রাজনৈতিক কর্মসূচির বেড়াজালে ৪ কোটি শিক্ষার্থী
সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ হরতাল, অবরোধসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান বার্ষিক পরীক্ষার সময়সূচি পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও নতুন বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া যথাসময়ে শেষ করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী। এছাড়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এদিকে জামায়াতের ডাকা গত ৪ ডিসেম্বরের হরতালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর অনেক স্কুলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ অবস্থায় আবারও বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা যথসময়ে শেষ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর মো. নোমান-উর-রশীদ বলেন, বছরের শেষ দিকে এসে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়া ঠিক নয়। শিক্ষার্থীরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত করার কোনো যুক্তি নেই। স্থগিত হওয়া পরীক্ষা পরবর্তীতে একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে। কারণ ডিসেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কার্যক্রম শেষ করে ১ জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম শুরু করতেই হবে। ভিকারুননেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, হরতাল অবরোধের কারণে বারবার পরীক্ষার শিডিউল পেছাতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ পড়ে। পাশাপাশি ১৮ ডিসেম্বর আমার স্কুলে প্রথম শ্রেণীর লটারি অনুষ্ঠিত হবে। সব মিলিয়ে নতুন বছরের শিক্ষা কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু করা যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. হারুনুর রশীদ বলেন, গত ৪ ডিসেম্বরের হরতালের কারণে পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। রাজনৈতকি কর্মসূচির কারণে বারবার পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করা হলে নতুন বছরের শিক্ষা কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হবে না। সার্বিকভাবে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ৯ ডিসেম্বর রোববার সড়ক ও মহাসড়কে ৮ ঘণ্টা অবরোধ পালনের কর্মসূচি দিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি। এ ছাড়া একই দাবিতে আগামী ১৫ ডিসেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও সমাবেশ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ১৮ ডিসেম্বর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের কর্মসূচি দিয়েছে যৌথভাবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) বামপন্থী দলগুলো। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর জামায়াতের ডাকে সারাদেশে হরতাল পালিত হয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওই দিনের নির্ধারিত পরীক্ষা পিছিয়ে গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে যাওয়া সেই পরীক্ষা এখনো নিতে পারেনি। হরতালের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ ডিসেম্বরের পরীক্ষাও ইতিমধ্যে স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম থেকে নবম শ্রেণীতে বর্তমানে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এসব শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। এ ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানেরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৮ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।