বরগুনার খাকদোন নদী ড্রেজিং।।নদের অস্তিত্ব বিপন্ন!
জাফরুল হাসান রুহান, বরগুনা প্রতিনিধি, এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বরগুনার খাকদোন নদী ড্রেজিংয়ের নামে দুই পারের চর দখলের মহোতসব চলছে। প্রতিদিন ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে দুই পারের বিশাল এলাকা পাইলিং ও বালুর বস্তা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। এতে নদটি আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় নদের অস্তিত্ব আরও বিপন্ন হচ্ছে।
৭ মে (সোমবার) সকালে গিয়ে দেখা যায়, বরগুনা লঞ্চঘাটের পশ্চিম পাশে মাঝনদী বরাবর বালুর বস্তা ওপাইলিং দিয়ে বাঁধ সৃষ্টি করে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে কাটা মাটি পাইপে করে এনে সেখানে ফেলে বিশাল এলাকা ভরাট করা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় চেরাই কাঠ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা খাকদোন নদীর বিশাল চর এলাকা বালুর বস্তা ও পাইলিং দিয়ে দিন ধরে বেড় দিয়ে ভরাট করাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মনির হোসেন অভিযোগ করেন, যারা এসব জমি ভরাট করছে তাদের কোনো বৈধতা নেই। তিনি বলেন, এভাবে মাঝনদ পর্যন্ত ভরাট করায় নদটি সঙ্কুচিত হয়ে এর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
যোগাযোগ করা হলে ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ চন্দ্র মিত্র বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশে ডিসি সাহেব আমাদের সমিতির ৪০ জন ব্যবসায়ীকে ২০ শতক জমি বরাদ্দ দিয়েছেন। ডিসি সাহেবের অনুমতি নিয়েই আমরা এই জমি ভরাট করছি। কিন্তু যে জমি ভরাট করছেন এটা তো নদীর মধ্যে এবং কথিত বরাদ্দের দ্বিগুণ হবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সরকার আমাদের দিয়েছে তাই আমরা নিয়েছি। বরাদ্দের চেয়ে কিছু জমি বেশি হতে পারে। ব্যবসায়ীদের চলাচলে রাস্তা নির্মাণের জন্য বাড়তি কিছু জমি আমরা ভরাট করছি। অনুমতি বা বরাদ্দের কোনো কাগজপত্র আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও কাগজ হাতে পাইনি। মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে ভরাট করছি। বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশলী আবদুল মান্নান বলেন, ওই জমি ভরাটের কোনো অনুমতিপত্র আমার হাতে নেই। জেলা প্রশাসক ও এসি ল্যান্ড সাহেব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তাই ভরাট করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বরগুনায় নদীবন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বরগুনা শহরের পৌর ভবনের পশ্চিম পাশে দোতলা নৌবন্দর ভবন নির্মাণের কাজ চলতি বছর সম্পন্ন হয়। নৌবন্দর ঘোষণার পর গত ৩১ মার্চ বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বরগুনার নৌ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বরগুনার খাকদোন নদটি খননের কাজ শুরু করে। নদটি দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় এবং দুই পার নির্বিচারে দখল হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে। নদটি পুনঃখননের খবরে বরগুনার ব্যবসায়ী ও সচেতন মহলে স্বস্তি নেমে এলেও বাস্তবে এখন তা হতাশায় রূপ নিয়েছে। নদের দুই পার দখল করছে প্রভাবশালী কতিপয় ভূমিদস্যু।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল দুপুরে বলেন, আমরা ৪০ জন কাঠ ব্যবসায়ীকে ওই জমি বরাদ্দ দিয়েছি। এজন্য সেখানে ভরাট করা হচ্ছে। কিন্তু এতে নদটি সঙ্কুচিত এবং নদের মাঝের জমিও ভরাট করা হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যদি সেটা করা হয় তবে তা বেআইনি।অবশ্যই সেটা বন্ধ করা হবে। উত্তর পার ভরাট করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উত্তর পারের চরে যে সরকারি জমি আছে তা ভরাট করা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে যারা বসবাস করছে তারা অবৈধ।