প্রায় ছয়মাস হাজতবাসের পর বাংলাদেশে ফিরছে পাথরঘাটার নয়জেলেসহ মোট ১৪ জন জেলে। ২৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকালে বিএসএফ সদস্যরা জেলেদের বেনাপোল সীমান্তে পুশ ব্যাক করে। বেনাপোলে পৌঁছে বিষয়টি স্বজনদের সেলফোনে জানান ওইসব জেলে।
জেলেদের স্বজন সুত্র জানায়, গতবছরের ১০ অক্টোবর আকষ্মিক সামুদ্রিক ঝড়ে দিক হারিয়ে পাথরঘাটার কাঠালতলী এলাকার এফবি মুক্তা নামের একটি ট্রলারসহ পাথরঘাটার নয় জেলে ভারতীয় সমুদ্রসীমানায় চলে যায়। এসময় ভারতীয় কোস্টগার্ড সদস্যরা হেলিকপ্টারযোগে এসে এসব জেলেদের আটক করে ভারতীয় নৌ বাহীনীর কাছে হস্তানান্তর করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের জেলেদের ঠিকানা হয় আলীপুর জেলহাজত। কারাভোগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে পাথরঘাটার নয়জন ও সাতক্ষীরার ৫জনসহ মোট ১৪ জন জেলেকে বিএসএফ সদস্যরা বেনাপোল সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে। ফিরে আসার পাথরঘাটার নয় জেলে হল, ট্রলার মালিক ও জেলে আবুল কালাম, বাবুল, মুনসুর, দেলোয়ার, নবী হোসেন,ওলি উল্লাহ, সোহরাব ও হাসেম ও দেলোয়ার (২)। এসব জেলেদের বাড়ি পাথরঘাটার কাঠালতলী ইউনিয়নে। ফিরে আসা জেলের স্বজন আলম চৌকিদার বলেন, সকালে তার ভাই কালাম বিষয়টি মুঠোফোনে জানান। খবর পেয়ে আলম ও আবুল কালামের ভাই আবদুল মালেক ওই নয় জেলেকে ফিরিয়ে আনতে মঙ্গলবার দুপুরে যশোরে পৌছেঁছেন। আলম মুঠোফোনে ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পাথরঘাটার নয় জেলে ছাড়াও সাতক্ষীরার আরও পাঁচ জেলেকে ফেরৎ পাঠিয়েছে ভারত। তবে জব্দকৃত এফবি মুক্তা ট্রলারটি ফেরৎ দেয়নি তারা।
আলম চৌকিদার বলেন, ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর ঝড়ের কবলে পরার পর তার ভাইসহ নয়জন জেলে ভারতীয় কোস্টগার্ডেও হাতে আটকের খবর তারা জানতেন। ভারতীয় কোস্টগার্ডে মুঠোফোনের মাধ্যমে আটক জেলেরা পরের দিন ১১ অক্টোরব স্বজনদের এ খবর জানিয়েছিলেন। এসময় বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার শেষভাগ থেকেই তাদের আকট করা হয়েছে বলে ওইসব জেলেরা তাকে জানিয়েছিলেন বলে আলম জানান। ওই নয় জেলের ভাগ্যে কী ঘটছে এরপর আর কোন খবর জানা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ছয়মাস ভারতে কারাভোগের পর দেশে ফেরার খবরে এসব জেলেদের পরিবারে আনন্দ ফিরে এসেছে। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ইতোমধ্যেই জেলে পরিবারগুলোর চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটিয়েছে। জেলে দেলোয়ারের স্ত্রী মারুফা বেগম বলেন‘ দুইডা মাইয় পোলা লইয়্যা খাইয়া না খাইয়া রইছি, হে (স্বামী) কবে ফেরবে হেই আশায় পথ চাইয়া আলহাম(ছিলাম) টাহার অভাবে বড় মাইয়্যাডার লেহপড়া বন্ধ হইয়্যা দিতে অইছে। স্বামী ফেরার খবরে আনন্দি মারুফার চোখ তখরন ছলছল করছিল। নবী হোসেনের বৃদ্ধা মা সমিরন নেছা বলেন, মোর পেলাডার যাতে ফিইরা আয় হেললইগ্যা কতো মানতি ছানতি হরছি। টাহার অভাবে মুই ওষুধ খাইতে না পরলেও ছেলে আওয়ার খবর পাইয়া মনডা ভইরা গেছে। এহন মইরাও শান্তি পামু। ঠিক একই দুর্দশা অন্যান্য জেলেদের পরিবারগুলোতে। পরিবারগুলো এখন স্বজনদের ঘরে ফেরার প্রতিক্ষায় আছে।