তেতিয়ে ওঠা নাকি নেতিয়ে পড়া?
জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ।। ফের আসছে ৪৮ ঘন্টার হরতাল। মানে জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, পুলিশি একশানসহ অর্থনীতির বারোটাবাজানোর নানান প্রদর্শনি। সাথে থাকবে আশরাফ-হানিফ এবং ফখরুলদের বাকযুদ্ধ, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। মানুষ যাবেন কোথায়? হাসিনা-খালেদার পরস্পরবিরোধী ঝগড়া-ঝাটিতো মামুলি ব্যাপার। সুতরাং আসুন আমরা সবাই কাম-কাজ ফেলে প্রস্তুতি নিই উনাদের এসব কীত্তি-কুকীত্তিগুলি উপভোগ করার জন্য!
মানুষের মুক্তি নেই। হাসিনা-খালেদা মিলে দেশটাকে দুই ভাগ করে একদিকে হাসিনা সমর্থকদের নিয়ে বাংলাদেশ ১ এবং অন্যদিকে খালেদা সমর্থকদের নিয়ে বাংলাদেশ ২ গঠন করে নিলেই সব ল্যাঠা চুকে যায়! তাহলে জীবনভরতো বটেই মৃত্যুর পরও উনারাই কিংবা উনাদের আত্মা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন! আর হ্যাঁ অবশ্যই তাঁদেরকে খুনিদের এবং এলিটবাহিনীও নিতে হবে সমান ভাগে ভাগ করে। তার আগে সাগর-রুনিসহ সকল হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের শুধু দেশবাসির সামনে একটিবারের জন্য হাজির করে দেবেন-এটুকুই আমাদের প্রত্যাশা! হাসিনা-এরশাদ-ইনু-মেনন গং এবং খালেদা-নিজামী, চরমোনাই ও অন্যান্য ধর্মবাদী-যুদ্ধাপরাধী গং এই দুইয়ের বাইরেও তো বহু মানুষ আছেন, তাঁরা কোনপক্ষে যাবেন এটা এই মুহুর্তে বলতে পারছি না বলে দু:খিত। হাসিনা গং সরকার নাকি সমুদ্র জয় করে ফেলেছে তো সেখানে একটা পক্ষকে নাহয় পাঠিয়ে দেয়া হোক, নাকি বলেন?
একজন ব্লগার লিখেছেন সাগর-রুনির খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে নাকি তাদের আন্দোলন একেবারে তেতিয়ে উঠেছে! আসলে কী আমরা তেতিয়ে উঠছি নাকি নেতিয়ে পড়ছি? বাস্তবতা কিন্তু নেতিয়ে পড়ার চেয়েও করুণ জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। যাহোক “বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়”। আমাদের লাগামহীন, ভাবাবেগে ভরা ব্লগের কালো লেখা সাগর-রুনির লাল রক্ত আর মেঘসহ সাগর-রুনির পরিবারের সদস্যদের গগণবিদারী আত্মক্ষরণ ঢাকবে না। দেশে-বিদেশে দুর্বার (লোক দেখানো বা বাহবা নেয়া কিংবা কোন পুরস্কারের আশায় নয় এমন)একটা চাপ সরকারের ওপর আঘাত হানতে হবে! নাহলে তেতে ওঠা দু’চারটি মানববন্ধন, আর জ্বালাময়ী বক্তৃতায় সাগর-রুনির খুনিদের সরকার গ্রেফতার করবে বলে মনে হয় না। কারণ সাগর-রুনির খুনিদের রক্ষায় বাংলাদেশের সামগ্রিক দুর্বৃত্ত রাজনীতি ও তার সঙ্গে কৌশলি মিডিয়াও নিজেদের স্বার্থকে মিলিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে।
আসলে এই দুর্বৃত্ত চক্র ভাঙতে চাই জনজাগরণ, সেটা কে সংঘটিত করবেন এবং কিভাবে? সেই পথেরইতো দিশা পাচ্ছি না আমরা। একটা আমূল পরিবর্তন দরকার। মনোজাগতিক পরিবর্তন চাই। ব্যবস্থাটাকে ভাঙতে হবে। এজন্য চাই একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব।
লেখক:- জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, ইউরোপ প্রবাসী সাংবাদিক, মানবাধিকারবিষয়ক অনলাইন সংবাদপত্র ইউরো বাংলা’র সম্পাদক।