চট্টগ্রামের গার্ডার ভেঙ্গে নিহত নওগাঁর সিরাজুলের পরিবার বাকরুদ্ধ!
আব্বাস আলী,নওগাঁ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ‘আমাকে বলল, তুমি বাজার নিয়ে বাড়ি চলে যাও। এরপর আমাকে আর আমার ছোট মেয়ে সীমাকে নিজ হাতে চা বানিয়ে সঙ্গে বন পাউরুটি খাওয়ালো। আমরা মা-বেটি চা খেয়ে বাজার নিয়ে বাড়ি চলে এলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে।’ শনিবার চট্টগ্রামে বহদ্দারহাটে নির্মানাধীন ফ্লাই ওভারের ভেঙ্গপড়া গার্ডারের চাপায় নিহত সিরাজুল ইসলাম সেরিনের (৩৫) স্ত্রী সাহারা খাতুন কথা গুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বড় মেয়ে শিউলী আকতার (১৫) জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে বার বার। ছেলেকে হারিয়ে বৃদ্ধা মা রাবেয়া বেগম, বাবাকে হারিয়ে মেঝ মেয়ে আঁখি আকতার (১২) ও ছোট মেয়ে সীমা আকতার (৮) বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
নওগাঁ শহরের মধ্যে দূর্গাপুর মহল্লার মৃত মোবারক মন্ডলের ছোট ছেলে সিরাজুল ইসলাম সেরিন। প্রায় ১৫ বছর আগে স্ত্রী ও মেয়ে শিউলীকে নিয়ে জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান চট্টগ্রামে। সেখানে রিক্্রা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। এরপর সংসারে আসে আরো ২ মেয়ে আঁখি আর সীমা। বহদ্দারহাট বিল্লাপাড়ায় পুকুর পাড়ে মানিকের কলোনীতে বাসা ভাড়া নিয়ে ৩ মেয়ে ও স্ত্রীর সাথে বসবাস করছিলেন সিরাজুল। মাত্র দুই বছর আগে রিক্্রা চালানো ছেড়ে সিরাজুল বহদ্দারহাট পুকুরপাড়ে নির্মানাধীন ফ্লাইওভারের নীচে চটপটি ও চায়ের স্টল দেন। স্ত্রী সাহারা খাতুন ও ছোট মেয়ে সীমা দোকানে সহযোগিতা করতো। বাড়ি ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যেত তাদের। বড় মেয়ে শিউলী ও মেঝ মেয়ে আঁখি স্মার্ট জিনস নামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করে। তারা সন্ধ্যা ৭টা দিকে বাসায় ফিরে আসে।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাজার বাসায় রাখতে মেয়ে সীমাকে নিয়ে বাসায় যান সাহারা খাতুন। দোকান থেকে বাসা ১০ মিনিটের পথ। বাসায় দুই মেয়ের কাছে বাজার পৌঁছে দিয়ে স্বামীকে দোকানে সাহায্য করতে ফিরে যাওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু এর মাঝেই সব শেষ। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় নির্মানাধীন ফ্লাইওভারে ভেঙ্গে পড়া গার্ডারের নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় সিরাজুল ইসলাম সেরিনের। সে দিনের ভয়াবহ ঘটনা নিমিষে ছড়িয়ে পড়ে বন্দর নগরিতে। ঘটনার সময় সেখানে অবস্থানরত আপনজনদের সন্ধানে দিশেহারা হয়ে পড়েন সবাই। এর মাঝেই খবর পেয়ে মেয়েদের সাথে নিয়ে স্বামীকে খুজতে যান সাহারা খাতুন। মোবাইল ফোনে কল দিলে রিং হয় কিন্তু রিসিভ হয়না। বাবার মৃতের খবর শুনে বড় মেয়ে এখনও অজ্ঞান হয়ে আছে।
সিরাজুল ইসলামের বড় ভাই রেজাউল ইসলাম মন্ডলের ছেলে মিলন হোসেন জানান, টিভিতে টিকার দেখে চাচা অবস্থা জানতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি। সম্প্রতি তিনি নওগাঁ থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ নিয়েছেন। সারারাত সেখানে অবস্থান করার পর ভোর ৫টায় সিরাজুল ইসলামের থেঁতলে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়।
রবিবার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ১২টায় লাশ পরিবারের নিকট একজন ম্যাজিষ্ট্রেট হস্তান্তর করেন। ওই দিন দুপুর ১টায় চাচার লাশ এবং চাচী ও ৩ চাচাতো বোনকে নিয়ে নওগাঁর উদ্দ্যেশে রওনা হয়ে রবিবার রাত দেড়টায় নওগাঁ শহরের মধ্যে দূর্গাপুর মহল্লার বাড়িতে এসে পৌঁছে। খবর পেয়ে শত শত মানুষ সেখানে ভীড় করে। মৃতের আতিœয়-স্বজন আর মহল্লা বাসীর চোখে মুখে এখন শুধুই শোকের ছায়া। সোমবার সকাল ৯টায় জানাজা নামাজ শেষে স্থানীয় কবর স্থানে লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।