সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ মহা সড়ক নির্মাণের তিন মাসের মধ্যে চলাচলের অনুপযোগী
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সাতক্ষীরায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে পৌনে ২ কিলোমিটার নতুন সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মাত্র তিন মাস যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে চষা মাঠের মতো হয়ে গেছে। অনুপযোগী হয়ে পড়েছে যানবাহন চলাচল। সাতক্ষীরার সবচেয়ে ব্যস্ততম সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ মহা সড়কের জেলা শহরের ইটাগাছা-বাঁকাল এলাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নতুন সড়ক নির্মাণের পর জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বেহাল দশা দেখে পথচারিরা হতবাক হয়ে পড়েছে। আর এই সড়ক নির্মান কাজের ঠিকাদার স্বনামে, বেনামে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ তিন নেতা বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের জেলা শহরের ইটাগাছা থেকে বাঁকাল পর্যন্ত এক দশমিক ৮০০ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় নতুন করে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৪৫০ মিটার দৈঘ্যের চার গ্রুপে বিভক্ত (প্রত্যেক গ্রুপে ৪৫০ মিটার করে ) এ কাজের প্রতিটি খন্ডের জন্য প্রক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৯২ লাখ টাকা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব কাজের জন্য গত ১২ অক্টোবর টেন্ডার আহবান করা হয়। ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় টেন্ডার। টেন্ডারে কাজ পান যশোরের চিত্রা কনস্ট্রাকসন, সাতক্ষীরার বসু ট্রের্ডাস, মিজান এন্টারপ্রাইজ ও মের্সাস আনসার আলী কন্সট্রেকশন ফার্ম। কাজ শেষ করার ৬০ দিনের সময় দিয়ে ডিসেম্বর মাসে কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) দেয়া হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্য সহকারী নূরুল আমিন জানান, বসু ট্রেডার্সের কাজ বেনামে বাস্তবায়ন করেছেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, মিজান ইন্টারপ্রাইজের কাজ বেনামে বাস্তবায়ন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য সম্পাদক ও আশাশুনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম। মের্সাস আনসার আলী কন্সট্রেকশনের পক্ষে বাবু পাটোয়ারী কাজ করেছেন।
৬০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার করার কথা থাকলেও কাজ শুরু করা হয় জানুয়ারি মাসে। কাজ শেষ করা হয় মে মাসের প্রথমে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্র তিন মাস আগে কাজ শেষ হওয়া ইটাগাছা ও বাঁকাল এলাকার জেলার ব্যস্ততম এ সড়কের একাধিক স্থানে পাথর ওঠে খানাকন্দে পরিনত হয়েছে। অনেক স্থানে বসে গেছে। আবার অনেক স্থানে উচ্চু নিচু হয়ে সড়কটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। কয়েকটি স্থান থেকে পাথর তুলে ফেলা হচ্ছে শ্রমিক দিয়ে। আবার কোথাও নতুন করে পিচ আর পাথর দিয়ে লেপন দেয়া হচ্ছে।
অভিযোগ, সড়ক নির্মাণ করার সময় প্রথমে যে বালি দেওয়া হয়েছে তা স্থানীয় কাদা মিশ্রিত। সাব বেজ (ভীত) যথাযথভাবে করা হয়নি, মেকাডাম ও কার্পেটিংও করা হয়নি যথাযথভাবে। পিচের পরিমাণ কম দেওয়া হয়েছে। আলকাতরার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে পোড়া মবিল। ফলে সড়কের কোথাও বসে আবার কোথাও পাথর ওঠে চষের মাঠের মতো হয়ে গেছে।
এ সড়কে দাঁড়িয়ে কথা হয় বাস চালক আব্দুর রহমান, পিক আপ চালক মোমিনুর রহমান, মটর সাইকেল চালক হোসেন আলীর সঙ্গে।
তারা বলেন, এভাবে চলতে পারে না। প্রায় এক বছর সীমাহীন অসুবিধার মধ্যে চলতে হয়েছে। মাত্র তিন মাসও কাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে সড়ক আবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সড়ক থেকে পাথর তুলে ফেলার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক আলতাফ মোল্যা ও নাজির মন্ডল জানান, ঠিকাদাররা কাজ ঠিক মতো না করলে তো এমন হবেই। ঠিক মতো পিচ দেয়নি। বালির স্থলে দিয়েছে মাটি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
বসু টের্ডাসের মালিক কল্যাণ বসু সড়ক বসে যাওয়ায় চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে স্বীকার করে বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরবরাহকৃত বালি খোয়া দিয়ে প্রথমে ভীত (সাব টাইপ ওয়ান) করা হয়েছে তা দূর্বল হয়েছে। বালি ও খোয় ভালো না থাকার পরও তা দিয়ে তাদেরকে কাজ করানো হয়েছে। যে কারণে সড়ক বসে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তারা কাজ করার সময়ে প্রকৌশলী আলী নূল আহম্মেদ ও জাহাঙ্গীর আলম তদরকিতে ছিলেন। কাজ নষ্ট হলে দায় দায়িত্ব তাদের ওপরও পড়ে।
যশোর চিত্রা কন্সট্রেকশনের শ্রমিক সরদার আবুল কাসেম জানান, ২০ টনের স্থলে ৪০-৫০ টনের দশ চাকার গাড়ি চললে সড়ক থাকবে কি করে। এ জন্য সড়ক বসে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মনিরুজ্জামান কাজের মান ভালো হয়েছে দাবি করে বলেন, বৃষ্টি ও মাটির সমস্যার কারণে অনেক সময় এ ধরণের সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলেন ইতিমধ্যে নষ্ট কাজ মেরামত করার পর সমস্যা অনেকটা দূর হয়েছে। অন্যদেরও রাস্তা মেরামত করে দিতে বলা হয়েছে। রোদ না হলে সম্পূর্ণ মেরামত সম্ভব হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।