নওগাঁয় উৎপাদিত বোরো ধান নিয়ে কৃষকরা বিপাকে
আববাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সরকার বোরো ধান-চাল ক্রয়ের ঘোষনা দিলেও প্রস্ত্ততি শেষ করতেই মাস পার করে দিচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রীর ঘোষনার পর মন্ত্রনালয় ও খাদ্য বিভাগের মধ্যে চিঠি চালা-চালিতেই পার হয়ে গেছে ১১ দিন। মাঠ পর্যায়ের প্রস্ত্ততি নিতে লেগে যাবে আরও দিন দশেক। এ কারনে সরকারের বোরো সংগ্রহ কর্যক্রম চলতি মাসে শেষ নাগাত ছাড়া শুরু হচ্ছে না। এ দিকে শ্রমিকের মুজুরী ও ঋন পরিশোধ সহ অন্যান্য খরচ যোগাতে অর্ধেক মূল্যে ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা। এদিকে নওগাঁ জেলা ধান-চাল সংগ্রহ কমিটি চিঠি পাওয়ার পর গত ১০ মে সভা করেছে।
জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি চলবে। তারপর শুরু হবে চাল ক্রয়। আর সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার কথা থাকলেও কৃষক বাছাই কার্যক্রম সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারতেও বেশ সময় লেগে যাবে। সুতরাং নওগাঁ জেলায় পুরোদমে বোরো ধান কাটা চললেও কৃষক কোন সুবিধা পাচ্ছেন না। কৃষককে এখনও ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় ধান বিক্রি করতে হচ্ছে – যেখানে প্রতিমণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয়েছে ৬৭৫ থেকে ৭০০ টাকা। আর সরকার প্রতি কেজি ১৮ টাকা বা ৭২০ টাকা মণ দরে ধান কেনার ঘোষনা দিলেও কৃষক সেই দামে বিক্রি করতে পারছেন না। কারন সরকার এখনও ক্রয় কর্যক্রম শুরুই করেনি। ফলে কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে দিচ্ছে।
সরকার যখন কেনা শুরু করবে তখন লাভবান হবেন এই ফড়িয়ারাই, কারন তখন কৃষকের ঘরে কেবল খাবারের মত ধান থাকবে। বিক্রয় উপযোগী ধান থাকবে না, চলে যাবে মধ্য স্বত্বভোগী ফড়িয়াদের হাতে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঘোষনা দিয়ে এত দেরি করা মোটেই সমীচীন হবেনা। এ প্রসঙ্গে কৃষি শ্রমিক আধিকার মঞ্চ এর নওগাঁ জেলার সদস্য সচিব ফজলুল হক খান বলেন, কৃষকের কাছে ধান ফুরিয়ে যাবার পর এ কার্যক্রম শুরু করলে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবেনা্, আবার কৃষকও তার নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন।
এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কোন ঘাপলা বা ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করা হচ্ছে কি না, উপর মহলের তা যাঁচাই করে দেখা দরকার।
চলতি বোরো মৌসুমে সরকার নওগাঁ জেলা থেকে ৬৭ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন চাল এবং ৬ হাজার ১৫৪ মেঃ টন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতি কেজি চালের ক্রয় মূল্য ২৮ এবং ধানের ক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে ১৮ টাকা। এর মধ্যে চাল কেনা হবে খাদ্য অধিদপ্তরের তালিকা ভুক্ত মিল মালিকদের কাছ থেকে। কোন মালিকের কী পরিমান উৎপাদন ক্ষমতা এর ওপর ভিত্তি করেই মিলারদের সঙ্গে চুক্তি হবে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে জেলায় ৯৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কৃষক ধান বিক্রি করতে গিয়ে এখনও নায্য মূল্য পাচ্ছেন না। সরকারি হিসাবে মণপ্রতি কৃষকের উৎপাদন খরচ ৬৭৫ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। কিন্তু কৃষক প্রতিমণ ধান বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। এতে দেখা যাচ্ছে মণপ্রতি কৃষকের লোকশান গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২২৫ টাকা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবিউল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্দেশ মোতাবেক আমাদের ধান-চাল কিনতে হয়। সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগছে। কিন্তু মিল সার্ভের কাজ চলছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি চলবে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। তবে কবে থেকে শুরু হবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না।