অজ্ঞাত কারণে থেমে আছে পুলিশের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার সদস্যের পদোন্নতি
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার সদস্যের পদোন্নতি এখন হিমাগারে। গত বছর কন্সটেবল ও নায়ক থেকে এএসআই পদে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী এসব পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতির ভাগ্য অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কপাল পোড়া এসব পুলিশ সদস্যের পদোন্নতির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই নতুন করে প্রায় ৮শ’ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে। এতে পুলিশের উর্ধ্বতন কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের ঐ সকল কর্মকর্তাগণ এ পদোন্নতি পরীক্ষা বাবদ প্রায় ১২ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের খবর গোটা পুলিশ বিভাগে ছড়িয়ে পড়ায় ডিএমপি, সিএমপি, সিআইডি ও এসবিসহ সারা দেশে র্যাংক না পাওয়া কৃতকার্য এএসআইদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা। পুলিশের এই পদোন্নতিকে সামনে রেখে যে কোন সময় পদোন্নতি বঞ্চিত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ ঘটার আশংঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যা বিডিআর বিদ্রোহের মতো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আশংঙ্কা প্রকাশ করছে।
এদিকে, বহুল আলোচিত এপিবিএন থেকে এএসআই নিয়োগ পরীক্ষার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রীট মামলা নং৯৬৭৩/১২ দায়ের করেছে পুলিশ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান গং। বিচারপতি মামনুন রহমান এবং বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই নিয়োগ পরীক্ষার বিরুদ্ধে রুল জারী করেছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে বিচারপতিগণ এপিবিএন থেকে এএসআই পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের আদেশ প্রদান করেছেন। কিন্তু হাইকোর্টের এই আদেশকে অবমাননা করে গত ২৬ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত এপিবিএন প্রায় ৮শ’ সদস্যের নুতুন করে পদোন্নতির পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে আরো জানা গেছে, স্পেশাল ব্যাঞ্চের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবদুল হাই মোল্লা এপিবিএন থেকে এএসআই নিয়োগে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টাসে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পেশ করেন। ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ান সদরদফতর এবং বিশেষায়িত সিকিউরিটি ও প্রটেকশন ব্যাটালিয়ান গঠনের নিমিত্তে ৬৭টি ক্যাডার পদ স্থায়ী ভাবে এবং ১৪৪৫টি নন ক্যাডার পদ বছর বছর সংরক্ষণের শর্তে অস্থায়ীভাবে সৃষ্টির সরকারী মঞ্জুরী দেয়া হয়। মঞ্জুরীপত্রে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদরদফতর এবং বিশেষায়িত সিকিউরিটি ও প্রটেকশন ব্যাটালিয়ান গঠনের লক্ষ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদে ২৪৪টি ও এএসআই/ হেড কনস্টেবল পদে ২৫৮টি জনবলের মঞ্জুরী রয়েছে। উক্ত জনবল পূরণের লক্ষ্যে এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারী পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সে অনুষ্ঠিত পলিসি গ্রুপের সভায় এপিবিএন-এ কর্মরত (মহিলা এপিবিএন ব্যতিত) কনষ্টেবল, নায়েকদের বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক এ বছরের ১০ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত পরীক্ষার দিন ধার্য্য করা হয়। কিন্তু অনিবার্য কারণ বশতঃ ৯ মে পুলিশ হেড কোয়াটার্স থেকে জারিকৃত এক আদেশ মূলে উক্ত বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ডিএমপি, সিএমপি, সিআইডি, এসবিসহ সারাদেশে কনস্টেবল ও নায়েক থেকে পরীক্ষা দিয়ে বর্তমানে কৃতকার্য সাড়ে ৭ হাজার সদস্য এ এস আই র্যাংক পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের পাশ কাটিয়ে ও আইন লঙ্খন করে আবারো নতুন করে প্রায় ৮শ’ জনকে এপিবিএন থেকে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আইন বর্হিভূত ভাবে তাদের সিকিউরিটি ও প্রটেকশন ব্যাটালিয়ান নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের শেষের দিকে সারাদেশে পুলিশ কনস্টেবলদের মধ্যে এএসআই পদে পদোন্নতির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় প্রায় ১২ হাজার পুলিশ সদস্য এএসআই হিসেবে কৃতকার্য হন। তাদের মধ্যে অনেককে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে পদায়ণ করা হলেও এখনো পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০৯ জনকে পদায়ণ করা হয়নি। পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ক্ষিপ্ত পুলিশ সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, আর্মড পুলিশের একজন ক্ষমতা ধর পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ হেড কোয়ার্টাসের উর্ধ্বতন একজন এআইজি বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে নিজেদের ইচ্ছা ও গায়ের জোরে এটা করছেন। তারা অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভারী করে আমাদেরকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করছেন। এ ব্যাপারে ভূক্তভোগীরা একাধিক বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেও কোন ফল পাননি। অভিযোগকারীরা বর্তমানে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের হুমকি দুমকির মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বলেন নিরিহ পুলিশ সদস্যগণ জানান। তারা এ অন্যায় পদক্ষেপের প্রতিকারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।