অরক্ষিত উপকূলীয়বাসী
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এদেশে সচেতনতার অভাব, অপর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার ও বেড়িবাঁধের অভাবে উপকূলীয় এলাকার লোকজন অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই সঠিকভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস না পাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। সব মিলিয়ে প্রতি বছর প্রাণহানির সংখ্যা অনেক।
গত ১০ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় কয়েকটি জেলায় ২৫ জনেরও বেশি জেলে মারা যান। আহত ও নিখোঁজ হন অনেকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এদেশে এর আগেও সিডর, আইলায় উপকূলীয় এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
কিন্তু এরপরও এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলবাসীর কোনো প্রস্তুতি নেই। পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নেই। যেগুলো আছে সংস্কারের অভাবে সেগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী।
বেশিরভাগ সময়েই আগে থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস না পাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বলে অভিযোগ উপকূলীয় এলাকার মানুষের। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন কক্সবাজারের ত্রাণ ও পুণর্বাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় ২ যুগের কাছাকাছি সময়েও অনুরূপভাবে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ে অবর্ণনীয়ভাবে নানান ক্ষয়ক্ষতির শিকারে এলাকাবাসী আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে অনাহারে- অর্ধাহারে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাস্তুভিটিহারা হাজার হাজার নিঃস্ব পরিবার বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করছে। বিশেষ করে প্রেমাশিয়া গ্রামের মৌলবীপাড়া, সুন্দরীপাড়া, উত্তর প্রেমাশিয়া ও দক্ষিণ প্রেমাশিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়দ্বয় ও তৎসংলগ্ন সাইক্লোন শেল্টারদ্বয় অব্যাহত নদী ভাঙনের হুমকীর সম্মুখীন। এলাকাটি ১৯৭৪ সাল হতে অযোগ্য জনপ্রতিনিধির ভুল সিদ্ধান্তের ফলে পাউবো উত্তর প্রেমাশিয়াকে বাঁধের বাইরে রাখায় তা হয় আরো বেশি হুমকীর সম্মুখীন। অত্র এলাকাটিকে পাউবোর আওতায় এনে জনস্বার্থে টেকসই বাঁধ নির্মাণ অপরিহার্য্য। হয়ত অব্যাহত ভাঙনের ফলে অচিরেই এ সমস্ত লোকালয় ও সরকারি অবকাঠামো/ স্থাপনাসমূহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তারা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মৃত্যু কবুল করে বসবাস করছেন। এ বেড়িবাঁধটি এলাকাবাসীর জন্য মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ সদর, সাবরাং ও পৌরসভার প্রায় ৬৫ কিলোমিটার বাঁধের বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। পাশাপাশি এক হাজার ৩০০ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের আড়াই নম্বর স্লুইসগেট ও শাহপরীর দ্বীপের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
পাউবোর টেকনাফ কার্যালয় সূত্র জানায়, আইলায় এই এলাকায় পানির উচ্চতা ৩ দশমিক ৪ মিটার পর্যন্ত বেড়েছিল। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় গিরির সময় জোয়ারের উচ্চতা আইলাকেও ছাড়িয়ে যায়। এ সময় পানি ৩ দশমিক ৬ মিটার পর্যন্ত বাড়ে। ঘূর্ণিঝড় গিরির প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। এ ছাড়া প্রতি পূর্ণিমা ও অম্যাবস্যার জোয়ারে এলাকার অধিকাংশ ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিংড়িঘের, রাস্তাঘাট ও ফসল নষ্ট হচ্ছে।
পাউবো সূত্র জানায়, টেকনাফ উপকূলের ৬৮ নম্বর ফোল্ডারের শাহপরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধ সংস্কারে ২০০৮ সালে চার কোটি ৪২ লাখ, ২০১০ সালে এক কোটি ৭৫ লাখ, ২০১১ সালে সাত কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। টেকনাফ সদরের ৬৮ নম্বর ফোল্ডারের আড়াই নম্বর স্লুইসগেট এলাকার ভাঙা বেড়িবাঁধের জন্য ২০০৮ সালে ২৮ লাখ, ২০০৯ সালে ২৪ লাখ, ২০১০ সালে ২০ লাখ, ২০১১ সালে ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু তার পরও প্রতিবছর সাগর ও নদীর ঢেউয়ে এসব এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।