মালালার পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও সে এখনো বিপদমুক্ত নয়
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্কঃ জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের হামলায় গুলিবিদ্ধ পাকিস্তানি কিশোরী (১৫) মালালা ইউসুফজাই মাত্র কয়েক সেন্টিমিটারের ব্যবধানে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছে। ব্রিটেনের বার্মিংহামে কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের পরিচালক ডেভ রোজার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, মালালা প্রথমবারের মতো উঠে দাঁড়াতে পারলেও সে এখনো মারাত্মক অসুস্থ। শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করতে নাসারন্ধ্রের ভেতর দিয়ে একটি টিউব (নালা) ঢোকানোর ফলে তার পক্ষে কথা বলা সম্ভব না হচ্ছে না। তবে সে লিখে যোগাযোগ করতে পারছে। তিনি বলেন, তাকে ছোড়া বুলেটটি মস্তিষ্ক ঘেঁষে বিদ্ধ হয়েছে। কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্বের কারণে সে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে এ যাত্রা বেঁচে গেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে তার শ্বাসনালী ফুলে ওঠে, এতে তার শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছিল। এ অবস্থায় নাসারন্ধ্র দিয়ে টিউব (ট্রাকেওটমি) ঢোকানো হয়।
ড. রোজার সতর্ক করে বলেন, মালালার পুরোপুরি সেরে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও সে এখনো বিপদমুক্ত নয়। তবে মালালা বুঝতে পেরেছে কেন তাকে পাকিস্তান থেকে ব্রিটেনে নিয়ে আসা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মালালার একটি ছবি প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, সে একটি খেলনা ভালুক আঁকড়ে আছে। গত ৯ অক্টোবর সোয়াত উপত্যকায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মালালার স্কুলবাসে হামলা চালিয়ে তাকে গুলি করে তালেবান জঙ্গিরা। পেশোয়ার ও রাওয়ালপিন্ডির সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তাকে এখন যুক্তরাজ্যে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মালালার অনুমতি নিয়ে তার শারীরিক পরিস্থিতি এবং আঘাতের বর্তমান অবস্থা প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাকে পুরোপুরি সারিয়ে তোলার লক্ষ্যে চিকিৎসকদের করণীয় সম্পর্কে সম্ভাব্য একটি পরিকল্পনাও প্রকাশ করা হয় এ সময়। পাশাপাশি মালালার মুখমন্ডলে আঘাত হানা বুলেটটির পরিক্রমণ পথ এবং এর ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. রোজার।
চোখের পাশে আঘাত হানা বুলেটটি সৌভাগ্যক্রমে মস্তিষ্কের খুব কাছ দিয়ে বেরিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আর মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার ভেদ করলেই নিশ্চিতভাবেই ওই আঘাতের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা মালালার পক্ষে সম্ভব হতো না বলে জানান তিনি। পয়েন্ট ব্লাংক রেঞ্জ (প্রায় অস্ত্র ঠেকিয়ে) থেকে করা গুলিটি মালালার বাম চোখের ভ্রুর ওপর বিদ্ধ হয়। তবে খুলির হাড় ভেদ করতে ব্যর্থ হলেও গুলিটি বেশ কিছু মাথা ও ঘাড়ের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্পর্শকাতর টিস্যুকে ছিন্নভিন্ন করে মাথার বাম পাশের চামড়ার নিচে চলে যায়। এতে খুলির সবচেয়ে পাতলা হারটিতে চিড় ধরে। এমনকি এর একটি ভাঙ্গা অংশ মালালার মস্তিষ্ক অবধি পৌঁছায় বলে জানান চিকিৎসকরা।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই বুলেটটি মালালার শরীর থেকে বের করা সম্ভব হলেও পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখেছেন গুলির আঘাতে তার বাম পাশের চোয়ালের হাড়ের সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া তার খুলি লাগোয়া কানের পাশের একটি হাড়েও চিড় ধরেছে বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে তার মস্তিস্ক এখনও ফুলে থাকায় চিকিৎসকরা পরিস্থিতি এখনও সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন । গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার প্রথম জ্ঞান ফিরে পান মালালা। বর্তমানে চারপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হলেও খুব সহজেই সে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে ডা. রোজার বলেন, মালালা এখন বুঝতে পারছে তার সঙ্গে কি হয়েছে, এটাও বুঝতে পারছে সে আর পাকিস্তানে নেই। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যে, হঠাৎ জেগে উঠে ভিনদেশের হাসপাতালের বিছানায় নিজেকে আবিষ্কার করা তার জন্য অনেকটাই কঠিন। সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে তার আরও কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। একটু সুস্থ হয়ে উঠলেই তার খুলির ক্ষতিগ্রস্ত অংশটিকে শরীরের অন্য কোনো স্থানের হাড় অথবা টাইটেনিয়াম প্লেট দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে পৃথক এক বিবৃতিতে ‘মালালা এখনও খুবই অসুস্থ’ উল্লেখ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় তার শারীরিক পরিস্থিতি এখনও বিপজ্জনক।