তৃতীয় শক্তি শেষ পর্যন্ত সত্যিই দাঁড়াতে পারবে কি?
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাঃ রাজনীতিতে আবারো আলোচনায় তৃতীয় শক্তি। এবার উদ্যোক্তা গণফোরাম সভাপতি ডক্টর কামাল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক লীগের কাদের সিদ্দিকীসহ কয়েকজন।
আওয়ামী লীগ আর বিএনপি’র সর্বগ্রাসী দাপটের কাছে অসহায় সুস্থধারার রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন, তাদের কাছে এই তৃতীয় শক্তির ধারণাটি কখনো পরিত্যাক্ত হয়নি। তবে খুব বেগও পায়নি। আরেকটি গ্রুপ আছে, যারা নির্বাচন আসলেই একধরনের আস্থিরতায় ভুগতে থাকে। এই অস্থিরতা থেকেই তৃতীয় ফ্রন্টসহ নানা উদ্যোগের কথা উঠতে থাকে। এদের আগহ যতটা না রাজনীতিতে সুস্থতা আনা, তার চেয়ে বেশী, ক্ষমতার কেন্দ্র দখল বা বড় দুই দলের হয়ে ক্ষমতার ভাগ নেয়া।
তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, এই তৃতীয় শক্তির ধারণার সাথে ধর্ম নিয়ে যেসব দল ভাবে তারা নেই। তারা আছে বিএনপি’র সাথেই। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, প্রগতিশীল রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন, আওয়ামীলীগ ও বিএনপি থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে যারা চলতে চান, তেমন কিছু রাজনীতিক একটি বিকল্প সরকার গঠন গড়ার কথা বলছেন অনেকদিন থেকেই। এদের সাথে আছেন সুশীল সমাজের একটি অংশ। আর বামরা কোন পথে হাটবেন, তা সব সময়ই অজানা।
মূলত এই তৃতীয় ধারার ধারণাটি অনেকদিন থেকেই সুশীল সমাজের একটি অংশের চাওয়া। এরা বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় না থেকেও, ক্ষমতায় যারা থাকে তাদের পরিচালিত করতে চেয়েছে। বহুল আলোচিত ১/১১-কে এই সুশীলদের বড় সফলতা হিসেবে দেখা হয়, যদিও বিএনপি আর আওয়ামীলীগের চরম প্রতিরোধের মুখে দুই বছরের মধ্যে এই ধারাটি সেসময় ভেঙ্গে পড়েছিলো।
ডক্টর কামাল হোসেন বলেছেন দেশের মানুষ দুইদলের প্রজা হয়ে আর থাকতে চায়না। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন যারা দেশকে ভালবাসেন তারা চান এই দুই দল থেকে মুক্তি। দেশকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষার জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন এ দু’জন। রোববার এক মতবিনমিয় সভায় তারা বলেন, দেশ বর্তমানে রোগাক্রান্ত অবস্থায় আছে। এই রুগ্ন অবস্থা থকে দেশকে বাঁচাতে সমাজের সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডক্টর কামাল এক সময় আওয়ামী লিগের সাথে আর অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির সাথে ঘর করেছেন। কিন্তু থাকতে পারেননি।
গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের কাজ হলো দেশের মানুষের চাহিদা আর প্রত্যাশাকে একটি নির্দিষ্ট দাবিতে পরিণত করে তা রূপায়নের চেষ্টা করা। মানুষ চায় তার নাগরিক অধিকার এবং জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত হোক, যা বড় দুই দলের কাছ থেকে তারা পায়না। প্রশ্ন হলো যারা নতুন কিছু করতে চান, তাদের পক্ষে তা করা সম্ভব কি না? বলা হয় এরা ভাল কথা বলে, এরা দুর্নীতি থেকে দূরে থাকবে, তবে তাদের জনসমর্থন নেই।
তবে হতাশ হওয়ার হয়তো কিছু নেই। রাজনীতি যদি সম্ভাব্যতার শিল্প হয়, যদি বিশ্বাস করা হয় যে, গনতন্ত্রে সব সম্ভাবনার দ্বারই খোলা থাকে, তবে তা নিশ্চয় অসম্ভব হবেনা। তৃতীয় শক্তি শেষ পর্যন্ত সত্যিই দাড়াতে পারবে কিনা তা কেউ বলতে পারেনা। তবে, সংশয় নেই যে, মানুষকে তারা একটি ধারণা দিতে পারবে যে, সংসদ বর্জন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর দখলের যে সংস্কৃতি চালু করেছে এ দেশের শাসকরা, তার অবসান প্রয়োজন। অন্তত: সেই বোধটুকু মানুষের মনে আসবে, সে আশা করা যায় হয়তো।
লেখকঃ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সাংবাদিক, বার্তা পরিচালক, একাত্তর টেলিভিশন।