বিষখালী নদী তীরে ইটভাটার আগ্রাসনঃ জলোচ্ছাসের আশংকা
জাফরুল হাসান রুহান,বরগুনা প্রতিনিধি, এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বরগুনার বামনা বিষখালী নদী তীরবর্তী গড়ে ওঠা ইটেরভাটা গুলোতে বেড়িবাঁধ লাগোয়া স্থান হতে অব্যহতভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে ইটখোলার মালিকরা। এতে বিষখালী নদী তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাধ হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমান বর্ষা মৌসুমে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাওয়ার শংঙ্কায় বেড়িবাধ সংলগ্ন ৫০ হাজার মানুষ। সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদী তীরবর্তী বিস্তৃর্ন সমতল ভুমি ও বেড়িবাধ সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির মাটি কেটে নদীর সাথে মিশিয়ে দিয়েছে মাটি খেকো ইটভাটা মালিকরা। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাধ ভেঙ্গে প্লাবিত হতে পারে হাজার হাজার একর কৃষিজমি ও মানুষের বসতি। সরকারী জমির মাটি দিয়ে নিজেদের ভাগ্য নির্মাণ করলেও এর খেসরত দিতে হবে নদী তীরবর্তী শ্রমজীবি বিত্তহীন অসহায় মানুষদের।
এছাড়া ইটভাটার প্রভাবশালী মালিকরা সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ভাটা সংলগ্ন বেড়িবাধের জমিতে অবৈধ স্ব-মিল স্থাপন করে বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির চোরাই পথে আসা কাঠ ও স্থানীয় দরিদ্র মানুষের অপরিপক্ক গাছ কিনে বাটায় অবাধে জ্বালানী হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর, তেতুল, আম, তালগাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাটির ক্ষয়রোধকারী গাছ। ভাটা সংলগ্ন ১৫০ থেকে ৩০০ গজের মধ্যে বন বিভাগের রোপণকৃত গাছ ভাটা মালিকরা উপরে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন চর ও নদীর তীর থেকে মাটি কেটে এনে অবৈধ ভাবে বেড়িবাঁধের ওপর রাখা হচ্ছে। পরে বাঁধের ওপর মজুদকৃত ওই মাটি দ্বিতীয় দফায় কেটে নেওয়ার সময় মূল বাঁধের ক্ষতি করা হচ্ছে। নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধের পাড়ের মাটিকাটার এমন নৈরাজ্য ঘটলেও উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছেনা।
অপর দিকে এসব ইটভাটায় অবৈধ স্বমিল স্থাপন করে প্রতিদিন হাজার হাজার মন কাঠ ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন,নদী তীরবর্তী প্রভাবশালীদের গড়ে তোলা এসব ইটভাটা বেড়িবাঁধের ভিতর অংশে লোকালয়ে স্থাপন করায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
সরোজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে,বামনার পূর্ব সফিপুর গ্রামের মেসার্স কবির স্টোর ও কলাগাছিয়ার মেসার্স গাজী ব্রীক্স-১ এর সংলগ্ন বিষখালী নদীর তীরবর্তী বেরিড়বাঁধটি বর্তমানে ভাঙ্গনে হুমকির মুখে। নদীর তীর থেকে বেরিবাঁধ স্থানের নদীর অংশে মাটি কাটার ফলে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে পূর্ব সফিপুর কবির ব্রিক্স সংলগ্ন বেড়িবাধটির ভেঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের ফসলী জমিসহ ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছে এখানকার বাসিন্দারা।
সরকারী নিয়ম অনুযায়ী শহর বা বাজার অঞ্চলের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও এ ভাটা দুটি উপজেলা পরিষদ থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে। ভাটা সংলগ্ন ভেড়িবাধটি পুরোটাই যেন দখলে রয়েছে মালিকদের। বাঁধের উপড় ইট, কাঠ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে জনসধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনকি ভাটা সংলগ্ন ভেড়িবাধে ভাটা মালিকরা কর্মচারীদের থাকার ঘর, ইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত মালামাল রাখায় একদিকে প্রতিনিয়ত ভেড়িবাধের ক্ষয় হচ্ছে অপরদিকে নদীর তীরবর্তী ও ভেড়িবাধের কোল ঘেঁষে মাটি কাটার ফলে বেড়িবাঁধ রয়েছে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার হুমকিতে।
বামনা উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাইদুর রহমান মানিক বলেন, আমরা জানি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন লোকালয়ে গড়ে ওঠা ইটভাটার আশেপাশে রোপনকৃত বনবিভাগের মূল্যবান গাছগুলো ভাটা মালিকরাই নষ্ট করেছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পোড়ানোর ব্যাপারে তিনি জানান, পূর্বে এগুলো পর্যবেক্ষনের দায়িত্ব আমাদের থাকলেও বর্তমানে জেলা প্রশাসন সে দায়িত্ব পালন করে থাকে ।
এ ব্যাপারে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহির উদ্দিন জানান, আমাদের জনবল সংকটের কারনে আমরা ঠিকভাবে বামনা সহ অন্যান্য উপজেলার বেড়িবাধগুলো পরিদর্শন করতে পারছি না। ফলে এসব এলাকায় কি ঘটছে তা আমার সহজে জানার উপায় নেই । তাছাড়া বেরিবাঁধের বাহিরে অধিকাংশ জায়গা আমাদের আওতাভূক্ত নেই, সেখান থেকেও বাটা মালিকরা মাটি কেটে নিতে পারে। আমি আপনাদের মাধ্যমে এই প্রথম বিষয়টি জানলাম। যদি কেহ আমাদের জায়গা থেকে মাটি কেটে নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মানজুরুর রব মুর্তাযা আহসান বলেন, সরকারী জায়গার মাটি কেটে ইটভার মালিকরা নিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার মানুষেরা আতংকে রয়েছে, তবে প্রশাসনের এবিষয়ে নজর দেওয়া উচিৎ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন,নদীর লাগোয়া স্থানের বাঁধের পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনী। এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাuঁধর ক্ষতি করে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।