জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরমুখো মানুষের ঢল
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ২ কোটি ঢাকাবাসীর মধ্যে দেড় কোটিই ঈদ উদযাপন করতে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি ছুটছে। রাজধানীর রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। আজকের মধ্যে অনেকটা জনশূন্য হয়ে পড়বে রাজধানী। পথে পথে চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা। মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট থাকবে। ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় ঘটতে পারে এতসব দুর্ভোগের আগাম খবর জেনেও মানুষ ঈদ উৎসবের জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে।
২৫ অক্টোবর দুপুরের পর থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে মানুষের ছিল উপচেপড়া ভিড়, কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। রাজধানী থেকে বের হওয়ার সব কটি পথেই যানজটের কারণে স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় তিনটি ফেরিঘাট বন্ধ হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিঘিœত হচ্ছে। অপরদিকে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৫০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আবার সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুর মেরামতের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
এদিকে গাবতলী বাস কাউন্টারের কর্মীরা বলছেন, রাস্তায় যানজট থাকায় থাকায় ‘সিডিউল বিপর্যয়’ হচ্ছে। তবে ঈদের এক দিন আগেও একটু বেশি দামে হলেও মিলছে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের টিকেট। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার লোকাল বাস ছেড়ে যায় দেড়টায় আর ১০টার বাস ছাড়ে ৩টায়। যেসব পরিবহন কোম্পানি অতিরিক্ত ট্রিপের জন্য রিজার্ভ বাস রেখেছিল, তারা সে বাসগুলো দিয়ে কোন রকম চালিয়ে নিলেও যাদের এ ব্যবস্থা নেই তারা পড়েছেন মহাবিপদে। একদিকে যাত্রীদের চাপ অন্যদিকে ব্যবসায়িক ক্ষতি। অনেক কাউন্টার থেকে স্টাফরা যাত্রীদের ভয়ে আশপাশে ঘুরছেন আর বারবার ফোনে বাসের অবস্থান জানছেন। দূরপাল্লার বাসগুলো সময়মতো ঢাকায় পৌঁছতে না পারায় এমন দৃশ্য দেখা যায়।
আর সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সকালের সব ট্রেন ঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে। তবে গত দুদিনের তুলনায় ভিড় কিছুটা বেড়েছে। বেড়েছে আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যাও।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার খায়রুল বশীর বলেন, ট্রেনে বাড়তি চাপ নেই। কমলাপুর থেকে শিডিউল অনুযায়ী সব ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও আমরা শিডিউল বিপর্যয়ের খবর পাই নি।
জামালপুরের ব্যবসায়ী খাদেমুল ইসলাম বলেন, সিট পাইনি ঠিক আছে। কিন্তু ট্রেনটা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে হয় আমার কাছে। আর বাসের রাস্তায় যে পরিমাণ যানজট, তাতে করে দাঁড়িয়ে কষ্ট করে গেলেও ঠিক সময়ে পৌছানোর নিশ্চয়তাটুকু অন্তত থাকছে।
বাস কাউন্টারের লোকজন জানান, যমুনা সেতু এলাকায় দীর্ঘ যানজটের ফলে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী অনেক বাস সময়মতো ঢাকায় আসতে পারছে না। এছাড়া রাস্তার পাশে গরুর হাট বসানোয় বিভিন্ন জায়গায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সদরঘাটে এখন আর সকাল ও বিকেলের পার্থক্য নেই। সারাদিনই ছিল ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জীবনের ঝুঁকি আর বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ করলেও হাসিমুখে সব মেনে এখন ঘরে ফিরছে মানুষ। সদরঘাটে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ঘাটে লঞ্চ আছে অনেক কিন্তু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার জন্য মানুষ নিয়ম-শৃ´খলার তোয়াক্কা না করে উঠে পড়ায় বিশৃ´খলা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএর ঘোষণা কেন্দ্র থেকে বার বার ‘সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি’ ঘোষণা দেয়া হলেও কেউই তার তোয়াক্কা করছে না।
ঈদে বাড়ি যাবার জন্য উম্মুখ মানুষদের মাঝে চলছে সিট নিয়ে ঝগড়া। হাঙ্গামা, হাতাহাতি সবই লঞ্চে একটি সিটের জন্য। যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চের আনসার সদস্যরা বেশি টাকায় এক যাত্রীর দখলে সিট বিক্রি করে দিয়েছে অন্য জনের কাছে।
সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি, নাকি জীবনের চেয়ে সময়ের? উত্তর মিলবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। মানুষের উপচে পড়া ভীড়ে নেই নিয়ম কানুনের বালাই, নেই নিরাপত্তার তোয়াক্কা।
গত দুইদিনের তুলনায় সদরঘাটে গতকাল ছিল ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের সবচেয়ে ভীড়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলার যেসব কর্মজীবী মানুষ আগেভাগে ছুটি পাননি, তারাই দিশেহারা হয়ে ছুটছেন এই সময়টাতে।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘাটে থাকাকালীন লঞ্চের ডেকে লোক বোঝাই করে রাখা হয়, যেন বিআইডব্লিউটিএ এবং আইনশৃ´খলাবাহিনীর চোখে না পড়ে। কিন্তু ঘাট থেকে ছেড়ে যাবার পরেই যাত্রীদের ছাদে নেয়া হয়। এছাড়াও ঘাট ছেড়ে যাওয়ার পর নৌকায় করে অতিরিক্ত যাত্রী লঞ্চে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ জন্য লঞ্চগুলো ঘাট ছাড়ার পর কিছুক্ষণ নৌকার যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করে। ফলে নদীতে সাময়িক নৌজটের সৃষ্টি হয়।