জননীর কোলে ফিরছেন হুমায়ূন
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেক্সঃ জোছনা হুমায়ূন আহমেদের শুধু প্রিয়ই নয়, তার হৃদয়ের অনেকটা জায়গা দখল করেছিল। ছোটবেলায় এক রাতে ঘুম থেকে জেগে দেখেন একটি আলোর ফুল তার মশারি ভেদ করে ঢুকে পড়েছে। এ অদ্ভুত দৃশ্য তাকে সমগ্র রাত বিহ্বল করে রাখে। ওই আলোর ফুলটি ছিল টিনের ঘরে নকশাকরা বেড়া দিয়ে ঢুকে পড়া চাঁদের আলো। তার উপন্যাসের অনেকটা অংশ জুড়েই ছিল জোছনা আর বৃষ্টি। তিনি বিদেশে গেলে সবকিছু অচেনা লাগত; কেবল জোছনাকেই মনে হতো একমাত্র বাংলাদেশের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার এপিকধর্মী উপন্যাসের নামও ‘জোছনা ও জননীর গল্প’।
২৩ জুলাই (সোমবার) এই জোছনা ও জননীর কোলেই ফিরবেন প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ। তবে প্রাণহীন দেহে। জোছনাকাতর উচ্ছল রোমান্টিক পুরুষটিকে আর দেখা যাবে না। কেবলই নিথর দেহটি আজ প্রিয় মাতৃভূমিতে পেঁৗছবে সকাল ৯টায়। এরপর বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নন্দিত এই লেখকের প্রতি সর্বস্তরের শ্রদ্ধ নিবেদন করা হবে। এরপর বেলা আড়াইটায় জাতীয় ঈদগায় মরদেহ আনা হবে। এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তার লাশ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে।
এদিকে নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে ইচ্ছুক সর্বস্তরের মানুষের চলাচলের পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শ্রদ্ধা জানাতে দোয়েল চত্বর, ঢাকা মেডিকেল কলেজের রুমানা চত্বর এলাকা দিয়ে ঢুকে জগন্নাথ হল ক্রসিং বা শিববাড়ী ক্রসিং দিয়ে বের হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দোয়েল চত্বর, শিববাড়ীর মোড়, জগন্নাথ হল ক্রসিং ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ থাকবে। বক্সীবাজার মোড় থেকে টিএসসি পর্যন্ত, দোয়েল চত্বর থেকে শহীদুল্লাহ হল গেট পর্যন্ত, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ গেট থেকে জরুরি বিভাগের গেট পর্যন্ত ও কার্জন হলের ভেতর গাড়ি রাখতে বলা হয়েছে। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা জনগণকে ট্রাফিক ব্যবস্থা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
উল্লেখ্য, ৯ মাস ক্যান্সারে ভোগার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান হুমায়ূন আহমেদ। বাংলাদেশ সময় গতকাল রোববার সকাল ৯টায় নিউইয়র্কের জনএফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে এ কথাশিল্পীর মরদেহ নিয়ে দেশের উদ্দেশে রওনা হন স্বজনরা। আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে তাদের ঢাকায় পেঁৗছানোর কথা রয়েছে। সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার মরদেহ ধানম-িতে নিজ বাসভবন দখিন হাওয়ায় নেয়া হতে পারে। সেখানে তার মরদেহ কিছুক্ষণ রাখা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে হুমায়ূন আহমেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হুমায়ূনের দাফন কোথায় হবে এ সিদ্ধান্ত আজ : নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে কোথায় দাফন করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই ড. জাফর ইকবাল। একই সঙ্গে জনপ্রিয় এ লেখকের গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হচ্ছে না বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পরিবার। তাকে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, বনানী কবরস্থান অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দাফন করা হতে পারে। তবে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন দেশে ফিরলে তার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গতকাল রোববার দুপুরে হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এমনটাই জানিয়েছেন। এদিন মিরপুর পল্লবীর সাড়ে ১১ নম্বরের ২৪/৪ নম্বর বাসায় এ বিষয়ে বৈঠকে বসেন হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, মা আয়েশা ফয়েজসহ বোন ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার অদূরে গাজীপুরে হুমায়ূন আহমেদ নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করেন নুহাশ পল্লী। প্রাকৃতিক নৈস্বর্গ নুহাশ পল্লী হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় সব নাটক-সিনেমার অন্যতম শুটিং স্পট। লালরঙা মাটির পাহাড়িয়া ঢঙে সবুজ গালিচার বনের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে প্রায় চলি্লশ বিঘাজুড়ে সবুজ গাছ-গাছালির মাঝে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন স্কাল্পচার, থাকার ঘর, বসার ঘর, বৃষ্টি বিলাস, ভূত বিলাস, দিঘি লীলাবতী। কিছুদিন আগেও চিকি?ৎসা বিরতির সময় দেশে এসে নুহাশ পল্লীতে অবস্থান করেন সদ্য প্রয়াত এ লেখক।