নারী-পুরুষ বনাম মানুষ
ছোট বেলায় সবাই বলতেন মানুষ হও
বড় বেলায় এসে এখন স্ত্রী থাকলে নিশ্চয় বলতেন (Be a man) পুরুষ হও। আমি তবে কি হয়েছি এখন?
পুরুষ কি মানুষ নয়? তাকে কি লিঙ্গবোধ বিসর্জন
দিতে হবে মানুষ হতে চাইলে? নারী কি তার লিঙ্গবোধ নিয়ে মানুষ নয়? তাকেও কি আলাদা ভাবে তার লিঙ্গানুভবের খানিকটা কেটে বিসর্জন দিয়ে মানুষ হতে হবে? এইসব কথা শুনতে শুনতে এখন ক্লীবলিঙ্গ হয়ে যাচ্ছি বোধ করি।
মানুষ আমাদের পশু বা প্রাণীপ্রজাতির নামপরিচয়। যারা মোটামুটি ভাবে দুই লিঙ্গের শ্রেনীতে বিভিক্ত অন্য সকল বন্য পশুদের মতই।
বিভাজিত লিঙ্গের মনস্তত্ব, শরীরগঠন, ভাবনা স্বতন্ত্র। একজন নারীর বা পুরুষের ভাবনা জগতে কিছু সাধারণ ঐক্য থাকলেও ভিন্নতাই বেশী। এই ভিন্নতা বা বিপরীত অবস্থানই দুজনকে মিলিত ভাবে একটা “সমগ্রতা” বা পরিপূর্ণ “মানব” বোধ প্রদান করে। এই বিপরীত বোধই দুজনকে কাছে টানে। নারী–নারীকে নয় পুরুষকেই চায়–তেমনি পুরুষও নারীকেই চায়—তাদের দুজনের দখলে দুই যন্ত্রাংশ —যা এসেম্বল্ড না হলে দুজনেই অসম্পূর্ণ।
বায়োলজিক্যাল সত্য হল—পুরুষ যত ধরণের শুদ্ধি প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়েই যাক না কেন সে তার স্বভাব বা প্রকৃতিতে অবশ্যই সব সময় শতভাগ পুরুষ এবং নারীও অনুরূপ শতভাগ নারী। আমি এই আচরণে কোন সমস্যা দেখিনা। নারী তার স্বভাব এবং লালিত্য নিয়ে নারীসুলভ এবং এভাবেই তাকে আমার পছন্দ। পুরুষকেও তাই।
নারীবাদীরা সব সময় পুরুষকে মানুষ হতে বলেন। সাথে কিছু পুরুষও তাদের সাথে গলা মিলিয়ে বলেন আসুন আমরা পুরুষ না হয়ে মানুষ হই। আরে বাবা মানুষ হলে কি আমার পুংলিঙ্গ কেটে ফেলে দিতে হবে? এটা আমার কাছে খুবই হাস্যকর মনে হয়। তাহলে কি পুরুষ বৈশিষ্টগুলো খারাপ বা বিধ্বংসী কিছু? প্রকৃতি কি আমাদেরকে ভুল মেশিনপত্র দিয়েছে যা নারীকে শংকিত করে?
আমি তা মনে করিনা। আমি বরং বলি আমি পুরুষ এই সত্য এবং এই পুরুষালী বৈশিষ্ট শুধু আমার কেন? কোনো পুরুষের পক্ষেই ত্যাগ করা সম্ভব নয় নাটকের মঞ্চ ছাড়া—নারীও তাই। তাহলে কি আমরা মানুষ হবার একটা ভুয়া আদর্শ নিয়ে চাপাবাজী করছিনা?
আমি বরং বলতে চাই—একজন সুসভ্য এবং উন্নত পুরুষই যথার্থ মানুষ–তেমনি ভাবে একজন সুসভ্য নারী এবং উন্নত দৃষ্টিভঙ্গীর নারীই প্রকৃত সুন্দর মানুষ। মানুষ হবার জন্য নারী বা পুরুষকে তার বৈশিষ্ট ত্যাগ নয় কেবল কিছু শিক্ষা, এবং সভ্যতার দরকার।
আবারও বলি–একজন সুসভ্য পুরুষই উন্নত মানুষ—একজন সুসভ্য নারীও তেমনি উন্নত মানুষ। আসুন ভ্রান্তি থেকে বের হই—
নর এবং নারী–তার আপন বৈশিষ্ট নিয়ে শুদ্ধ মানুষ। কিছু বুনোপনা থাকলে আসুন সেগুলো শুধরে নিয়ে আমরা উন্নত নারী এবং উন্নত পুরুষ হই। তাহলেই আমরা সবাই উন্নত মানুষ।
লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক।।