লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান নিয়ে উদ্বেগ!
ইমন দেব চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল থেকে,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও জেলা প্রশাসন। ১২৫০ হেক্টর আয়তনের জাতীয় এ উদ্যান নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব। সম্প্রতি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রশাসন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান নিয়ে তাদের এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গাছ চুরি বৃদ্ধির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। চোরেরা বনের ফলদ বৃক্ষ কেটে ফেলছে। এতে বন্য প্রাণীদের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। পর্যটকেরা গভীর বনের ভেতর প্রবেশ করে বন্য প্রাণীদের আবাসস্থলে ঢুকে পড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়াগুলো (খাল) শুকিয়ে যাওয়ায় খাদ্য ও পানির সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসছে এসব প্রাণী। তাই এ উদ্যানে বন্য প্রাণীদের অবস্থান ও বিচরণের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির স্বার্থে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে চিঠিতে বলা হয়। এদিখে এ বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব।
জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে উদ্যানের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। সুপারিশগুলো হলো: বনের গভীরে পর্যটকদের চাপ কমানোর জন্য এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার ট্রেইল (পায়ে হাঁটার পথ) বন্ধ করা। বন্য প্রাণীদের খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ব্যাপক হারে ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা। পানি সংরক্ষণের জন্য বনের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়াগুলো পুনঃখনন করা। কিছুদূর পর পর আড়াআড়ি বাঁধ (ক্রস ড্যাম) নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা একটি নির্দিষ্ট বিরতিতে ছড়াগুলো তিন থেকে পাঁচ ফুট গভীর করে খননের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ। বন থেকে গাছ চুরি রোধে বনে প্রবেশের প্রধান পথটি রেখে বাকি সব পথ বন্ধ করে দেওয়া। প্রয়োজনে এসব পথে নালা তৈরি করে দেওয়া, যাতে চোরেরা এ পথে গাছ চুরি করে নিয়ে যেতে না পারে। পুরো বন ঘিরে ঘন বেতের প্রাকৃতিক বেড়া তৈরি করে গাছ চুরি প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়ক অতিক্রমের সময় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বন্য প্রাণী মারা যাওয়ায় বনের বাইরের দিকে বাইপাস রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে বন বেষ্টনকারী কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ। এ ছাড়া বনদস্যুদের তৎপরতা রোধে নজরদারির ব্যবস্থা জোরদার করতে বনরক্ষীসহ সব শূন্য পদ জরুরি ভিত্তিতে পূরণ করা। গাছচোরদের প্রতিহত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যানবাহন সরবরাহ করা। লাউয়াছড়া বনে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য পরিবেশসম্মত একাধিক স্থানে গণশৌচাগার, বিশ্রামাগার ও বসার জায়গার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রতি ছয় মাস পর পর বৃক্ষশুমারি করে বৃক্ষের অবস্থা যাচাই করা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনার জন্য জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি করা। ঢাকা-সিলেট রেললাইনের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান অংশের বনের দুই প্রান্তে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ এবং সার্বক্ষণিক প্রহরী নিয়োগ করা। বনে নিয়োজিত পর্যটন পুলিশের সংখ্যা তিন গুণ করা, সেখানে তাদের অবস্থানের জন্য পরিবেশ সম্মত ব্যারাক নির্মাণ করা এবং লাউয়াছড়া বনের ভেতর অবস্থিত রেস্ট হাউসটির সংস্কার, সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়ন করা।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল নয় উল্লেক করে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব জানান, বনাঞ্চলে চরম খাদ্য সংকট চলছে। উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ উজাড় করে দেওয়ায় গহীন অরণ্য খুঁজে পাচ্ছে না বন্যপ্রাণীরা।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান গত সোমবার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দেওয়া চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান নিয়ে এই দাবিগুলো জনসাধারণের। এতে যা বলা হয়েছে, তা এলাকাবাসী অনেক দিন ধরে বলে আসছে। দাবিগুলো যৌক্তিক। পরিবেশ সংরক্ষণে সরকার বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিতে পারে।