বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ পরিবার ও জাতির কল্যাণে মিতব্যয়ী হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর সারা বিশ্বে একই সাথে পালিত হয় “বিশ্ব মিতব্যয়ীতা দিবস”। ১৯২৪ সালে ‘মিলানে’ অনুষ্ঠিত বিশ্বের বিভিন্ন সঞ্চয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের প্রথম বিশ্ব কংগ্রেসে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিবসটি পালন শুরু হয়। সেই থেকে সঞ্চয় ব্যাংক সমূহ আন্তর্জাতিক ভাবে দিবসটি পালন করে। মূলত মিতব্যয় ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব সর্ম্পকে জনগণের মনোযোগ আর্কষণ করার উদ্দেশ্যে নিয়ে এই দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশেও সরকারিভাবে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয় এবং জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
জাতীয় উন্নয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি অতি গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের দুটো বিকল্প পন্থা রয়েছে। যথাঃ (১) স্বেচ্ছায় সঞ্চয় এবং (২) কর সংগ্রহের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক সঞ্চয়। অর্থনীতিবিদদের অভিমত অনুযায়ী স্বেচ্ছায় সম্পদ যতো বৃদ্ধি পাবে কর বা রাজস্ব আয়ের উপর নির্ভরশীলতা ততো হ্রাস পাবে। এই নীতির উপর ভিত্তি করেই পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলো তাদের উন্নতি সাধন করেছে। সমৃদ্ধি ও সম্পদের জন্য সঞ্চয়ের মনোভাব মানবজীবনে একটি অপরিহার্য বিশিষ্ট গুণ। ব্যক্তি জীবনে যতো বেশি সঞ্চয় হবে ততোই বাড়বে ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা। বর্তমান বিশ্বায়নের এই প্রযুক্তি নির্ভর যুগে সঞ্চয় এখন আর সনাতনী ধারণায় সীমাবদ্ধ নেই। যে কোনরূপ সঞ্চয়ই অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। একটি প্রচলিত ইংরেজী প্রবাদের বঙ্গানুবাদ হলো, অর্থ আয় করা কঠিন কিন্তু ব্যয় করা সহজ। মানুষ আয়েশী জীবন যাপনের জন্য কিছু অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করে, যা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলকর নয়। আমরা আমাদের চারপাশে খোলা চোখে যদি তাকাই তাহলে আমাদের নজরে আসে এমন কিছু অপ্রত্যাশিত দৃশ্য যা সত্যিই বেদনাময়। দেখা যায় কেউ জীবন দিয়ে পরিশ্রম করেও দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেতে পায় না। আবার কেউ কেউ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও গৃহহীন বা ভূমিহীন। কেউ বেকার ও সহায়সম্বলহীন। তারপরও মানুষ বেঁচে থাকার নিদারুণ অভিলাষে নানা ভাবে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ উপার্জনে লিপ্ত হয়। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক বা মহাজন কর্তৃক উচ্চহারে সুদ দেয়ার নিমিত্তে এখনো ঋণ দানের প্রবনতা বিদ্যমান। এসব বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণাগ্রস্থ হয়ে অসংখ্য পরিবারের সর্বস্ব হরানোর দৃষ্টান্ত রয়েছে। আর এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে তুলনামূলক ভাবে বেশি। কেননা এই সকল দেশের একটি বৃহৎ অংশ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। অশিক্ষিত লোক কে ঠকানো যেমন সহজ, তেমনি তাদের কম বা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নেয়াও সহজ। আবার কর্মক্ষেত্রের অপ্রতুলতার ফলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার অবমূল্যায়নও হচ্ছে। অথচ ক্ষুদ্র সঞ্চয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের জীবন পরিচালনা অসম্ভব নয়। অপরদিকে সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর হাতে আছে সীমাহীন অর্থ। তারা এমন সব যথেচ্ছ ব্যয় নিয়ে মসগুল থাকে যা খুব সহজেই পরিহার করা যায়। আমোদ-প্রমোদ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজার হাজার অথিতি আপ্যায়ন প্রভৃতির ব্যয়ভারে প্রচুর অর্থের ব্যপক অপচয় সাধিত হয়। অন্য যে কোন হাতের-ই হোক তার অপব্যয় রোধ ও সঞ্চয়, ব্যক্তি, সমাজ এবং সর্বপরি জাতির জন্য কল্যাণকর। এই সঞ্চিত অর্থ ব্যবহৃত হতে পারে যে কোন উন্নয়নমূলক কাজে যা দিতে পারে স্বনির্ভরতা। স্বনির্ভরতার জন্য অপব্যয় পরিহার ও সঞ্চয় অপরিহার্য। সঞ্চয়ের মনোভাব একটি মানুষের অন্ত্যত ভাল গুণ। হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়ে তুলেছে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে। এটি অনেকটা উত্তরাধিকার সূত্রে এখনও অনেকেই লালন করছে। প্রতিটি মানুষই যেন মিতব্যয়ী হয় এবং সঞ্চয় করে সেই দিকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য “বিশ্ব মিতব্যয়ী দিবস” পালন করা হয়।
বাংলাদেশের মতো একটি দেশের নাগরিকদের জন্য মিতব্যয়ীতা অত্যাবশ্যক। এদেশে অপচয়ের অভ্যাস সাধারণ ভাবেই বেশি পরিলক্ষিত হয়। অপচয়কারীরা নিজের জন্য তো নয়ই, বরং সমাজ, পরিবার ও জাতির জন্যও কিছু করতে পারে না। বিজ্ঞানী ফ্রাকলিনের এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ছোট ছোট ব্যয় সমদ্ধে সাবধান হও। একটি ছোট ছিদ্র মস্তো বড় জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে’। উল্লেখ্য, সঞ্চয়ের জন্য ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেক মানুষের একটি সুন্দর জীবনের স্বপ্ন থাকে। এই স্বপ্ন থেকেই জন্ম নেয় প্রত্যয়। দৃঢ় প্রত্যয় থেকেই গড়ে ওঠে সঞ্চয়ের প্রবনতা। বাংলাদেশে জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর সঞ্চয়ের জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্প চালু করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, জামানত সঞ্চয়পত্র, ৩ বছর মেয়াদী জাতীয় বিনিয়োগ বন্ড, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক ও প্রাইজবন্ড সহ প্রভৃতি কার্যক্রম। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যাতে সুষ্ঠু ভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেই জন্য মিতব্যয়ী হওয়া এবং সঞ্চয়ী মনোভাবের বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। তাই আজকের দিনে এই বিষয় গুলো সর্ম্পকে সাধারণ জনগণের ধারণা স্পষ্ট হোক সেটাই কাম্য।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।