বরগুনায় মাত্র কুড়ি টাকা ফি পরিশোধে ব্যর্থ পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা!
জাফরুল হাসান রুহান, বরগুনা থেকে,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ পঞ্চম শ্রেনীর সমাপনি প্রস্ততিমুলক পরীক্ষার নির্ধারিত ২০ টাকার ফি দিতে না পারায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বরগুনার দক্ষিন লেমুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহীম। মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে সদর ইউনিয়নের কলাতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অজ্ঞান অবস্থায় বাবা আবু হানিফ মৃধা ছেলেকে উদ্ধার করে দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপতালে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সন্ধ্যায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সূত্রে এ খবর পেয়ে হাসপালে গিয়ে ইব্রাহীমকে অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় বেডে শোয়া অবস্থায় দেখা যায়। সাথে তাকা ইব্রহীমের মা ফরিদা বেগম বলেন, ক’দিন ধরে ইব্রাহীম তার কাছে ফি’র জন্য ২০ টাকা চায়। মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে গোসল সেরে ভাত খায় ইব্রাহীম। এসময় সে বিদ্যালয়ের ফি’র ২০ টাকা চায়। কিন্তু টাকা না থাকায় আমি দিতে পারিনি। পরে সহপাঠিদের ডাকে সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যায়।
ইব্রাহীমের বাবা আবু হানিফ বলেন, সকালে আমি ইব্রহীমকে গরু নিয়ে মাঠে পাঠাই। এসময় সে আমার কাছে বিদ্যালয়ের ফি’র টাকা চায়। টাকা না থাকায় ‘আগামীকাল দিবো’ বলে শান্তনা দিয়ে তাকে গরু বেuঁধ স্কুলে যেতে বলি। সকাল সাড়ে দশটার দিকে বাড়িতে কাজ করার সময় আমার ভাইয়ের ছেলে রাসেল দৌড়ে এসে জানায়, চাচা ইব্রাহীম ভাইয়া গলায় রশি দিয়ে গাছে ঝুলছে। দৌড়ে গিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি।
ছেলের আত্মহত্যা চেষ্টার কারণ জনাতে চাইলে ইব্রাহীমের মা ফরিদা বেগম বেশ ক’দিন ধরে ইব্রাহীম পরীক্ষার ফি’র টাকা চেয়েছে। আমি ওর বাবার কাছে টাকার কথা বলেছি। কিন্তু ওনার হাতে টাকা ছিলনা। আজ (মঙ্গলবার) তার সহপাঠিরা সকলে সম্ভবত ফি’ টাকা নিয়ে আসছে। ওর কাছে ফি’র টাকা জোগার না করতে পারেনি। ফলে অভিমান করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ফরিদা বেগম ধারণা করছেন। এ ছাড়া অন্য কোন কারণে সে আত্নহত্যার চেষ্টা করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওর বয়স মাত্র ১১ বছর। এছাড়া অন্য কোন ঘটনা ঘটেনি যাতে ইব্রাহীম অভিমান করতে পারে।
আবু হানিফ জানান, তিনি পেশায় দিনমজুর। দুর্মূল্যের বাজারে তিন সন্তানসহ পাঁচজনের সংসারের ভরন-পোষন চালানো তার দুঃসাধ্য হয়ে পরেছে। প্রচন্ড গরমে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি কয়েকদিন কাজে যেতে পারিনি। তা ছাড়া যে ক’টা টাকা ছিল চাল-ডাল কিনেই শেষ করে ফেলছি। ও যে এমন করে অভিমান করবে বুঝতে পারিনি। বুঝলে ধার করে হলেও তো টাকাটা জোগার করে অথবা স্যারদের কাছে গিয়ে সময় চেয়ে নিতাম।
দক্ষিন লেমুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২০ তারিখ ফি’ পরিশোধের শেষ দিন নির্ধারিত থাকলেও অকেই এখনও টাকা দেয়য়ি। তবে কোন শিক্ষার্থীকে এ জন্য চাপ দেয়া হয়নি। মাত্র ২০ টাকার জন্য আমার স্কুলের শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করবে বিষয়টি মর্মষ্পর্শি। যে সব শিক্ষার্থী ফি টাকা পরিশোধ করতে পারেনা আমরা শিক্ষকবৃন্দ সে টাকা পরিশোধ করি। ঘটনাটি সত্যিই মর্মস্পর্শি।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, বরগুনা সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আবদুল আলিম লিটন বলেন, সন্ধ্যার দিকে খবর শোনার পরপরই আমরা হাসপাতালে গিয়ে ইব্রাহীমের খোঁজ খবর নিয়েছি। চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেছি। চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল পাঠানোর পরামর্শ দিলে আমাদের পক্ষ থেকে সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেনকে এম্বুলেন্স খরচ দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।