বিডিআর বিদ্রোহের বিচার স্থগিত করতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আহ্বান
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেক্সঃ বিদ্রোহের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক বিডিআর জওয়ানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের অনেক নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সংশ্লিষ্ট বলেও অভিযোগ তোলা হয়। ৪ জুলাই (বুধবার) নিউইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে। সংস্থাটি বিডিআর জওয়ানদের বিচারের জন্য ‘গণবিচার’ পদ্ধতি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা র্যাব ভেঙে দিয়ে বেসামরিক সদস্যদের সমন্বয়ে পুলিশ বাহিনী বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে নতুন বাহিনী গড়ার প্রস্তাব করেছে।
‘ভয় আমাকে ছাড়ছে না: ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু ও অবিচার’ শীর্ষক ৫৭ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বিদ্রোহের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে বিদ্রোহের পর সন্দেহভাজন আটক ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতনের বিবরণ নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া শত শত সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিচার করতে গিয়ে ন্যায়বিচারের বিধানগুলো লঙ্ঘন করা হচ্ছে দাবি করে সে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) ‘কুখ্যাত’ দাবি করে এসব নির্যাতনের অনেকগুলো ঘটনার সঙ্গে র্যাব যুক্ত বলে সংস্থাটি অভিযোগ করেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হেফাজতে থাকার সময় প্রচণ্ড নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এ রকম প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণবিচারের যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্বেগ তৈরি করে বলেও সংস্থাটি মনে করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া-বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৭৪ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। এ জন্য অত্যাচার ও অবিচারের পথ বেছে না নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিদ্রোহের পর সরকারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতি-উপযোগী ছিল—মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একটি জনঘনত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী ব্যবহারের দাবি প্রত্যাখ্যান করায় তা অনেক জীবন বাঁচিয়েছে।’ ওই ঘটনায় শারীরিক নির্যাতন ও গণবিচারের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হেফাজতে থাকা অবস্থায় অন্তত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মারধর, হাত-পায়ের পাতায় পেটানো, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া এবং কিছু ব্যক্তিকে সিলিং থেকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হতো। ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, নির্যাতিত ব্যক্তি ও এ থেকে রক্ষা পাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলো ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকারী। সন্দেহভাজন প্রত্যেক জওয়ানের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে মামলার বিষয় তৈরি না করলে, তাঁদের আইনজীবীদের যথাযথ সময় ও কাগজপত্র না দিলে ন্যায়বিচার অসম্ভব। এ রকম গণবিচার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের একেবারেই বিচার প্রদান করতে পারে না বা বিদ্রোহের সময় কারা ভয়ংকর অপরাধগুলোর জন্য দায়ী ছিল, তার প্রকৃত উত্তর দিতে পারে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এসব ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্বাধীন টাস্কফোর্স গঠন করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্রোহের পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোকে বিশদভাবে তদন্ত করা ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ারও আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া বিডিআর বিদ্রোহের বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের সুপারিশ রয়েছে সংস্থাটির তরফ থেকে।
সংস্থাটি র্যাব ভেঙে দিয়ে বেসামরিক সদস্যদের সমন্বয়ে এমন একটি বাহিনী গঠনের সুপারিশ করেছে যারা মানবাধিকার সমুন্নত রেখে অপরাধ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখবে। র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের কল্যাণে কার্যকর ও অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানায় সংস্থাটি।