একটি রায়, একটি সাহস, একটি বিশ্বাস
লায়ন মোমিন মেহেদীঃ সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতি হত্যা মামলায় দু’জনের মৃত্যুদন্ড। এমন একটি সংবাদ সাংবাদিকদের জন্য যতটা না দুঃখবোধ কমার; ততটাই সচেতন হওয়ার-সচেতন করার এবং সোচ্চার হওয়ার। কেননা, সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতির পরপরই হারিয়েছিলাম আরেক সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে।
সেই হত্যাকান্ডকে এখনো চেষ্টা করা হচ্ছে একটি অন্যধারায় বইয়ে দেয়ার। যে ধারার ধারে কাছেও ছিলো না সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের রহস্যময় অতিত। সেখানে একবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঘাতকদেরকে গ্রেফতার করার কথা। আজ দীর্ঘদিন পর সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়েরই নতুন মন্ত্রী এবং কলামিস্ট ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর বললেন, নিতাই এবং সাগর-রুনির ঘাতক একই চক্র। যার কোন ভিত্তি নেই। নেই কোন রকম মিল। আমরা একটু পেছনে ফিরে গেলে দেখবো যে, ইতিহাস বলছে সাগর-রুনি সংবাদ সংক্রান্ত কারনেই হত্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানে নতুন আলোয় সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে বাংলাদেশের সকল সাংবাদিককে। তা না হলে হয়তো আবারো ঘটতে পারে সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ অথবা সাংবাদিক সাগর-রুনিসহ সংবাদ জগতের অনেক কর্মীর নির্মম মৃত্যুর মত বেদনাদায়ক ঘটনার বলি। যা আমাদের কারোই কাম্য নয়।
যেহেতু কাম্য নয় মৃত্যু; সেহেতু সোচ্চার হতে হবে বাংলাদেশের সকল সাংবাদিককে। যাতে করে কোন ঘাতক হামলা করার আগে একবার হলেও ভাবে তার করুণ সাজার কথা। যে সাজা দেয়া হয়নি সাংবাদিক দস্পতি ফরহাদ খাঁ’র ঘাতকদেরকে। অথচ আমরা বেদনাহত দৃষ্টিতে দেখেছি পত্রিকার পাতায় উঠে আসা সংবাদ। সেখানে এক সাংবাদিক লিখেছেন আরেক সাংবাদিকের বেদনার্ত খুনের ঘটনা। লিখেছেন- একজন সাংবাদিককে রাতের গভীরে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার কাহিনী।
গত বছরের ২৮ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর ৭৭, নয়াপল্টনের বাসার ২য় তলার বেডরুম থেকে সাংবাদিক ফরহাদ খান ও তার স্ত্রী রাহিমা খানমের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খুনির গলাকেটে হত্যা করার পর এভাবেই সাংবাদিক ফরহাদ খাঁর স্ত্রী রহিমা খানমের নিথর দেহ পড়ে ছিল খাটের উপর।
নিহত ফরহাদ খাঁ ছিলেন একজন সুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। তিনি দৈনিক জনতার জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওই দিনই ফরহাদ খানের ছোট ভাই আব্দুস সামাদ খান বাদী হয়ে আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পরই আসামি ইয়নকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তি মতে আসামি রাজুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাজু ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন। এর পরপরই আসামিদের স্বীকারোক্তি মতে সাংবাদিক ফরহাদ খাঁর ব্যবহৃত মোবাইল সেট, চুরি করা টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, রক্তমাখা জামাকাপড় ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু দুটি উদ্ধার করা হয়। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। সেই চার্জশিটের ৪৯ জন সাক্ষীর মধ্যে মোট ৩৩ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান জানান, আসামিরা মামলার শুরু থেকেই কারাগারে আটক আছেন।
নিহত সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতির একমাত্র সন্তান ইতালী প্রবাসী আইরিন পারভীন খান সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন যে, রায়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি। এখন রায় কাযকরের অপেক্ষায় আছি। আমরাও আশায় আছি আইরিন-এর মত করে। কেননা, এই রায় বাস্তবায়ন হলে প্রমাণিত হবে যে, হত্যাকারীদের বিচার বাংলার মাটিতে হওয়া অসম্ভব নয়। আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর হত্যাকারীদের বিচার দেখেছি প্রায় ৩ যুগ পার হয়ে এসে। সেই বিচার যেহেতু বাস্তবায়ন হয়েছে, সেহেতু বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশের সাহসী সাংবাদিকদের হত্যারীদের বিচারও। এমন প্রত্যয় আমাদের মনের ঘরে লালিত হচ্ছে সাংবাদিক দম্পতি ফরহাদ খাঁ হত্যাকান্ডের ঘাতকদের বিচারের রায়ের পর।
আমার মতে তৈরি হতে হবে বাংলাদেশের সকল সাংবাদিক-রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিবর্গকে প্রকৃত খুনিদের বিচারের পাশাপাশি সবসময় সচেতনতার সাথে চলার জন্য। যাতে আমাদের মধ্যে আর কাউকে হতে না হয় সাংবাদিক শামছুর রহমান, হুমায়ুন কবির বালু, এএসএম কিবরিয়া অথবা সাগর-রুনি।
আর তাই তিলতিল করে গড়ে তোলা এই দেশে খুনিদের বিচারটাও যেন বাস্তবায়ন হয় দ্রুত। তাতে খুনি চক্র খুুন করার এ্ প্রবণতা থেকে বিরত থাকবে। আমরা দেখেছি যে, রাজনৈতিক খুন পৌর মেয়র লোকমানকে হত্যার পর খুনীরা এখানো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই বর্তমানের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদেরকে। আমাদের সমাজে যুদ্ধ নয়; শান্তির চাষাবাদ হোক…
লায়ন মোমিন মেহেদী : রাজনীতিক ও কলামিস্ট