যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন দক্ষ ব্যবস্থাপনা
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ ঘণ্টা বাণিজ্যিক সময় (বিজনেস আওয়ার) নষ্ট হচ্ছে। শুধু সময় নষ্টই নয়, নষ্ট সময়ের আর্থিক ক্ষতিও নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ক্ষেপণের জন্য বছরে যাত্রীরা ১২ হাজার কোটি টাকা, শিল্প, ব্যবসা ও রফতানি বাণিজ্য ৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি পোহাচ্ছে। পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার। এছাড়া, জালানি দুর্ঘটনা, মেডিকেলসহ বিভিন্ন খাতেও ব্যাপক অর্থ অপচয় হচ্ছে। এদেশ শত সমস্যায় আকীর্ণ। এর মধ্যে যানজট হচ্ছে গোদের উপর বিষফোঁড়ার ন্যায়। রাজধানী ঢাকায় সকাল, দুপুর, সন্ধ্যায় রাস্তায় দীর্ঘ যানজট পড়ে। ১ ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করতে দু-তিন ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হয়। কোনো মানুষের কর্মঘণ্টা যদি ছয় ঘণ্টার হয়ে থাকে তাহলে তার আসা-যাওয়ার জন্য সময়ের আগে-পিছে আরো চার ঘণ্টা যোগ করতে হয়। কোনো কোনো সময় এরও বেশি সময় লাগে যায়। রাস্তায় স্থবির যানবাহনে বসে তখন হাপিত্যেশ করা ছাড়া উপায় থাকে না। দিন যত যাচ্ছে সমস্যা ততই বাড়ছে। রাস্তায় ডিভাইডার দিয়ে, স্থানে স্থানে রিকশা আটকে দিয়ে এবং আরো নানা প্রকার কায়দা-কানুন করে যানজট কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। তাতেও কিছুই হয় না। রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা, লেবেল ক্রসিং, মার্কেট, স্কুল-কলেজের সামনের রাস্তা এবং বড় রাস্তায় বড় বড় যানবাহন, প্রাইভেট কার সংখ্যায় এত বেশি চলাচল করে যে, তাতে রাস্তায় বিশাল যানজট তৈরি হয়। এই যানজটে পড়ে ব্যবসায়ী, অফিসযাত্রী, স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে।
ঢাকা যেহেতু রাজধানী সেহেতু এর গুরুত্ব সবদিক দিয়েই বেশি। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্য, লেনদেন ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঢাকার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে সময়ের মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাতায়াত সহজ, স্বাভাবিক হলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতিপ্রবাহ ঠিক থাকে। বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। উল্লেখ্য, এক তথ্যে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দেশের জিডিপিতে প্রায় ৩৫ শতাংশ অবদান রাখে। ঢাকার যানজট নিরসন করা সম্ভব হলে তা প্রায় আড়াইগুণ বৃদ্ধি পাবে। এই সম্ভাবনা সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রতিবার নতুন সরকার এলে ঢাকার যানজট নিরসনে নতুন নতুন পরিকল্পনা গৃহীত হয়। কিন্তু পরবর্তী সরকার এসে এর অধিকাংশ বাতিল করে আবার নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে গড়িমসি হয়। এভাবে পাকচক্রে হারিয়ে যায় যানজট নিরসনের ভাবনা-চিন্তা। ফ্লাইওভার, মনোরেল, নৌপথ ইত্যাদি অনেক পরিকল্পনার কথা জানা গেছে, যা যানজট নিরসন করবে বলে আশা করা গিয়েছিল। ফ্লাইওভারও হয়েছে, কিছু হচ্ছে। যে ফ্লাইওভার হয়েছে তা ভুল জায়গায় না সঠিক জায়গায় হয়েছে সেটিও এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ওতেও যানজটের সুরাহা হয়নি। আরো যেগুলো হচ্ছে, সেগুলোর কাজ সিংহভাগই বাকি। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজ দ্রুত না হওয়ায় ওই এলাকায় যাতায়াত পথে ভয়াবহ নাকাল হতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পাতাল রেল যানজট নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এ ধরনের পরিকল্পনার কথাও এক দশক ধরে আমরা শুনে যাচ্ছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাতালরেল ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে ভারত বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের যাতায়াত ব্যবস্থা আমাদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়াতে হলে বিদেশ থেকেই আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম