দ্রব্যমূল্যের কৃত্রিম সংকট রোধ করা অতি জরুরি
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এখনই ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে গিয়ে গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মাথা যেন খারাপ হওয়ার অবস্থা। রমজান ও ঈদুল ফিতরের আগে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সরকারি ঘোষণা এবং ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতিতে অনেকটা নিয়ন্ত্রিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মূল্যবৃদ্ধি অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া কিছুই না। খবরে প্রকাশ, রোজা ও ঈদের পর বাজার অস্থির করছে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। বাজার নিয়ন্ত্রণ আইন ও আদেশ অমান্য করে কিছু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে ভোক্তাদের কষ্ট দিচ্ছে। মসুর ডালের মূল্যবৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে ডালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করা হচ্ছে। রমজানের আগে থেকেই সরকার বলছে_ চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট মজুদ আছে, সংকট সৃষ্টি হবে না। ব্যবসায়ীরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অতিরিক্ত মুনাফা করবেন না। কিন্তু রমজানের সংযম শেষ হতে না হতেই মূল্য কিন্তু ঠিকই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ বাজারমূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থা, অধিদফতর ও অনুবিভাগকে সমন্বিত পরিকল্পনাভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। এসব কর্মপরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে_ টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি, বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং টিম, চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগ, বন্দরে সতর্কতা, গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি, মুনাফার কোটা নির্ধারণসহ আরো নানা প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ। নিত্যপণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে সারা দেশের মাঠ প্রশাসনের কাছেও বার্তা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অথচ মনে হচ্ছে কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো হচ্ছে_ চাহিদা ও জোগানের মধ্যে অসমতা, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, মজুদদারি ও অতি মুনাফা, বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কম থাকা বা কোথাও কোথাও একেবারে না থাকা। সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ও পরিবেশক প্রথার জটিলতাও মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অসমতা বিদ্যমান রয়েছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কিছুদিন থেকে মসুর ডালের মূল্য স্থিতিশীল আছে এবং এর আমদানি স্বাভাবিক থাকায় দেশে এর মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। তা সত্ত্বেও কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে মূল্যবৃদ্ধির অপচেষ্টা করছে। নিত্যপণ্যমূল্য প্রতিদিনই বাড়তির দিকে। বিশেষ করে বাড়ছেই সবজির দাম। সেই সঙ্গে ডিম ও ডালের দামও হয়েছে যুক্ত। গত সপ্তাহ থেকে এ সপ্তাহে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। জানা গেছে, বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানো হচ্ছে। ওদিকে এসব অনিয়ম ধরতে ১৪টি বাজার মনিটরিং টিম গঠন করা হলেও লোকবলের অভাবে তা কার্যকর ভূমিকা নিয়ে পারছে না। রাজধানীজুড়ে এই টিমগুলোর কর্মকা- নির্ধারণ করা হয়, তবে টিমের সদস্য কোটা পূরণের জন্য বিভিন্ন দফতরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েও তাতে সাড়া মিলছে না। ফলে বাজার মনিটরিং জোরদার হচ্ছে না। এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে চলেছে একশ্রেণীর সিন্ডিকেট। কিন্তু আমরা আশাকরি তালিকাভুক্ত সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিবিড় পরিবীক্ষণ এবং মনিটরিং খুবই জরুরি। বিশেষ করে ঈদুল আজহার আগে যাতে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকে সে লক্ষ্যে কৃত্রিম সংকট রোধ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোনো ধরনের কারসাজি রোধ, সিন্ডিকেট ভাঙতে মনিটরিং করতে হবে জোরালোভাবে।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।