প্রস্ত্তত মেধাবী বাংলাদেশ
এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৭৮ দশমিক ৬৭। আর এর মানে দাঁড়াচ্ছে যে, আমাদের সমত্মান, আমাদের আগামী মেধার আলোয় আলোকিত করতে প্রস্ত্তত এই দেশ, এই মাটিকে, এই জাতিকে। কিন্তু আমরা অপ্রস্ত্তত, অপ্রস্ত্তত আমাদের দেশের উচ্চ শিÿালয়গুলোও। যখন পত্রিকার পাতায় খবর বের হয় যে, দেশের ৮টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোডের্র এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল আজ প্রকাশিত হয়েছে। পাসের হার শতকরা ৭৮ দশমিক ৬৭ ভাগ। তখন আনন্দের বদলে কুকড়ে উঠি ব্যাথায়। কেননা, ২০১২ সালের ১ এপ্রিল শুরু হওয়া পরীক্ষায় মোট ৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। ২০১১ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮২৮ জন। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এক লাখ ৫২ হাজার ৮৪৫ জন পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর পরীক্ষায় পাস করেছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৯৭৯ জন। ২০১১ সালে পাস করেছিল ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ জন। ২০১১ সালের চেয়ে ২০১২ সালে এক লাখ ৪৭ হাজার ৭১৮ জন বেশি পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৭৮ দশমিক ৬৭ ভাগ। ২০১১ সালে পাসের হার ছিল শতকরা ৭৫ দশমিক শূন্য ৮ ভাগ। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি বছরে পাসের হার শতকরা ৩ দশমিক ৫৯ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর সারাদেশে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬১ হাজার ১৬২ জন। ২০১১ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ২১ হাজার ৩৯৩ জন বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে। এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬টি। গত বছর ছিল ৮৯২টি। চলতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪৪টি। শূন্য পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৪টি। গত বছরও ছিল ২৪টি। চলতি বছর মোট ৭ হাজার ৪৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যা গত বছর ছিল ৭ হাজার ১৯৭টি। চলতি বছর মোট কেন্দ্র ছিল ২ হাজার ১৯২টি। গত বছর ছিল ২ হাজার ৩৫টি। ফলাফল ঘোষণা করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার ফলাফলে আমি সন্তুষ্ট’। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে পরীক্ষায় পাসের সংখ্যা বেশি। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদেরও সংখ্যা বেশি।তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু ৫৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা বোর্ডকে অভিনন্দনসহ ধন্যবাদ জানান। ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মোট ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৮ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। গত বছর ছিল ৬ লাখ ২২ হাজার ২৭৭ জন। বৃদ্ধি পেয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ১৭১ জন। চলতি বছর ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ জন পাস করেছে। গত বছর পাস করেছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার ২৫৪ জন। বৃদ্ধি পেয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ৬৮৬ জন। চলতি বছর সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার শতকরা ৭৬ দশমিক ৫০ ভাগ। গত বছর পাসের হার ছিল শতকরা ৭২ দশমিক ৩৬ ভাগ। বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৪ দশমিক ৪ ভাগ। চলতি বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৫১ হাজার ৪৬৯ জন। গত বছর ছিল ৩৪ হাজার ৩৮৫ জন। বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ হাজার ৮৪ জন। শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। চলতি বছর ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে এক লাখ এক হাজার ৬১৫ জন, মানবিক বিভাগে ২ লাখ ৬০ হাজার ৭২৬ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২ লাখ ৫ হাজার ৫৯৯ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে ৩০ হাজার ১২৩ জন, মানবিক বিভাগে ৬ হাজার ৪২৩ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৪ হাজার ৯২৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিদেশ কেন্দ্রে ১৭৯ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। পাস করেছে ১৬৯ জন। অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ জন। পাসের হার শতকরা ৯৪ দশমিক ৪১ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে মোট ৮৪ হাজার ২৪৬ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পাস করেছে ৭৭ হাজার ৩১৬ জন। পাসের হার শতকরা ৯১ দশমিক ৭৭ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০৭৩ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ২৭৬ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ২ হাজার ৭৯৭ জন বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৮৬ হাজার ৭০৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পাস করেছে ৭৩ হাজার ১০৬ জন। পাসের হার শতকরা ৮৪ দশমিক ৩২ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২১১ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭২৮ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে এক হাজার ৪৮৩ জন বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে। চলতি বছরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এক লাখ ৯১ হাজার ৫৮০ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৮১ দশমিক ৮২ ভাগ। রাজশাহীতে পাস করেছে ৮২ হাজার ৪৬৭ জন । পাসের হার শতকরা ৭৮ দশমিক ৪৪ ভাগ। কুমিলvয় পাস করেছে ৫৮ হাজার ২১৯ জন । পাসের হার শতকরা ৭৪ দশমিক ৬০ ভাগ। যশোরে ৭১ হাজার ৯৩৭ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৬৭ দশমিক ৮৭ ভাগ। চট্টগ্রামে ৩৯ হাজার ১১ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৭২ দশমিক ২৯ ভাগ। বরিশালে ২৮ হাজার ১৪৪ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৬৬ দশমিক ৯৮ ভাগ। সিলেটে ৩১ হাজার ৯০৩ জন পাস করেছে। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৭ ভাগ। দিনাজপুরে ৬৪ হাজার ৬৭৯ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৭৫ দশমিক ৪১ ভাগ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৭৭ হাজার ৩১৬ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৯১ দশমিক ৭৭ ভাগ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৭৩ হাজার ১০৬ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৮৪ দশমিক ৩২ ভাগ। ঢাকা ডিআইবিএস ৩ হাজার ৬১৭ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৮৪ দশমিক ৬৩ ভাগ। এখন কথা হচ্ছে এই যে আলোর ইশারা; সেই ইশারায় সাড়া দেয়ার মত শক্তি-সামর্থ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর আছে কি? এক কথায় উত্তর আসবে নেই। অথচ চলতি বছর এইচএসসির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর একটা বড় ধরনের উৎকণ্ঠা শিক্ষার্থীদের মাঝে কাজ করছে। তাদের অনেকেই হয়তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার কোন সুযোগ পায় না। যদিও শিক্ষামন্ত্রী সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে মিটিং করে জানিয়েছেন, এবার আসনসংখ্যা বাড়ানো হবে। শুধু আসনসংখ্যা বাড়ালেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? না, এটা সমাধানের কোন পথ নয়। দেশে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। এটা বিবেচনায় নিয়ে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার আওতায় এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ১৩৬ জন শিক্ষার্থী। আর ২৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে) প্রথম শর্ত সম্মান শ্রেণীতে আসন সংখ্যা ১৭ হাজারের কিছু বেশি। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার। দেশের প্রায় ১৭৫টি কলেজে এই আসনসংখ্যা নির্ধারিত। এমতবস্থায় সরকারের শিÿা সচিব-মন্ত্রী এবং শিÿা বিষয়ক সংসদিয় কমিটির চেয়ারম্যান যদি অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু সচেতন হোন, তবেই কেবলমাত্র আমাদের মেধাবী বাংলাদেশের রাসত্মা প্রশস্থ হবে। তা না করে যদি অন্যান্য বছরের মত সংসদিয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ভর্তি বাণিজ্যে নেমে পড়েন, আর তা দেখে যদি শিÿা সচিব নিরব ভূমিকায় চলে যান, শিÿা মন্ত্রী যদি হয়ে যান একবারেই নির্বিকার; তাহলে আর শেষ রÿÿ হবে না। প্রকৃত মেধাবীরা পাবেনা উচ্চ শিÿার সুযোগ। তৈরি হবে বাংলাদেশের প্রতিটি উচ্চ শিÿালয়ে অরাজকতা আর মেধাহীনদের তর্জন গর্জন যা আমাদের কারোই কাম্য নয়…
মোমিন মেহেদী : রাজনীতিক ও কলামিস্ট
Website: www.mominmahadi.com