নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন এরশাদ
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ক্ষমতাসীন মহাজোটের পার্টনার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখন আর রাষ্ট্রপতি হতে চান না। বিশেষ দূত হওয়ার শখও তার নেই। এখন তার একটিই চাওয়া, বাকি জীবনটা মুক্ত আলো-বাতাসে থেকে নির্ঝঞ্ঝাট কাটিয়ে দেয়া। এ জন্য মহাজোট সরকারের প্রতি তার নিঃশর্ত সমর্থন অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা তার সরকার বিব্রত হন এমন কিছু জাতীয় পার্টি করবে না। এমনই নিশ্চয়তা দিতে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর দরবারে ছুটে যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাজনৈতিক সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে তারা দু’জন বৈঠক করেছেন। আলোচনার এজেন্ডা পুরো পুরি জানা যায় নি। তবে নিজের ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বিগ্ন এরশাদ যে কোনো পরিস্থিতিতে মহাজোটে থাকার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ জাপার শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা। প্রধানমন্ত্রীও মহাজোটের অন্যতম শীর্ষনেতাকে আশ্বস্ত করেছেন বলে দাবি করেছে জাপা সূত্র।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরশাদের একান্ত বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে সাক্ষাতের আগে-পরে জাতীয় পার্টির যেসব নেতার সঙ্গে দলীয় চেয়ারম্যানের কথা হয়েছে এমন দু’জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দু’নেতার বৈঠক সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া গেছে তাহচ্ছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানার জন্যই তাদের এই সাক্ষাত।
বৈঠকে এরশাদ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে সরকারপ্রধানের আস্থা অর্জনের প্রয়াস চালান। বৈঠকে মহাজোটকে ছেড়ে দেয়া বা তালাক দেয়ার বিষয়ে এরশদ বলেন এসব কথা তার নয়। দলের নেতাকর্মীরা বলছে। পরে শেখ হাসিনা এরশাদকে তার দলের নেতাদের সংযত হয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। এসময় এরশাদের সঙ্গে ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ বাবলু।
বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল, সংবিধান সংশোধনসহ বিরোধীদলের বিভিন্ন দাবি নিয়ে তাদের সঙ্গে সংলাপের পক্ষে মত দেন মহাজোট নেত্রী ও তার অন্যতম শরিকদল জাপার চেয়ারম্যান। তবে সংসদের বাইরে কোন ধরনের সংলাপ বা আলোচনায় যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন তারা। এক্ষেত্রে বিরোধীদল থেকেই প্রস্তাব আশা করা হয়।
পার্টি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন সরকার জাতীয় পার্টি ও তাদের নেতা এরশাদকে চাপে রাখার জন্য একেক সময় একেক কৌশল প্রয়োগ করছে। মহাজোট গঠনের সময় এরশাদকে রাষ্ট্রপতি করার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়া হলেও সরকার গঠনের পর টেকনিক্যাল সমস্যার কথা বলে রাষ্ট্রপতির কাছাকাছি প্রটোকল ও সম্মান দিয়ে বিশেষ দূত করার কথা বলা হয়েছিল। জাতীয় পার্টি থেকে কমপক্ষে দু’জন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী করারও আশ্বাস ছিল। কিন্তু এখন সেসব আশ্বাস সরকারের হাইকমান্ড বেমালুম ভুলে গেছেন বলে অভিযোগ করেন জাপার শীর্ষ পর্যায়ের এক ক্ষুব্ধ নেতা। জিএম কাদেরকে মন্ত্রী করা হলেও তাকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে।
এসব বিষয়ে মান-অভিমান, ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকলেও তা নীরবে হজম করতে হচ্ছে বলে জানান জাপা নেতা। এরশাদ সরকারের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য দলীয় নেতাদের অন্তত সাড়ে তিন থেকে চার বছর ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন। এর মধ্যে সরকারের পার্টনার হিসেবে যতটুকু সুযোগ-সুবিধা আদায় করা যায় তা ভোগ করার পাশাপাশি দলকে সুসংগঠিত করে আগামী নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি অনুযায়ী রাজনৈতিক অবস্থান নেয়া হবে বলে ক্ষুব্ধ দলীয় নেতাদের আশ্বাস দেন এরশাদ। জাপা নেতারা মনে করছেন সরকার এখনই এরশাদের বিরুদ্ধে কোনো হার্ডলাইন নেবে না। তবে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে কখনও বেরিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কিংবা সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তখন বিচারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জাপা নেতারা।
গত রোববার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্যে জাতীয় পার্টির ভাবমূর্তি অনেকটা উজ্জ্বল হয়েছে, কিন্তু অবস্থান পরিষ্কার হয়নি। তালাক না দেয়া পর্যন্ত মুখে যত কিছু বলা হোক বিবাহবন্ধন ছিন্ন হয় না। তাই মহাজোটকে তালাক দিতে হবে। পার্টিকে মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসে বিরোধীদলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
আর গত মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, পার্টির নেতাকর্মীরা মনে করছেন মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পার্টি ভাবছে। দলের নীতি-নির্ধারকরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি বলেন, মহাজোটে যোগ দেয়ার ব্যাপারে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটের আলাদা একটা নির্বাচনী ইশতেহার ছিল। সেখানে উল্লিখিত অ্যাজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।