রাজধানীতে হরতালের খন্ডচিত্রঃ দুই পুলিশ আহত, গ্রেফতার ২৪
সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা তৃতীয় দিনের হরতালে বিক্ষোভ, অগি্নসংযোগ, ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। ২৪ এপ্রিল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের কোনো গোলযোগ হয়নি। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ, ককটেল এবং পটকা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সারাদিন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ। প্রেসক্লাব, কাওরানবাজার, মহাখালী, মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় পিকেটাররা গাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন স্থানে একাধিক ককটেল ও চকলেট বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তৃতীয় দিনের হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ১৬ জনকে গাড়ি ভাঙচুর এবং অগি্নসংযোগের ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। প্রথম দুদিনের তুলনায় গতকাল মঙ্গলবার হরতালে রাজধানীতে যান চলাচল ছিল কিছুটা বেশি। এছাড়া বিভিন্ন রুটে বাস, অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করেছে। পাশাপাশি চলাচল করেছে প্রাইভেটকারও।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় : হরতালের আগের দুদিনের মতো মঙ্গলবারও বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ ও র্যাব। দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে সকালে একটি মিছিল বের করার চেষ্টা হলে পুলিশি বাধায় তা প- হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের এলাকার দোকানপাট বন্ধ ছিল। বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ১২ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মী বিএনপি কার্যালয়ের দিকে আসছিলেন। কার্যালয়ে ঢোকার মুখে পুলিশ অতর্কিতে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে থাকা ১১ জনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। একই সময় এক কর্মী দৌড় দিলে রাস্তার বিপরীত দিক থেকে তাকে আটক করা হয়। বেলা পৌনে ১টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। পরে রাস্তা থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে ওঠে যান কাদের সিদ্দিকী।
প্রেসক্লাব : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে হরতালের সমর্থনে মিছিল ও পিকেটিং করে যুবদল। এ সময় এক চা বিক্রেতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সকাল সাড়ে দশটার দিকে শাহবাগ থানা যুবদলের ২০-২৫ জনের একটি মিছিল প্রেসক্লাবের সামনে এলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পিকেটাররা শিখর পরিবহন ও ঢাকা পরিবহনের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। সকাল সাড়ে দশটার দিকে শাহবাগ থানা যুবদলের ব্যানারে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক শিল্পকলা একাডেমীর সামনে থেকে প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। দায়িত্বরত পুলিশ সার্জন মেহেদি জানান, পিকেটাররা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত একজনের নাম বিল্লাল হোসেন। সে প্রেসক্লাবের সামনে চা বিক্রি করে। অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি।
কাওরানবাজার-আগারগাঁও : হরতালের তৃতীয় দিন সকালে কাওরানবাজার এলাকায় দুটি গাড়িতে আগুন দেয় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ছাত্রদলের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে মিছিল বের করে। এ সময় তারা একটি প্রাইভেট কার ও কাভার্ড ভ্যান ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। সকাল ১০টার দিকে আগারগাঁওয়ে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় হরতাল সমর্থকরা। এ সময় যাত্রীরা দ্রুত বাস থেকে নেমে পড়ে। পরে দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
মহাখালী-গুলশান-বাড্ডা : রাজধানীর মহাখালী-গুলশান সড়কে সকাল থেকে সারাদিন বিক্ষিপ্তভাবে মিছিল করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা। বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়ে মাঝে মাঝে মিছিল করে তারা। সকাল ১০টার দিকে মহাখালীর টিবি গেট পানির ট্যাংক গলি থেকে ছাত্রদলের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী ঝটিকা মিছিল বের করে। তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেন শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়ালের নেতৃত্বে এ মিছিল মহাখালী-গুলশান সড়কে এসে তিনটি অটোরিকশা, একটি যাত্রীবাহী বাসসহ পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় গাউসুল আযম মসজিদের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। ছাত্রদল কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ধাওয়া দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ঘটনার পর পরই স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলামুল ইসলাম আসলামের নেতৃত্বে একটি হরতালবিরোধী মিছিল বের হয়।