নারী নির্যাতন বন্ধ হোক
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ ১৯৬১ সালের এই দিনে ডেমিনিকা প্রজাতন্ত্রের তিন নারী নেতা তৎকালীন সেদেশের শাসক রাফায়েল ক্রুজিলোর নির্দেশে আততায়ীর হাতে খুন হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর গৃহীত এক সিদ্ধান্তে ২৫ নভেম্বরকে আর্ন্তজাতিক নরী নির্যাতন বিলোপ দিবস ঘোষণা করে (সিদ্ধান্ত ৫৪/১৩৪)। নারী নির্যাতন সমস্যা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার সমূহ আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও এনজিও কে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই দিবস ঘোষণা করে। নারী আন্দোলনকারীরা ১৯৮১ সাল থেকে এই দিনকে স্মরণ করছেন। নারী নির্যাতনের এই দিনকে বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় করা ও এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি সহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্যেই এই দিবস পালিত হয়।
নারী নির্যাতন মানবাধিকারের সবচেয়ে লজ্জাজনক লংঘন। এই নির্যতনের কোন ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক বা চিত্ত বৈভবের সীমারেখা নেই। যতোদিন এটি থাকবে ততোদিন সমতা, উন্নয়ন ও শান্তি ব্যাহত হবে। বিশ্বে নারী নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে পারিবারিক নির্যাতন, ধর্ষণ, নারী ও মেয়ে পাচার, বাধ্যতামূলক পতিতাবৃত্তি এবং সশস্ত্র সংহাতে নির্যাতন, যেমন;- হত্যা, ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, বাধ্যতামূলক গর্ভধারণ। এর মধ্যে আরো রয়েছে, ইজ্জতের হত্যা, যৌতুক সংশ্লিষ্ট নির্যাতন, কন্যা শিশু হত্যা ও পুত্র সন্তানের আশঅয় গভাবস্থায় লিঙ্গ নিধারণ, স্ত্রী যৌনাঙ্গ ছেদন এবং অন্যান্য প্রথা ও সনাতনী রীতি-নীতি। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত নারী নির্যাতনের অবসান সংক্রান্ত ঘোষণা, নারী নির্যাতন যে মানবাধিকারের লংঘন ও নারীর প্রতি এক বিচিত্র ধরণের বৈষম্য আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি পায়। তার আগে ১৯৯০ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত নারী নির্যতন বিরোধী আর্ন্তজাতিক কার্যক্রম পরিবার কেন্দ্রীক ছিলো। পরবর্ত্তীতে সর্বত্র নারী সমতার দাবী উত্থাপনের প্রেক্ষিতে নারী নির্যাতন বিষয়টির ব্যাপকতা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আর্কষণ করে। ১৯৯৫ সালে বেইজিং এ অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্বনারী সম্মেলনে গৃহীত প্ল্যাটফর্ম ফর এ্যাকশন এ যে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ দুশ্চিন্তার ক্ষেত্রের প্রতি সরকার, আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় ও সুশীল সমাজের বিশেষ মনোযোগের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, নারী নির্যাতন তার মধ্যে অন্যতম। ১৯৯৮ সালে নারীর মর্যাদা সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিশনের ৪২ তম অধিবেশনে সকল প্রাসঙ্গিক নীতি ও কর্মসূচিতে লিঙ্গ প্রেক্ষিতকে মূল ধারাভুক্ত করা সহ নারী নির্যতনের অবসানে সদস্য দেশসমূহ ও আর্ন্তজাতিক সমাজের কর্ম পরিধি আরও প্রসারিত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। উক্ত অধিবেশনের সম্মত উপসংহারের মধ্যে বেসরকারি সংস্থার কাজে সর্মথন দান, নারী ও মেয়েদের সকল ধরণের পাচার রোধ, অভিযানকারী শ্রমিক (বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অধিকার এগিয়ে নেয়া এবং রক্ষা করা) নারী নির্যাতন সর্ম্পকে সমন্বিত গবেষণাকে উৎসাহিত করার ব্যবস্থাবলী অর্ন্তভুক্ত।
বিশ্ব চিত্রে নারী নির্যাতনে উল্লেখযোগ্য ধরণের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক হচ্ছে পারিবারিক নির্যাতন। বিশ্ব ব্যাংকের ১৯৯৩ সালের বিশ্ব উন্নয়ন রির্পোটের আলোকে জানা যায়, স্তনের ক্যান্সার, সার্ভিক্যাল ক্যান্সার, প্রসবকালীন সন্তান আটকে যাওয়া, ১৫-৪৪ বয়সী নারীর জীবনের সুস্থ্য বছরগুলো ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতনের ছোবলে ঝড়ে যাওয়া সহ নানান প্রতিবন্থকতার মাঝে সমাজে নারীদেও প্রতি মুহূর্তে বৈষম্যেও শিকার হতে হয়। বাণিজ্যিক যৌন শোষনের জন্য নারী ও শিশু পাচার থেকে বছরে সর্বোচ্চ ৮’শ কোটি ডলার আয় হয় বলে আর্ন্তজাতিক অভিপ্রায় সংস্থা (আই ও এম) এর রির্পোটে জানানো হয়েছে। অপরদিকে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এর হিসাব অনুযায়ী সাড়ে আট কোটি থেকে ১১ কোটি ৪০ লাখ নারী ও মেয়ের স্ত্রী যৌনাঙ্গ ছেদন করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া মহাদেশের নাগরিক।।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।