কেশবপুরে লাইসেন্স বিহীন ইট ভাটায় অবাধে জ্বলছে জ্বালানী কাঠ
মিজানুর রহমান,কেশবপুর প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ যশোরের কেশবপুরের মেসার্স গোল্ড ব্রিকস ইটভাটাটি ২ বছর ধরে লাইন্সেন ছাড়াই চলছে। ওই ভাটার আগুনের ফুলকি ও কালো ধোঁয়া উড়ে গিয়ে পাশের জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় ফুঁসে উঠেছেন আশ পাশের কৃষক। বন্ধের দাবিতে প্রশাসনে আবেদন নিবেদন করা হলেও ভাটা বন্ধ না হয়ে ভাটায় জ্বালানীকাঠ জ্বলছে দাউ দাউ করে। সম্প্রতি কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় ফসলী জমিতে ইটের ভাটা পরিবেশ হুমকীর মুখে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে প্রশাসনের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছেন যে, মোট ৯টি ইটের ভাটার ভিতর ৩টি ভাটার লাইসেন্সে নাই। যার মধ্যে মেসার্স গোল্ড ব্রিকস এর লাইসেন্স নাই। এর পরও ইটভাটাটি রুখবার কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সরোজমিনে দেখাযায়, কেশবপুর ভায়া চিংড়া সড়কের কালিবাড়ি নামক স্থানে মনিরামপুরের জনৈক আবুল কাশেম মন্টু কৃষি কর্তকর্তার প্রত্যয়ন ছাড়াই ২৫ বিঘা ৩ ফসলি জমি লিজ নিয়ে মেসার্স গোল্ড ব্রিকস নামের একটি অপরিকল্পিত ইটভাটা নির্মান করে বাণিজ্যিক ভাবে ইট উৎপাদনসহ বাজার জাত করে চলছে। গত ২ বছর আগে ওই ২৫ বিঘা জমিতে পাট, ধান, কলাই, মুশুড়িসহ নানা রকম শাকসজ্বি উৎপাদন হত। ভাটা কর্তৃপক্ষ এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে ২০১০ সালে কোন কৃষকের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ২০ হাজার আবার কোন কৃষকের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে ভাটাটি নির্মাণ করে। এলাকার কৃষক হযরত আলী জানান, ভাটাটি নির্মাণ কালে সর্ব প্রথম মাটির টপ সয়েল (উর্বররা অংশ) কেটে ইট উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। এ সমস্ত জমির লিজের মেয়াদ ৩ থেকে ১৫ বছর। ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত জমির উর্বররা শক্তি নষ্ট হওয়ায় পুনরায় এ জমি চাষাবাদের উপযোগি করতে ১/২ বছর সময় লেগে যায়। কাদামাটি সংরক্ষন ও ইট তৈরির জন্য বড় ধরনের যে সব গর্ত করা হয় তা পুরণ করে চাষাবাদের উপযোগি করতেও ৩/৪ বছর সময় লেগে যায়। বিষয়টি জমির প্রকৃত মালিকরা আচ করতে পারলেও বাধার কারণে জমি ফিরিয়ে নিতে সাহস পাচ্ছে না এলাকার কৃষক। আবার ভাটার জন্য লিজ প্রদানকারী কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও পাশের জমির মালিক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জমির ফসল দিন দিন নষ্ট হওয়ার কারণে কৃষকরা ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছেন। ভাটার কালো ধোঁয়া নিকটবর্তী জমির ফসল ও ধানের কচি শীষ নষ্ট করে দেয়। মাটির উপরিভাগের জীব বৈচিত্রের মৃত্যু ঘটায়। শুধু মেসার্স গোল্ড ব্রিকস ইট ভাটায় নয়। এভাবেই চলছে কেশবপুরের অধিকাংশ ইটভাটা। এ ব্যাপারে মেসার্স গোল্ড ব্রিকসের সত্ত্বাধিকারী আবুল কাশেম মন্টু বলেন,প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইটভাটা করা হয়েছে। তাছাড়া লাইসেন্স করার জন্য সকল প্রকার কাগজপত্র সংশি¬ষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইটভাটার জন্য প্রচলিত আইন থাকলেও আইনের কোন প্রয়োগ নেই বললেও চলে। সরকারি নির্দেশনায় ভাটার জন্য লাইন্সেস করার নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হলেও মেসার্স গোল্ড ব্রিকস পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র, লাইন্সেস ছাড়াই ইট পোড়ানোর কাজ করছে। এদিকে ১৯৯২ সালে ভুমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত আইনে কৃষি জমির ওপর ইট ভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ভাটার ১২০ ফুট উচ্চতর স্থায়ী চিমনি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৯ সালে জারিকৃত আইনে বলা হয়েছে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো সম্পুর্ণ নিষেধ। কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করে মেসার্স গোল্ড ব্রিকর্স কর্তৃপক্ষ সুযোগ পেলেই কাঠ ও বাঁশের মোথা পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে। যার কারনে ফলদ ও বনজ বৃক্ষ উজাড় হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, মেসার্স গোল্ড ব্রিকস কর্তৃপক্ষ তার অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কৃষি জমিতে ইট ভাটা নির্মান করেছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে তিনি পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মোঃ মুনজুর আলম সাংবাদিকদের বলেন, কেশবপুরে ৯টি ইটভাটার মধ্যে ৬টির লাইন্সেস আছে, ১টি প্রক্রিয়াধিন ও ২ টির লাইসেন্সে নাই। তদন্ত করে জেলা প্রশাসনে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।