অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেক্সঃ বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আকস্মিক মৃত্যুর কারণ হতে পারে। একটি নতুন গবেষণার বরাত দিয়ে সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, বিশেষ করে হৃদরোগী এবং হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা বাড়াতে পারে অ্যাজিথ্রোমাইসিন। গবেষণায় বলা হয়, অ্যাজিথ্রোমাইসিনে আকস্মিক মৃত্যুর হার মোটামুটি কম হলেও ওষুধটির প্রয়োগ বন্ধ করার জন্য তা তাৎপর্যপূর্ণভাবে যথেষ্ট। এ অবস্থায় গবেষকরা বলছেন, চিকিৎসকদের উচিত, অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এমন রোগীদের জন্য অ্যামোক্সাসিলিনের মতো ওষুধ প্রেসক্রাইব করা। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, বাইপাস সার্জারি ও হার্টফেইল হয়েছে তাদের অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে অন্য ড্রাগ দেয়া প্রয়োজন। এসব রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগের ফলে হৃদয়ের স্পন্দন অস্বাভাবিক হতে পারে। যা ডেকে আনতে পারে আকস্মিক মৃত্যু।
ভ্যানডারবিটল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষেধক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. ওয়েন এ রায় এক গবেষণায় দেখতে পান, শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার কম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ শিশুদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, গলায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রয়োগ করা হয়। অ্যাজিথ্রোমাইসিন অনেকের কাছে ‘জেড-প্যাক’ হিসেবে পরিচিত। এটি সাধারণত ৫ দিন সেবন করতে হয়। আরও কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো ১০ দিন বা আরও বেশি দিন সেবন করতে হয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তাররা ৫৫.৩ মিলিয়ন প্রেসক্রিপশনে রোগীদের অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এতে ৪৬৪.৬ মিলিয়ন ডলারের অ্যাজিথ্রোমাইসিন বিক্রি হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার তথ্যবিষয়ক কোম্পানি আইএমএস এ তথ্য দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বিশ্বে অ্যাজিথ্রোমাইসিন বিক্রির পরিমাণ ১.৮ বিলিয়ন ডলার। গবেষকরা বলেন, অ্যাজিথ্রোমাইসিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক অ্যারিথ্রোমাইসিন ও ক্লারিথ্রোমাইসনকে আকস্মিক মৃত্যুর কারণ মনে করা হতো। কিন্তু অ্যাজিথ্রোমাইসিনকে নিরাপদ মনে করা হতো।
এ গবেষকদের বাইরের বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। আমেরিকার ইনফেকশন ডিজিজেস সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জন হপকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. জন জি বাটলেট বলেন, আমি ডা. রায়ের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, গবেষণায় বিশাল সংখ্যক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনেক রোগীর ওপর জরিপ চালানো হয়। তিনি রোগীর ওপর অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রয়োগ করে দেখেন, এটি ব্যবহারের ফলে রোগীদের হৃৎস্পন্দনে ব্যাঘাত ঘটে। ডা. বাটলেট আরও বলেন, ঠাণ্ডাজনিত সংক্রামক রোগে প্রায়ই এ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের উপদেশ দেন চিকিৎসকরা। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। তিনি বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহারের পরামর্শ দেই। কারণ এটি খুব সুবিধাজনক। রোগীরা এটি পছন্দ করেন। তবে এর চেয়ে ভালো ‘জেড-প্যাক’। অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে এটি ভালো বিকল্প। তবে গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে সতর্ক করে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন সেন্টারের পরিচালক ডা. লরি মসকা বলেন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন নিয়ে আরও অধ্যয়নের প্রয়োজন আছে। কারণ গবেষণায় পুরনো তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এসব গবেষণায় বর্তমান ও দৈব্যক্রমে বাছাই করা রোগীদের ওপর জরিপ করা প্রয়োজন। অন্যথায় গবেষণার ফল যথার্থ নাও হতে পারে। তিনি বলেন, আমি কখনই অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করি না। কারণ এতে অপচিকিৎসায় রোগ সংক্রমণ হতে পারে।
নিউইয়র্কের অন্য এক চিকিৎসক ডা. রায় এম গুলিক বলেন, এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে মাঝে-মধ্যে এ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে আকস্মিক মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়।
ডা. রায় ও তার দল ৫ লাখ ৪০ হাজার রোগী নিয়ে গবেষণা করেন। এসব রোগীর বয়স ৩০ থেকে ৭৪ এর মধ্যে। ১৯৯২ থেকে ২০০৬ সালে এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষকরা হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মৃত্যু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। ৩ লাখ ৫০ হাজার অসুস্থ রোগীকে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহারের উপদেশ দেয়া হয়। কিন্তু ১.৪ মিলিয়ন রোগীকে কোনো ড্রাগ দেওয়া হয়নি। ২ লাখ ৬৫ হাজার রোগীকে সিপ্রোফক্সাসিন ও ১.৪ মিলিয়ন রোগীকে অ্যামোক্সাসিলিন এবং ১ লাখ ৯৪ হাজার রোগীকে লিভোফক্সাসিন দেওয়া হয়। রোগীদের তুলনা করে গবেষকরা ব্যাখ্যা করেন, যারা অ্যাজিথ্রোমাইসিন সেবন করেননি তাদের আকস্মিক মৃত্যুর সম্ভাবনা কম।
সূত্রঃ ইন্টরনেট।।