পরিবেশ আইনের ঘোরপ্যাঁচে ভুক্তভোগিরা বিরক্ত!
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ রাজধানী ঢাকা নগরীসহ সারাদেশের পরিবেশ দূষণ এতটাই বেড়েছে, যা উদ্বেগের কারণ না হয়ে পারে না। বিশেষ করে ঢাকা নগরীর যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, ড্রেনে ময়লা-আবর্জনায় জমে থাকা দুর্গন্ধ পানি, ফুটপাতে দোকান-পাটের কারণে পথচারির চলাফেরার অসুবিধা, ডাস্টবিনগুলো সময়মতো নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানি, নগরীর বিভিন্ন স্থান অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকায় মশা মাছির উপদ্রব ও বিভিন্ন রোগের উৎপত্তি। এ ছাড়া গাড়ির কালো ধোঁয়া, রাস্তার ধুলাবালি প্রতিনিয়ত নগরীর পরিবেশকে করছে দূষিত। অন্যদিকে ঢাকা নগরীর বাইরে পরিবেশ বিনাশী কর্মকাণ্ডে নদীদূষণ, মাটিদূষণ, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে ইটভাটা, দেদার গাছ পোড়ানো হচ্ছে, আবাসিক এলাকায় লেদমেশিন, কেমিক্যাল ও গার্মেন্টশিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে; কিন্তু এ সবের কোনোই প্রতিকার সম্ভব হচ্ছে না পরিবেশ আইনের দুর্বলতা ও মারপ্যাঁচের কারণে। পরিবেশ আইন এতটাই ঘোরপ্যাঁচের যে ভুক্তভোগিরা বিরক্ত হয়ে এ সংক্রান্ত মামলা করতে আগ্রহী হন না। পরিবেশ সংক্রান্ত মামলার ধরনটা এ রকম:- পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৮ (১) অনুযায়ী পরিবেশ দূষণ বা পরিবেশের অবক্ষয়জনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কাগ্রস্ত যে কোনো ব্যক্তি ক্ষতি বা সম্ভাব্য ক্ষতির প্রতিকারের জন্য মহাপরিচালককে বিধিদ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদনের মাধ্যমে অবহিত করবেন। একই আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, মহাপরিচালকের প্রতিনিধি বা পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ বিচারের জন্য আদালত আমলে নেবে না। আইনের এ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ নাগরিকদের কারো পক্ষে সরাসরি পরিবেশ আদালতে মামলা করার অধিকার নেই। বলাবাহুল্য এ কারণে পরিবেশ সংক্রান্ত মামলার হার অনেক কম। জানা যায়, ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী মামলা গ্রহণ ও বিচার কাজ পরিচালনার জন্য ২০০০ সালে পরিবেশ আদালত আইন করা হয়। ওই আইন অনুযায়ী ২০০২ সালে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় তিনটি পরিবেশ আদালত। যুগ্ম জেলা জজ ওই আদালতের বিচারক। এ ছাড়াও পরিবেশ আপিল আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি। পরিবেশ আপিল আদালতে জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক বিচার কাজ পরিচালনা করেন। জেলা পর্যায়ে মামলা হলে সেগুলো বিভাগীয় আদালতে স্থানান্তর করা হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা ও মারপ্যাঁচের কারণে পরিবেশ আদালতে মামলা অনেক কম দায়ের হচ্ছে। প্রতিষ্ঠার বারো বছরে তিনটি পরিবেশ আদালতে ৫শ’র কিছু বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে কতটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে তার সঠিক তথ্য পরিবেশ অধিদফতর দিতে পারছে না।
পরিবেশ দূষণ রোধে যে জটিল আইনি প্রক্রিয়া, সেটা সহজ করে না আনা পর্যন্ত পরিবেশ দূষণ রদ হবে বলে মনে হয় না। কারণ দূষণকারীরা আইনের দুর্বলতা ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে বিধায় তারা প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণের কাজ করতে সাহস পাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটা নিশ্চিত করতে পারলে এবং দু’চারজন পরিবেশ দূষণকারীকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারলে পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের এ দিকটায় আশু দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। এ জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত মামলা দায়ের সহজিকরণ করা দরকার। পরিবেশ অধিদফতরকে এ বিষয়ে তৎপর হয়ে ওঠা জরুরি।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম.