বিশ্বজিৎ হত্যাঃ গ্রেফতার ৩
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বিশ্বজিৎ হত্যায় সন্দেহভাজন ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হলো রফিকুল ইসলাম শাকিল, মো. ওবায়দুল কাদের তাহসিন এবং মাহফুজুর রহমান নাহিদ। ১২ ডিসেম্বর (বুধবার) সাভার ও ঢাকায় পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শাকিলই হিংস্র হায়েনার মতো বিশ্বজিৎকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তবে গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশের কোন কর্মকর্তা মুখ খুলতে রাজি হননি। মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। গ্রেফতার করা হলে অবশ্যই নিয়ম মাফিক আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। তাছাড়া আসামিদের আদালতে হাজিরেরও নির্দেশ আছে। গ্রেফতারের খবর কোথা থেকে এসেছে তাও জানা নেই। একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে, ঘটনার পর দেশব্যাপী বিশ্বজিৎকে খুনের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। এরপরই পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খুনিদের গ্রেফতারে দফায় দফায় বৈঠক করেন। একাধিক টিম করে মাঠে নামানো হয় খুনিদের গ্রেফতারে। এর আগে অভিযানে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ওইদিনের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ এবং পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবি দেখানো হয়। খুনিরা সম্ভাব্য কোন স্থানে পালিয়ে থাকতে পারে তার তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে নিশ্চিত হয়ে সাভার থানার গাজীরচরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এখান থেকে প্রধান অভিযুক্ত শাকিল ও তাহসিনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের সারসরি ঢাকার মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এরপরই তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অপররা কোথায় থাকতে পারে সে ব্যাপারে তথ্য নিয়ে পুলিশের একটি সাদা পোশাকের দল মতিঝিল থানার আরামবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এখান থেকে নাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। তবে আরামবাগের কোন বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় তা নিশ্চিত করতে পারেনি সূত্রটি। তাদের ৩ জনকে এক সঙ্গে রেখে বাকি আসামিদের গ্রেফতারের তথ্য আদায়ের চেষ্টা চলছে। আর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের মিডিয়ার সামনে হাজির বা মিডিয়াকে খবর দেয়া থেকে বিরত রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারপরও গ্রেফতারকৃতরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ কারণে তাদের ব্যাপারে অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে। এর পেছনে অন্য কোন বিশেষ করে রাজনীতিক কোন ইন্ধন আছে কিনা, আবার তারা আসলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিনা তাও ভেবে দেখা হচ্ছে। তবে তাদের গ্রেফতারের গোপনীয়তা রক্ষার প্রধান কারণ বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত ৩ জনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখানে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগে ঠিকমতো পড়াশোনা বা ক্লাস না করে অপরাধ জগতে পা দেয় তারা। তারই ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারকৃতসহ আরও কয়েকজনের একটি গ্রুপ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের দোকানপাট, মার্কেট থেকে চাঁদাবাজি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি, টেন্ডার কিংবা সিট বাণিজ্য থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। আর এসব কর্মকান্ডে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগ নেতারা সেল্টার দিত বলে অভিযোগ রয়েছে। সারাদিন তারা ক্যাম্পাস ও আশপাশে ঘোরাফেরা করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতো। এ কারণে নানা অন্যায় করলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। সন্ধ্যায় সূত্রাপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, খুনিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এর বাইরে এ মুহূর্তে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, অবরোধের দিন বিশ্বজিৎ পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছের রাস্তা দিয়ে হেঁটে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এ সময় ওই এলাকায় ছাত্রলীগ মিছিল বের করে। মিছিলের পেছনে দিক থেকে এ সময় পরপর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। মিছিলকারীরা বোমা দুটি কে মেরেছে তাকে খুঁজতে থাকে। এরই মধ্যে পেয়ে যায় বিশ্বজিৎকে। বিশ্বজিৎ নিজের পরিচয় তুলে ধরলেও ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে ছাত্রদলের লোক বলে ধরে এবং এলোপাতাড়ি চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। প্রথম যাত্রায় তিনি বেঁচে গেলেও ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে আবারও ধরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। যার ভিডিও ফুটেজ দেখে সব শ্রেণীর মানুষের শরীর শিহরে ওঠে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। মামলায় আসামি করা হয় ৮ জনকে। এর মধ্যে গ্রেফতারকৃত ৩ জনের নাম রয়েছে।