জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা ।। ছাত্র-ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতার প্রেক্ষাপটে ঈদের ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে এনে ছাত্রছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রদের ২ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের ৩ জুলাই (শুক্রবার) সকাল ৯টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এক ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার মধ্যরাত থেকে সহিংসতার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট জরুরি বৈঠকে বসে ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঈদের ছুটি এগিয়ে আনা হয়েছে। আজ থেকে ২৫ অগাস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।”
আগামী ৯ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তের পরপরই পাঁচ শতাধিক পুলিশ ঢুকেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তারা বিভিন্ন হল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। পুলিশের পিটুনিতে তানভীর আহমেদ নামে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র আহত হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় রিকশায় থাকা তানভীরকে পিটুনি দেয়। তাকে উপাচার্যের বাসভবনে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশের পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এদিন শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নির্বাচন স্থগিত করে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে এই সহিংসতার শুরু বুধবার রাত ১০টায়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতা অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের ছাত্র তাহমিদুল ইসলাম লিখনকে ওই সময় কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করতে গেলে ওই হলের ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা প্রাধ্যক্ষের বাড়ি ভাংচুর করলে পুলিশের রাবার বুলেটে বিভিন্ন বর্ষের পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হন। পাঁচ ছাত্র আহত হওয়ার পর ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাত ১টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। তারা কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করে।
অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের পদত্যাগসহ আট দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে মিছিল করে। তাদের দাবির মধ্যে প্রধান তিনটি হল- হামলা, পুলিশের গুলিসহ বুধবার থেকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার দায় উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকেই নিতে হবে; প্রক্টর তপন কুমার সাহাকে পদত্যাগ করতে হবে; মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ এমদাদুল হককে অপসারণ করতে হবে। বিশ্ববদ্যালয় সিন্ডিকেট বুধবার রাত থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে উপউপাচার্য অধ্যাপক মো. ফরহাদ হোসেনকে। তদন্ত কমিটিকে ২১ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহত লিখনের বিরুদ্ধে নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী উত্তক্ত্যের অভিযোগ আনে। এরপরই লিখন হামলার শিকার হন। লিখন দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলেও উপাচার্য পরিবর্তনের পর সম্প্রতি তিনি ক্যাম্পাসে ফেরেন। উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের সময় বিতাড়িত ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে তিনি ওঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, রাত সোয়া ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে লিখনকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে এবং পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে লিখন তার ওপর হামলাকারী হিসেবে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের ছাত্র নাহিদের নাম বলেন। নাহিদকে আটক করতে পুলিশ মীর মশাররফ হোসেন হলে গেলে হলের ছাত্রদের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়। রাতে পুলিশের রবার বুলেটে আহত হন ফার্মেসি বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের রাকিব, গণিত বিভাগের ৪১তম ব্যাচের রবিন, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ৩৯তম ব্যাচের মারুফ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের নাহিদ এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ৪০তম ব্যাচের ছাত্র বশির। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে রাতেই ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু তাদের বোঝাতে না পেরে ফিরে আসেন।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের তখন তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হতে পারে।