দাদন ব্যবসার জালে যুগ যুগ ধরে এদেশবাসী শোষিত হচ্ছে!
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ এতোদিন শোনা যেত চরাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকায় দরিদ্ররা দাদন ব্যবসার মহাজনি শোষণের শিকার। বর্তমানে জানা যাচ্ছে, দেশের পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পেশাজীবীরাও দাদনের জালে জড়িয়ে পড়েছে। কক্সবাজার, টেকনাফ, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির পান চাষ, শুঁটকি, পর্যটন, বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, বিভিন্ন আচার এবং মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা মহাজনি দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে বাঁধা পড়েছে। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তারা এদের হাত থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি পার্বত্য অঞ্চলে দাদন ব্যবসার এ চিত্র পাওয়া গেছে এক প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) উদ্যোগে কক্সবাজার ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ পার্বত্য অঞ্চলের এসএমই প্রকল্পের অগ্রগতির মূল্যায়ন ও ক্লাস্টারের সম্ভাবনা নিয়ে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে কুতুবদিয়ার নাজিরহাটে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি মহালের ওপর জরিপ করে দেখা গেছে, এখানকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারের দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। এ কারণে শুঁটকি বিক্রির ব্যাপারে তারা আড়তদারদের নির্ধারিত মূল্যের বাইরে যেতে পারে না। ফলে যে ব্যবসায়ীর ৮০ শতাংশ মুনাফা হওয়ার কথা, দাদন ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে মুনাফা ১০ শতাংশও হয় না। ফলে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বছরের পর বছর। কক্সবাজারের পান ব্যবসায়ীরাও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে পান চাষ করছেন। তাদের অভিযোগ, শ্রমিকদের মজুরি, উৎপাদন খরচ মিটিয়ে, দাদনের টাকা শোধ করে পান বিক্রির যে পরিমাণ টাকা তাদের হাতে আসে তা খুবই অল্প। এভাবে প্রায় প্রতিটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা দাদন গ্রহণ করে সবশেষে তা মেটাতে গিয়ে লাভের অংশ খোয়াচ্ছেন। কার্যত দাদনের হাত থেকে তাদের রেহাইও নেই। এ ধরনের উদ্যোক্তাদের জন্য নেই ব্যাংক ঋণের সুবিধা। শুধু একটি ব্যাংকের ঋণ প্রদানের কথা জানা যায়; কিন্তু তা খুবই স্বল্প পরিমাণে। এই ব্যাংকেও ঋণের বিপরীতে অগ্রিম চেকসহ দুইজন গ্যারান্টারের জামানত গ্রহণ করে, যা সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। নাসিব অবশ্য এই নিয়ে একটি প্রস্তাব রেখেছে। প্রস্তাবটি হচ্ছে, নাসিবের তত্ত্বাবধানে শুঁটকি মহালে আড়ত স্থাপন, মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা এবং তাদের মাধ্যমে জামানত প্রদান ও ঋণ গ্রহণ করে তা শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মাঝে বিতরণ করা। ব্যাংকের ঋণও শোধ করার দায়িত্ব নাসিবের থাকবে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএসআর ফান্ড থেকে প্রণোদনা দিয়েও ব্যবসায়ীদের সহায়তা করা যেতে পারে। এখন এসব প্রস্তাব বিবেচনা সাপেক্ষ।
দাদন ব্যবসার জালে যুগ যুগ ধরে এদেশবাসী শোষিত হয়েছে। ঋণ করে ব্যবসা করা_ বিশেষ করে উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে বড় অঙ্কের মুনাফা করা সম্ভব নয়, তা ভুক্তভোগীরা ভালো জানেন। ঋণ ও উচ্চসুদের ব্যবসা করছে কিছু এনজিও। তাদের কাছ থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা এগুতে পারছেন না। অনেকে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। কাজেই পার্বত্য অঞ্চলে দাদন ব্যবসা বন্ধ করে সরকারের উচিত বিকল্প ব্যবস্থায় তাদের বিনাসুদে অথবা স্বল্পসুদে ঋণদানের কর্মসূচি গ্রহণ করা।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।
jsb.shuvo@gmail.com