মাসে একদিন প্রাইভেট কার চলাচল বন্ধ রাখার দাবী
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ঢাকা শহরে পাবলিক বাস, রিকশা, হাঁটা, সাইকেল ও অন্যান্য মাধ্যমে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ প্রাইভেট কার ক্রয় এবং ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। যা যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। বর্তমানে ঢাকায় প্রাইভেট কারে মাত্র পাঁচ শতাংশ চলাচল সংঘটিত হয়ে থাকে এবং রাসত্মার সত্তর শতাংশ ব্যবহার করে। তাই যানজট হ্রাসে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। এজন্য গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আজ বিশ্ব কারমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ) এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনের উন্নয়নের দাবীতে আয়োজিত বিশেষ কর্মসূচিতে বক্তারা একথা বলেন।
দিবসটি উপলক্ষে শাহবাগ যাদুঘরের সামনের সড়কে এক ঘন্টার জন্য গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে স্কেটিং, ফুটবল, ক্রিকেট ও ফ্রিজবি খেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া প্রতীকীভাবে বাস ও কারের মধ্যে যাত্রী পরিবহন ও জায়গা দখলের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। কর্মসূচি থেকে বক্তারা বলেন, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে প্রাইভেট কারের ব্যবহার যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ঢাকা মেট্রেপলিটন এলাকায় প্রাইভেট কারে মাত্র ৩.৮ শতাংশ চলাচল হয় কিন্তু সড়ক পথের প্রায় ৭০ভাগ স্থান দখল করে রাখছে। অথচ বাস, রিকশা, সাইকেল ও হেঁটে ৯৬.২ শতাংশ যাতায়াত হলেও মাত্র ৩০ভাগ সড়ক ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। যা যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভারসাম্য নষ্ট করছে। এছাড়া সড়কে পার্কিং এর জন্যও প্রাইভেট কার প্রাধান্য পাচ্ছে।
নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ) এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা এর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ (নাসফ) এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কামাল আতাউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য হূমায়ন কবীর, পীস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, রিকশা চালিয়ে ময়মনসিংহে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাকারী জয়নাল আবেদীন এবং শিখা ভূইয়া প্রমূখ।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মারুফ রহমান বলেন, ঢাকা শহরে পঁচানববই শতাংশ চলাচল হয় পাবলিক বাস, রিকশা, হাঁটা, সাইকেল ও অন্যান্য মাধ্যমে। অথচ এ সকল মাধ্যমে চলাচলের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। এর বিপরীতে প্রাইভেট কারের জন্য অবাধ লাইসেন্স প্রদান, বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে প্রাইভেট কারের পার্কিং সুবিধা, কার লোনসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা থাকায় মানুষ প্রাইভেট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরী। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর হাফিজুর রহমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও অন্যান্য প্রাইভেট কারবান্ধব অবকাঠোমোর পরিবর্তে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন বিশেষ করে সাইকেলে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির আহবান জানান। তিনি জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি না করে প্রাইভেট কারে ব্যবহারের জন্য জ্বালানীর উপর অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ এবং পাবলিক বাস ও গণপরিবহন হিসেবে স্বীকৃত যানবাহনের জন্য জ্বালানী মূল্য না বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
শিক্ষাবিদ কামাল আতাউর রহমান বলেন, যানজট, দূষণ, জ্বালানী নির্ভরতা হ্রাসে মাসে একদিন প্রাইভেট কার চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, কলম্বিয়ার বোগোটাসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরেই এই ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। তিনি বলেন, জ্বালানী সঙ্কট আমাদের জন্য বড় একটি মাথা ব্যাথার কারণ। অথচ প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকায় আমদানীকৃত জ্বালানাী ও দেশের অভ্যমত্মর থেকে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এই প্রাইভেট কার চালানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজেই এখনই সময় প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রন করা। পিস এ মহাসচিব ইফমা হোসেন বলেন, অল্প জায়গায় বেশি যাত্রী পরিবহণ করা যায় সেই ধরনের বাহন ঢাকার জন্য উপযোগী। একটি বাসের যাত্রী পরিবহন করতে ত্রিশটি প্রাইভেট কার প্রয়োজন পড়ছে। তাই বাস সার্ভিসের মানোন্নয়ন ও প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে করা প্রয়োজন। সাবেক সংসদ সদস্য হূমায়ন কবীর প্রইভেট কার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বাস, হাঁটা, সাইকেল ও রিকশার সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকার সর্বত্র বাসে চলাচলের ব্যবস্থা করার কথা বলেন।