হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ ঢাকায় আসছে ২৩ জুলাই
মোক্তার হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ আসছে ২৩ জুলাই (সোমবার)। এদিন সকালে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে লেখকের মরদেহ ঢাকায় পেঁৗছাবে। একই বিমানে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তার দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত, লেখকের শ্যালিকা সেঁজুতি এফ আফরোজ, অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী ও পারিবারিক বন্ধু মাজহারুল ইসলাম দেশে ফিরবেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেনের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক থেকে এনা জানায়, মরদেহসহ হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠজনদের টিকিটের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তা করা হয়। নিউইয়র্ক সময় শনিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে এমিরেটসের ফ্লাইট (ইকে ০২০২) হুমায়ূনের মরদেহবাহী কফিন নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়ার কথা। এ ফ্লাইট দুবাই থেকে ০৫৮২ নম্বর ধারণ করে ঢাকায় অবতরণ করবে স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার মরদেহ ধানম-িতে নিজ বাসভবন দখিন হাওয়ায় নেয়া হতে পারে। সেখানে তার মরদেহ কিছুক্ষণ রাখা হবে। ধারণা করা হচ্ছে এখানে হুমায়ূন আহমেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর দুপুর আড়াইটায় জাতীয় ঈদগাহে মরদেহ আনা হবে। এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তার লাশ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। পরদিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বারডেমের হিমঘর থেকে সরাসরি মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে। সেখানে বাদ জোহর আরেক দফা জানাজা শেষে যথাযথ মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
নিউইয়র্কে প্রথম জানাজা : গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর নিউইয়র্কে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও ১০ সহস্রাধিক মানুষ জানাজায় অংশ নেন। এর মধ্যে নারীরাও ছিলেন। মসজিদের আশপাশের সকল রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যেই জানাজায় শরিক হন তারা। এ সময় সবাই লেখকের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। নিউইয়র্কে এর আগে আর কোনো জানাজায় এত মানুষের সমাগম ঘটেনি বলে দাবি করেছে বার্তা সংস্থা এনা। জানাজায় ইমামতি করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পেশ ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ। লেখকের ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, লেখকের শাশুড়ি তহুরা আলী, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেন, কন্সাল জেনারেল সাবি্বর আহমেদ চৌধুরীসহ প্রবাসের লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, সমাজকর্মী, সংস্কৃতিমনা বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে বরেণ্য লেখককে শেষবারের মতো দেখার জন্য ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। এ মানুষকে সামাল দিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। তারপরও সুশৃঙ্খলভাবে শেষবারের মতো প্রিয় লেখকের মুখখানি দর্শন করেছেন সবাই।
নিউইয়র্ক থেকে এনা জানায়, হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ গোসল করান তার প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের দুলাভাই জামাল আবেদী, আনিসুর রহমান পাশা এবং মামা সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরী।
নুহাশ পল্লীই হতে পারে শেষ ঠিকানা : কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে গড়া নুহাশ পল্লী এখন সুনসান, নীরব। লেখকের বসার জায়গা, দিঘির পাড়, ছোট ছোট জলাধার সবারই যেন এক নীরব অপেক্ষা। যার মমতা মাখানো স্পর্শে পিরুজালিয়ায় ভাওয়ালের শালবন দিয়ে ঘেরা এ নুহাশ পল্লী গড়ে উঠেছিল, সেই কথার জাদুকরের নিত্য আসা-যাওয়া ছিল এখানে। তিনি এখানে থেকেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন, আবার চলেও গেছেন। আপন হাতে গড়া এই নুহাশ পল্লীতেই শেষ ঠিকানা হতে পারে হুমায়ূন আহমেদের। তবে এখনো এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হুমায়ূন আহমেদের আরেক ছোট ভাই লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশে এলে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ছেলের জন্য অপেক্ষায় মা আয়েশা ফয়েজ : হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীবের মিরপুরের পল্লবীর বাসায় আছেন তাদের মা আয়েশা ফয়েজ। ছেলে হারানো শোকাতুর মা এখন অপেক্ষা করছেন ছেলের মরদেহ দেখার জন্য। ছেলের কথা ভেবে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি। আত্মীয়স্বজন তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। নিজ থেকে কিছু খেতে চাচ্ছেন না তিনি। গতকাল শনিবারও হুমায়ূন আহমেদের মাকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে গেছেন ঘনিষ্ঠজনরা।