প্রযুক্তির আশীর্বাদঃ যে কোন চোর ধরা সম্ভব!
জাহিদ হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ মোবাইল ফোন সেট চুরি হলে প্রযুক্তির মাধ্যমে এমআই নম্বরের সূত্র ধরে তা সনাক্ত ও পাওয়া সম্ভব। প্রযুক্তির সহায়তা নিলে ল্যাবটব চুরি হলে তাও পাওয়া যেতে পারে।
আর যানবাহন নিরাপদ রাখতে গ্লোবাল পজিশনিং রেসপন্স সিস্টেম (জিপিআরএস) প্রযুক্তি ব্যবহারে যানবাহন মালিকদের উৎসাহিত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। যানবাহনের অবস্থান জানার জন্য ব্যবহৃত এ পদ্ধতির মাধ্যমে গাড়ি চুরি ঠেকানো থেকে শুরু করে দ্রুততম সময়ে চোরাই গাড়ি উদ্ধার, দূর থেকে গতি নিয়ন্ত্রণসহ অনেক সুবিধা পাওয়া সম্ভব। এছাড়া বাসা বাড়িতে চুরি হলে চোর ধরতেউ আবিস্কার হয়েছে বিশেষ ধরনের ডিভাইস। প্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসব চোর ধরা সম্ভব বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রাজধানীতে অনেকেই এসব ব্যবহার করে সুফল পেলেও দেশব্যাপী এনিয়ে তেমন সাড়া পড়েনি। মূলত প্রচারনার অভাবে লোকজনের মধ্যে আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন।
পুলিশ জানায়, এ প্রযুক্তির সাহায্যে গত ৯ মাসে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি হওয়া প্রায় ৫০টি গাড়ি সহজেই উদ্ধার করা গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন সব যানবাহনে জিপিআরএস ব্যবহার করা হলে গাড়ি চুরি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আলোচনার পাশাপাশি পুলিশি সেবা নিতে যাওয়া লোকজনকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে গাড়িতে জিপিআরএস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার বিষয়েও ভাবছে পুলিশ।
সূত্র মতে, রাজধানীতে পুলিশের বেশ কয়েকটি অফিসে ডিজিটাল পুলিশ প্রটেকশন সিস্টেম (ডিপিসিএস) লাগানো রয়েছে। এর মাধ্যমে সংশ্লিস্ট অফিসে সব ধরনের চুরি ঠেকানো সম্ভব। বিদেশী এই প্রযুক্তি এখন দেশেও পাওয়া যাচ্ছে। পুরো প্রযুক্তির দাম বড়বে ৬-৭ হাজার টাকা। বাসাবাড়ির গোপন স্থানে লাগানো ডিভাইস মোবাইল ফোনের সঙ্গে ট্যাক করা থাকবে। ২০০৭ সালে ঢাকার সাভার পৌর এলাকার রাজাশন মহল্লার মিশু ও আরিফ মিলে বাসা বাড়িতে চুরি হলে চোর ধরার জন্য ‘হোম সিকিউরিটি সিস্টেম’ আবিস্কার করেন। নিজেদের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটলে চোর ধড়ার আগ্রহ থেকে তারা দুই বন্ধু মিলে ‘প্রটেকশনের’ এই যন্ত্র আবিস্কার করেন। মিশু জানান, এ প্রযুক্তিতে ব্যবহ্যত ডিভাইসের দাম ৪-৫ হাজার টাকা। আর ২-৩ হাজারা টাকায় একটি মোবাইল ফোন সেট কিনলেই পুরো প্রক্রিয়া সচল হয়।
এছাড়া ল্যাবটব চুরি ঠেকাতে এরমধ্যে গোপন একটি ডিভাইস স্থাপন করা যায়। এর সাহায্যে ল্যাবটপ চুরি হলে সেটি কোথায় রয়েছে তা সনাক্ত করে উদ্ধার এবং চোর ধরা সম্ভব হবে।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানীতে প্রতিমাসে অর্ধ শতাধিক গাড়ি চুরি হয়। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে গড়ে এর অর্ধেক সংখ্যক গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কারণ চোর চক্র গাড়িটি নিজেদের আস্তানায় নিয়ে দ্রুত যন্ত্রাংশ বদলে ফেলে। ভুয়া নম্বরপ্লেট লাগিয়ে গাড়ির রঙ পরিবর্তন করে ফেলে। এতে নির্দিষ্ট গাড়িটি খুঁজে বের করা কস্টকর হয়ে পড়ে। গত ২৫ জুন পুলিশের মাসিক সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়। সভায় গাড়ি চুরি বন্ধের ব্যাপারে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গাড়িতে জিপিআরএস স্থাপনের ওপর জোর দেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশ নিজস্ব উপায়ে জিপিআরএস ব্যবহারে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এসব প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্দি পেলে অপরাধীরাও সাবধান হবে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন।
সূত্র মতে, ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেম বা যানবাহনের অবস্থান বের করার ক্ষেত্রে জিপিএস, জিপিআরএস ও জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) একসঙ্গে কাজ করে। এই প্রযুক্তিগুলো আলাদা হলেও তাদের সমন্বিত ফল হিসেবে জানা যায় যানবাহনের সুনির্দিষ্ট অবস্থান। এ জন্য নির্দিষ্ট যানবাহনের গোপন স্থানে একটি জিপিএস সমর্থক যন্ত্র বসাতে হয়। এই যন্ত্রটি মূলত জিপিআরএসের মাধ্যমে ওয়েবে এবং সংশ্লিষ্ট সার্ভারে বার্তা পাঠায়। জিপিএস প্রযুক্তি জিপিআরএসের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য জিআইএস মানচিত্রে দেখায় যানবাহনটি কোথায় রয়েছে। এ ছাড়াও এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসে গাড়ির গতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকলে মালিক তা স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতে পারবেন। প্রয়োজনে দূর থেকে গাড়ির ইঞ্জিনও বন্ধ করে পুরো গাড়ি লক করে দিতে পারবেন মালিক। পাশাপাশি গাড়ি চলার সময় ব্যবহৃত তেলের পরিমাণ, তেলের বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য দেবে জিপিআরএস। এ প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোনে এসএমএস ও নির্দিষ্ট কল সেন্টারের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান জানতে পারবেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, গাড়িতে জিপিআরএস স্থাপনে ব্যয় হয় নয় হাজার টাকা, মাসিক ফি ৬শ’ টাকা। এই সামান্য ব্যয়ের মাধ্যমে একজন মালিক তার গাড়িকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গত ৬ মাসে গুলশান-বনানী এলাকা থেকে চুরি হওয়া ২৮টি এবং অন্যান্য স্থান থেকে চুরি হওয়া ১০টি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সেবার জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অটোমেটিক ভেহিকল ট্র্যাকিং ইউনিট রয়েছে।