বেহাল দশায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার!
সুমন দে, সিলেট প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পরও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি। এতে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালের মধ্যে কারাগার নির্মাণ সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। অন্যদিকে সিলেট কেন্দ্রিয় কারাগার স্থানান্তর না হওয়ায় আটকে আছে মহানগর উন্নয়ন প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রচেষ্টায় মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে সিলেট কেন্দ্রিয় কারাগার স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুযায়ী সিলেট সদর উপজেলার, বাদাঘাটে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিতকারাগার কমপেক্স নির্মাণ ও পূর্বের কারাগারস্থলে সবুজ পার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নগরবাসীর নির্মল অবসর বিনোদনের সুযোগ করে দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে ২০১০সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) সিলেট কারাগার স্থানান্তর প্রকল্প পাস হয়।
পরবর্তীতে প্রকল্পের লে আউট প্যান প্রণয়ন করে সিলেট গণপূর্ত বিভাগ। ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০একর জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৬কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত কারাগার স্থাপনের ব্যয় ধরা হয় ১শ কোটি টাকা। গত বছরের
১১ই অগাস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের উপস্থিতিতে নগরীর বাদাঘাটে সিলেট কেন্দ্রিয় কারাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কারাগার নির্মাণ কাজের প্রতিশ্রুতি দিলেও অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রিয় কারাগারের অবস্থান নগরীর ব্যস্ততম এলাকা ধোপাদিঘিরপাড়ে। দ্রুত নগরায়ণের প্রভাবে এখানেও গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। এতসব বহুতল ভবনের ভিড়ে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। এছাড়া সংস্কারের অভাবে কারাভবনগুলো অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কারাগারটির বন্দি ধারণক্ষমতাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এদিকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কারাগারটির অবস্থান থাকায় তা যানজটেরও অন্যতম কারণ। অন্যদিকে নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনে অন্তরায়। এমন সব বিষয় বিবেচনায় রেখেই কারাগার স্থানান্তরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জানা যায়, ১৭৮৯ সালে ধোপাদিঘিরপাড়ে ২৫ একর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট কারাগার। ২৩০ বছরে সিলেটের জনসংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। বেড়েছে অপরাধের মাত্রাও। বিপরীতে নির্মাণাধিন কারাগারের পরিধি বাড়ছে মাত্র ২০ শতাংশ। ৫ একর বেড়ে নতুন কারাগারের পরিধি দাঁড়াচ্ছে ৩০ একর। স্থান সংকট কারাগার স্থানান্তরের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হলেও নতুন কারাগারের পরিধি তেমন একটা না বাড়ায় সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ হবে না বলেই অনেকের অভিমত। সিলেট কেন্দ্রিয়কারাগারে
সব মিলে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার ২১০ জন হলেও এ কারাগারে বন্দি আছেন ৩ হাজারের বেশি। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি সামলাতে হচ্ছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। এ হিসাবে নতুন কারাগারের পরিধি বেশী হওয়ার প্রয়োজন ছিল বলেই মনে করছেন অনেকে। বর্তমান সিলেট কেন্দ্রিয় কারাগার দেশের প্রাচীন কারাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৭৮৯ সালে ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় আসামের কালেক্টর জন উইলিয়াম প্রায় ১ লাখ ভারতীয় রুপি ব্যয়ে প্রায় ২৫ (২৪.৬৭) একর জমির ওপর এ কারাগারটি নির্মাণ করেন। তৎকালীন আসাম রাজ্যের একমাত্র টিবি হাসপাতাল ছিল এ কারাগারেই। সঙ্গত কারণেই সিলেট কারাগারটি আসামের গুরুত্বপূর্ণ কারাগার হিসেবে বিবেচিত হতো। প্রশাসনিক প্রয়োজন এবং বন্দি আধিক্যের কারণে ১৯৯৭ সালে কারাগারটি কেন্দ্রিয় কারাগারে উন্নীত করা হয়।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, ১৮৭২ সালের আদমশুমারিতে সিলেটের জনসংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৯। এরও ১০০ বছর আগে সিলেটে কারাগার স্থাপিত হয়। স্বাভাবিকভাবে সিলেটের জনসংখ্যা সে সময় ছিল আরো কম। ১৮৭২ সালের আদমশুমারির ১৩০ বছর পর ২০০১ সালের আদমশুমারিতে সিলেটের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৬। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে নতুন কারাগার স্থাপনের কিছুদিনের মধ্যেই তা বন্দি ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।