বাগাড়ম্বর নয়, প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ!
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ রেলের ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ছে ১ অক্টোবর থেকে। প্রধানমন্ত্রী রেলের যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির এ প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। দেড় যুগেরও অধিক সময়ের পর রেলওয়ে ভাড়া বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। বর্তমানে যাত্রীপিছু প্রতিকিলোমিটারে ভাড়া হচ্ছে ২৪ পয়সা। বৃদ্ধির পর এই ভাড়া দাঁড়াবে ৩৬ পয়সায়। কম দূরত্বে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে বেশি দূরত্বের তুলনায় কিছু বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। রেলমন্ত্রী বলেছেন, দুই বছরের মধ্যে রেলওয়েকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে!
উল্লেখ্য, রেলে সর্বশেষ ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ১৯৯২ সালে। বর্তমান সরকার আমলে ৪ বার ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল; কিন্তু প্রস্তাব অনুমোদন পায়নি সরকারের। গত বছর নভেম্বরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে রেলওয়ে আলাদা করে পৃথক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া হয়। উল্লেখ্য, রেলওয়ে একটি লোকসানী খাত। বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয় রেলকে। ১৯৯২ সালে নতুন ভাড়ার হার ধার্য হওয়ার পর জ্বালানির মূল্য বেড়েছে ৪২০ শতাংশ, খুচরা যন্ত্রাংশের মূল্য বেড়েছে ৩৬০ শতাংশ। তাতে প্রতি বছরই রেলের লোকসান বেড়েছে। প্রস্তাবিত নতুন ভাড়ার হার কার্যকর হলেও রেলের লোকসান থেকেই যাবে। নতুন ভাড়ার হার কার্যকর হলে বছরে ২৭৭ কোটি টাকা আয় হবে ধারণা করা হচ্ছে। এরপরও রেলকে বছরে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। অবশ্য রেলমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আগামী দুই বছরে রেলওয়েকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে। ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব এবং রেলমন্ত্রীর আশাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে যাত্রীসেবার মান বাড়বে কি-না। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে রেলওয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন বরাবরের। যাত্রীদের চাহিদা পূরণে যথোপযুক্ত সেবা দিতে পারছে না রেল। ইঞ্জিন ও বগির স্বল্পতা রেলের সেবা সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। ইঞ্জিনগুলোর আয়ুনাশ রেলের গতি কমিয়ে দিয়েছে। অনেক ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। বগির অবস্থাও নাজুক। রেলপথের অবস্থা আরো নাজুক। যে কারণে ট্রেনগুলো পূর্ণ গতিতে চলতে পারে না। বগির দরজা-জানালা ভাঙাচোরা, বগির টয়লেটগুলোর দরজা আটকানোর উপায় থাকে না। টয়লেটে পানি থাকে না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না। বগির পাখা ঘুরে না, রাতে বাতি থাকে না। অন্যদিকে রেলের জমি বেহাত, বেদখল থেকে উদ্ধার করার, উদ্ধার করে জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার করে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ-প্রচেষ্টা নেই বললেই চলে। রেলের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে অধিকসংখ্যক যাত্রীকে যাতায়াত সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেই। আবার রেল হচ্ছে দুর্নীতির আখড়া, রেলওয়ের খবরা খবরেই তা স্পষ্ট।
ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। প্রস্তাবের সমালোচনা-বিরোধিতা হচ্ছে যাত্রীমহল থেকে, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে। প্রায় ২০ বছর পর রেলওয়ে ভাড়া বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। বাস্তবতার আলোকে একে অযৌক্তিক বলা যায় না বটে; কিন্তু বর্তমান সেবার মান বিচারে, শুধু জ্বালানি, যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে ভাড়া বৃদ্ধি মেনে নিতে যাত্রীদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ পাবেই। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে যাত্রীদের ক্ষুব্ধতা কাটতে পারে সেবার মান উন্নত করে। লক্ষ্যণীয়, ৫০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়েও রেলের লোকসান বন্ধ করা যাচ্ছে না, শতভাগ বাড়ালেও যাবে না। সেক্ষেত্রে লোকসান বন্ধের ভিন্ন পথ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে দুর্নীতি, রেলওয়ের স্থাবর সম্পত্তি তথা বেদখলে যাওয়া জমি উদ্ধার করে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার করে আয় বৃদ্ধির পথ বাড়াতে হবে।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ 24 ডট কম।