মারিয়া ফারিহ উপমাঃ অভিনয় ও নৃত্যকলায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম
জবরুল আলম সুমনঃ অভিনেতা অভিনেত্রী বাবা-মায়ের হাত ধরেই সাধারণত তাদের সন্তানেরা অভিনয় জগতে পা রাখে। কিন্তু সন্তানের হাত ধরে মা-ই অভিনয় জগতে পা রেখেছেন এমন ঘটনা বিরল। এই বিরল ঘটানাটি ঘটিয়ে যিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার নাম মারিয়া ফারিহ উপমা। উপমার হাত ধরেই তার মা আর্জুমান্দ আরা বকুলও আজ অভিনয় জগতে এক প্রতিষ্ঠিত নাম। ১৯৯০ সালের ২৪শে এপ্রিলে জন্মগ্রহণ করা উপমা আজ টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের এক প্রিয় মুখে রূপান্তরিত হয়েছেন নিজস্ব অভিনয় দক্ষতা দিয়ে। অভিনয় ছাড়াও তিনি নাচে সমান তালে পারদর্শী। খালা আনিসা সুলতানার কাছে নাচের হাতে খড়ি হয় মুন্সিগঞ্জের শিল্পকলায়। তারপর ঢাকায় এসে কবিরুল ইসলাম রতনের কাছে এখনো নাচ শিখে যাচ্ছেন। অভিনয় ও নাচের পাশা পাশি ছায়ানটে গানও শিখতেন একসময়, কিন্তু পড়া লেখাকে প্রাধান্য দিতে দিয়ে গানকে দূরে ঠেলতে বাধ্য হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া উপমা। চলচ্চিত্র অভিনেতা নায়ক ইমরানের হাত ধরেই মাত্র ৬ বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসেবে “আমি এক অমানুষ” চলচ্চিত্রে অভিনয়ে অভিষেক ঘটে উপমার। উল্লেখিত চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও দিতি’র মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন তারপর একে একে আমার প্রতিজ্ঞা, বিদ্রোহী আসামী, চার সতীনের ঘর, বাংলা, নিরন্তর’এ অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্র ছাড়াও ছোট পর্দায় তাকে নিয়মিতই দেখা যায়। এপর্যন্ত ৫০টির মতো টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। অন্য অনেকের মতোও তার প্রথম অভিনীত নাটক কাঁচের চুড়ি এখনো প্রাচার হয়নি। তার উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে মেয়েটির নাম মঞ্জুলিকা, আতিকুল হক চৌধুরীর পরিচালনায় বৃষ্টি বালিকা, এটিএম শামসুজ্জামানের অহ-হ। বেশ কটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন, তার অভিনীত স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের মধ্যে ক্রান্তি, ৭১ এর রং পেন্সিল এবং জল পরানী উল্লেখযোগ্য সেই সাথে মোস্তফা মনোয়ারের টেলিফিল্ম “স্থীর পত্রে” অভিনয় করেন। বিটিভিতে ধারাবাহিক ভাবে প্রচারিত পাপেট শো “মনের কথা”-য় পারুলের কন্ঠটিও উপমার। অভিনয় ও নাচ ছাড়াও মডেলিংয়ের ভীষণ আগ্রহী উপমা। মডেলিংয়ের প্রসঙ্গ টানতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। কসকো টুথপেষ্টের একটা বিজ্ঞাপনে মডেলিং দিয়ে মডেলিংয়ের ক্যারিয়ার শুরু করলেও উল্লেখিত বিজ্ঞাপনে তার অংশ বাদ দিয়েই বিজ্ঞাপনটি টিভিতে প্রচার হয়। একারণেই মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ কাজ করে, জীবনের প্রথম নাটকের মতোই জীবনের প্রথম বিজ্ঞাপনটি আলোর মুখে আসেনি। নাচ নিয়ে তার স্বপ্ন অনেক দূর বিস্তৃত, একদিন তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় নৃত্যশিল্পীদের একজন হবেন এই স্বপ্ন তার অনেক দিনের। নাচ দিয়েই তিনি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে তুলে ধরার বাসনা পুষে রাখেন সেই সাথে নাচের মাধ্যেমে এতিম শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক তাড়না তার মধ্যে খুব কাজ করে। পড়াশোনা আর অভিনয়ের চাপে অখন্ড অবসর তার হাতে নেই তবুও এক খন্ড অবসর পেলে বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতে পছন্দ করেন বেশ, ঘুমের সময়টাকেও দীর্ঘ করার চেষ্টা করেন একটু অবসর পেলে। এপর্যন্ত তার অর্জনের ঝুলিতে বেশ কটি পুরুস্কারও যুক্ত হয়ে গেছে, বাচসাস, ফুলকুড়ি, সাকো, চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির পুরস্কার, ২০০১ সালে লোকনৃত্যে জাতীয় পর্যায়ে গোল্ড মেডেল বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। মারিয়া ফারিহ উপমা তার নিজস্ব দক্ষতা দিয়ে একদিন আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় অভিনয় ও নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এই আমাদের প্রত্যাশা।
জবরুল আলম সুমনঃ প্রাবন্ধিক ও গবেষক।।