প্রনবের সফরে বাংলাদেশ কিছুই পাচ্ছে না
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ভারত একের পর এক স্বার্থ আদায় করে নিলেও বাংলাদেশের প্রাপ্তি ‘শূন্য’। বরং বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে দু’দেশের সরকার রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে। ভারতের প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরে ভারতের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট চুক্তি হলেও বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় আলোচনাতেই আসছে না। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, ফারাক্কায় শুষ্ক মওসুমে পানি কম প্রাপ্তি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, সীমান্ত নদী সংরক্ষণ, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনাই হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরে ভারতকে বহুমুখী ট্রানজিট প্রদানের বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পাওে বলে জানা গেছে।
কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি নৌ-পথে ভারতীয় যন্ত্রপাতি আনা হবে, সেখান থেকে সড়ক পথে আগরতলা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। এটাকে ইছ্যু করে সড়ক ও নৌ-পথের ট্রানজিট নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তিতে থাকছে রেল ট্রানজিটের বিষয়টিও অর্থাৎ ভারত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়ে নদী-সড়ক-রেল পথে ট্রানজিট, সেই সাথে এ দেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডকে বিদ্যুতের ট্রানজিট সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, পাচ্ছে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা।
জানা গেছে, আগামী ৬ মে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ষার্ধশত বার্ষিকী যৌথভাবে উদযাপনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্খিত থাকবেন।
এ উপলক্ষে সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারত থেকে আসা সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলে থাকবেন শর্মিলা ঠাকুর, ড. পবিত্র ভূষণ সরকার এবং সঙ্গীত ও নাটক একাডেমীর একটি নৃত্য ও নাটক দল।
২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সিদ্ধান্তে রবি ঠাকুরের জন্ম ষার্ধশত বার্ষিকী যৌথ উদ্যোগে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
এরই অংশ হিসেবে ঢাকার উদযাপনের উদ্বোধনী পর্বে ২০১১ সালের মে মাসে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিশেষ অতিথি ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি উপস্খিত ছিলেন এবং দিল্লীতে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্খিত ছিলেন বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী। পুরো এক বছর সময়ের এই উদযাপন অনুষ্ঠানে বহু অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। তিস্তার পানি বণ্টন, টিপাইমুখ বাঁধ না দেয়া, বাণিজ্যিক বৈষম্য এসব কিছুই আলোচনায় থাকছে না। গত ৩৮ বছর যাবত তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান তিস্তা সেচ প্রকল্প কাজ শুরু করলে ভারত উল্টা তিস্তার বুকে বাঁধ দেয়ার উদ্যোগ নেয়। ১৯৯৮ সালে তিস্তা ব্যারেজের কাজ শেষ করার পর ভারত এর ৬৫ কিলোমিটার উজানে বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নিতে শুরু করে। ভারত ইতোমধ্যে উজানে বাঁধ দিয়ে তিস্তা ব্যারেজ অচল করে দিয়েছে। অপরদিকে ফারাক্কায় বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ভারত পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। এবার শুষ্ক মওসুমে ফারাক্কায় চুক্তির চেয়ে বাংলাদেশ প্রায় সোয়া লাখ কিউসেক পানি কম পেয়েছে। সেচ সংকট দেখা দেয় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। এছাড়া অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানি ভারত নিয়ন্ত্রণ করে চলছে। সীমান্ত নদী সংরক্ষণ, জেগে উঠা চর নিয়ে বিরোধ মীমাংসা জরুরি। বাংলাদেশ ইতোপূর্বে বহুবার সীমান্ত নদী সংরক্ষণ বিষয়ে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক ডাকার উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ভারত এতে আগ্রহ দেখায়নি। সীমান্ত নদী ভেঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চর জেগে উঠলে তা ভারত দখল করে দিচ্ছে।
এদিকে ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য পাহাড় পরিমাণ আকার ধারণ করেছে। এই বৈষম্য কমিয়ে আনা, বাংলাদেশী পণ্যের ভারতে প্রবেশাধিকার চেয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। বাংলাদেশী পণ্য নানা অযৌক্তিক বাধার মুখে ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না। ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশী পণ্যের মান, শুল্ক-অশুল্ক ইত্যাদি অজুহাতে প্রবেশের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। এছাড়া সমুদ্রসীমা, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়াসহ নানা সমস্যা তো আছেই।
ভারত তাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া এখন পাওয়ার মধ্যেই আছে। ভারত গোটা বাংলাদেশকে ঘিরে সড়ক, নৌ রেল পথে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ চেয়ে আসছিল। আর সেই চাওয়া এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে অভিজ্ঞ মহল বার বার বলে আসছেন। অথচ সেটাই হতে যাচ্ছে।