আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে গাড়ি ছিনতাইঃ অভিযোগ অস্বীকার পুলিশের!
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ রাজধানীতে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, মালামাল বোঝাই ট্রাক,সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি রিকশা চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চোখের পলকে সংঘবদ্ধ চোর গাড়ি নিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। আর অস্ত্রের মুখে ছিনতাইকারী চক্র চালককে জিম্মি করে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। চুরি ও ছিনতাই হওয়া গাড়ির মধ্যে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন দিনদুপুরেও গাড়িচুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পৌঁছাচ্ছে নগরীর থানাগুলোতে। সূত্র জানায়, বিশেষ করে রাজধানীর বিমানবন্দর থানা এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর গাড়ি চুরির হিড়িক পড়ে যায়। পুলিশের বেতার যন্ত্রগুলো সন্ধ্যার পর মাঠ পর্যায়ে কর্মরত গাড়িচুরি ও ছিনতাইয়ের তথ্য জানাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। প্রতিদিন উত্তরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বাড্ডা ও দক্ষিণখান থানা ছাড়াও কোথাও না কোথাও গাড়িচুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছেই। অফিস আদালত, মার্কেট, হাসপাতাল, বাসাবাড়ির সামনে এমনকি চলতি পথেও সংঘবদ্ধ চক্র নকল চাবি ব্যবহার করে চুরি কিংবা অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। কোথাও গাড়ি রেখে নিশ্চিন্তে থাকা কিংবা কাজ করার সুযোগ নেই। বাড়ির গেট ভেঙেও দুর্বৃত্তরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে গাড়ি এবং মূল্যবান যন্ত্রাংশ। একবার চুরি বা ছিনতাই গেলে তা আর কোনদিন উদ্ধার হবে এই নিশ্চয়তা নেই। মাঝে মাঝে দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও উদ্ধার হয় না গাড়ি। গাড়ি চুরি-ছিনতাই মামলা করে বাদীকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। গত ১৩ এপ্রিল ভাটারা থানার কুড়িল বিশ্বরোড জহিরের গ্যারেজের সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার চুরি করে নেয় ছিনতাইকারীরা। গাড়ির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো-ক-১১-৭৩৯৮। ঐ প্রাইভেটকারটির মালিক হচ্ছে মো. মুনসুর মিয়া। তার বাসা হচ্ছে ৫০/৬০ কুড়িল কাজী বাড়ী রোড,বাড্ডা। চুরি হওয়া প্রাইভেটকারটির দাম হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে ভাটারা থানায় একটি জিডি দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ ঐ গাড়িটি উদ্ধার করতে পারেনি। গত ১১ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জান্তিক বিমানবন্দর থেকে একজন যাত্রী ৩ হাজার ২শ’ টাকায় ভাড়া নেন। যাত্রী প্রাইভেটকার ( ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৪৯৯৩) যোগে মুজাফ্ফর গঞ্জ কুমিল্লা রওনা হন। ছিনতাইকারীচক্রের সদস্যরা কুমিল্লা জেলার চান্দনা থানার মাদাইয়া যাওয়ার পথে কৌশলে প্রাইভেটকারটি ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে মো. মহিউদ্দিন বাদী হয়ে চাঁদপুরের কচুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়াও র্যাব-১ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও একই দিনে রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইকারীরা একটি প্রাইভেটকার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রাইভেটকার নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো-খ-১১-৩৪০৬। অপরদিকে, গত ১১ এপ্রিল রাত আইড়াইটার দিকে প্রাইভেটকারে ৪ জন যাত্রী নিয়ে নোয়াখালী হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ড্রাইভার মো. মামুন শেখ। পথের মধ্যে মদনপুর নাজিম উদ্দিন ভূইয়া কলেজের সামনে ছিনতাইকারীরা ড্রাইভারকে মারধর করে প্রাইভেটকারটি ছিনিয়ে নেয়। প্রাইভেটকার নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো-গ-১৯-১২৮৬। ঐ প্রাইভেটকারটির মালিক হচ্ছে আহাম্মদ হোসেন। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ৪৪৪টি গাড়ি চুরি, প্রতি মাসে অন্তত ৫৫টি ছিনতাইঃ হয়তো কারও অনেক দিনের শখ একটি গাড়ি কেনার। নিজের গচ্ছিত টাকার সঙ্গে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেও ফেললেন। এরপর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বের হয়েছেন রাস্তায়। এমন খুশির দিনে দেখা দিতে পারে বিষাদের কালো ছায়া। যে কোনো সময় আপনার প্রিয় গাড়িটি ছিনিয়ে নিতে পারে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীতে গাড়ি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীতে ৪৪৪টি গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে রাজধানীতে ৫৫টি গাড়ি চুরি হয়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, মোটর সাইকেল, এমনকি রিকশা চুরির ঘটনাও ঘটছে। রাস্তায় চুরি-ছিনতাইয়ের ভয়ে বর্তমানে অটোরিকশা মালিকরাও আতঙ্কিত। সারাদেশে গাড়ি চুরির হার অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেড়ে গেছে বহুগুন। গত দু’মাসে সারা দেশে ৪’শ ৩২টি গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটেছে। আর চুরি হওয়া গাড়ি ব্যবহার হয় ছিনতাই কাজে। এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বেড়েছে তারচেয়ে বেশি। অভিযোগ রয়েছে পুলিশ ও সোর্সদের সহযোগিতায় গাড়ি ছিনতাই করছে চরমপন্থী ও সর্বহারা গ্রুপ। যদিও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলারাকারী বাহিনীর কাছ থেকেও কোনভাবেই ভরসা পাওয়ার মতো কথা শোনা যাচ্ছেনা।
নিত্য-নতুন কৌশলে গাড়ি ছিনতাইঃ রাজধানীতে চালক ছদ্মবেশে হরদম গাড়ি ছিনতাই হচ্ছে। তাদের টার্গেট বিলাসবহুল ও দামি মডেলের অত্যাধুনিক প্রাইভেট কার। এক্ষেত্রে চালক পদে নিয়োগের সময় মালিকের কাছে তারা ভুয়া নাম,ঠিকানা ও কাগজপত্র জমা দেয়। পরে চাকরির প্রথম দিনেই ওই দামি গাড়ি নিয়ে লাপাত্তা। পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানান,রাজধানীতে আরও কয়েকটি কৌশলে গাড়ি ছিনতাই হচ্ছে। এভাবে গত এক বছরে রাজধানী থেকে প্রায় দুই হাজার গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের প্রথম কৌশল হিসেবে তারা একটি মাস্টার কি ব্যবহার করে। এ ছিনতাই চক্রে থাকে ৪-৫ সদস্য। একজন মাস্টার কি দিয়ে গাড়ির লক খুলতে থাকে। অন্যরা অনুসরণ করে গাড়ির মালিক কিংবা চালককে। ১-২ মিনিটের মধ্যেই ওই ছিনতাই চক্র লক খুলে গাড়ি নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট,শপিংমল,হাসপাতাল ও রেস্টুরেন্টের মতো ব্যস্ততম এলাকায় ওত পেতে থাকে এ চক্র। এছাড়া ছিনতাই চক্র কখনও যাত্রীর বেশ ধরে। বিলাসবহুল ও দামি গাড়ির চালককে লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য ভাড়া নেয়। পথে নিরাপদ ও নির্জন জায়গায় চালকের হাত ও পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। কখনও চালককে নেশা জাতীয় খাবার খাইয়ে অচেতন করে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়। চালক চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা টের পেলে ওই চক্র তখন দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে। চালককে হত্যা করে গাড়ি নিয়ে পালায়। ড্রাইভিং শেখার কথা বলেও একটি চক্র রাজধানীতে গাড়ি ছিনতাইয়ে সক্রিয় রয়েছে। এ চক্র প্রথমে চালকের সঙ্গে ভাব জমায়। পরে সুযোগমতো গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের কন্ট্রোল নিয়ে গাড়ি ছিনতাই করে। বিমানবন্দর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ডাকাত সদস্যরা নিজেদের গাড়ি নিয়ে হঠাৎ অন্য একটি গাড়ির সামনে ব্যারিকেড দেয়। পরে অস্ত্র উঁচিয়ে গাড়ি ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। মিরপুর ও আশুলিয়ায় বেড়িবাঁধে আছে ঢিল পার্টি। এ পার্টির লোকজন রাস্তায় চলন্ত গাড়িতে হঠাৎ ঢিল ছোড়ে। চালক বিরক্ত হয়ে গাড়ি থামায়। ধরতে যায় ঢিল নিক্ষেপকারীকে। এ সুযোগে ঢিল পার্টির অন্য সদস্যরা গাড়ি নিয়ে গায়েব হয়ে যায়। এছাড়া একটি চক্র নিজেদের পুরনো গাড়ি দিয়ে টার্গেট করা গাড়িতে ইচ্ছা করে ধাক্কা মারে। পরে গোলমাল বাধিয়ে ওই গাড়ি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। অভিজাত এলাকায় আছে ওত পাতাচক্র। নামীদামি হোটেলে যাত্রী কিংবা মালিককে নামিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ চক্রের সদস্যরা চালককে অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে গাড়ি ছিনতাই করে। এসব ছিনতাই করা গাড়ি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে বেশির ভাগ গাড়ি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় মাদক ও অস্ত্র বহনের জন্য ব্যবহার করে অপরাধীরা। ছিনতাই ও ডাকাতির কাজেও এসব চোরাই গাড়ি ব্যবহার করা হয়। বিআরটিএ ও রাজধানীর নামীদামি বিভিন্ন ওয়ার্কশপের মাধ্যমে গাড়ির রঙ, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, নম্বর প্লেট ও ব্লু-বুক পরিবর্তন করে থাকে একটি চক্র। কখনও কখনও তারা গাড়ির চেসিস নম্বরও বদলে ফেলে। এ কারণে ওইসব গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
অনুসন্ধানঃ গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য মতে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বিবিধ কৌশলে ছিনতাইকারীরা রাজধানী থেকে তিন শতাধিক গাড়ি ছিনতাই করেছে। এর মধ্যে এপ্রিলে ৪৬,মার্চে ৬৩,ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ ও জানুয়ারি মাসে ৫১টি গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ২০১০ সালে কেবল গোয়েন্দা কার্যালয়েই প্রায় ৪০০ প্রাইভেটকার,৭২টি মাইক্রোবাস,৫২টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা,২২টি টেক্সিক্যাব,৮টি ট্রাক,৫টি বাস,৪টি কাভার্ড ভ্যান চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ জমা হয়। ২০০৯ সালে প্রায় ৩৫০ গাড়ি চুরি ও ছিনতাই হয়। ২০০৮ সালে ছিনতাই হয় ৩২৬টি গাড়ি। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুরি ও ছিনতাইকাজে জড়িত ২৫০ গাড়ি চোরের তালিকা করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এদের হাতে গত এক বছরে ১৩জন চালক ও মালিক খুনের শিকার হন। পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান,গত ২রা জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় চালক নূর ইসলাম হিরো ও হেলপার ইমামুল হক মিঠুকে খুন করে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। ১১ই জানুয়ারি রাতে খিলগাঁও থানাধীন পল্লীমা সংসদের সামনে অটোরিকশা চালক ফয়সালকে খুন করে তার অটোরিকশা ছিনিয়ে নেয়। ৩রা ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গোলাপবাগে এক মোটরসাইকেল আরোহীকে গুলি করে তার মোটরসাইকেল নিয়ে উধাও হয় ছিনতাইকারীরা। ১০ই ফেব্রুয়ারি বুয়েটের সামনে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে তার মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ১২ই এপ্রিল লালমাটিয়া এলাকা থেকে মনিরুজ্জামানের প্রাইভেট কার অস্ত্র উঁচিয়ে ছিনতাই করে সন্ত্রাসীরা। একই দিন রাত সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোড থেকে জনৈক মাসুদের প্রাইভেট কার নিয়ে যায় তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হিসাব মতে,গত চার মাসে রাজধানীতে গাড়ি চুরি,ছিনতাই ও ডাকাতি সংক্রান্ত ২০৫টি মামলা হয়েছে। এ সময় ছিনতাইকারীদের হাতে ৪ জন চালক ও মালিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। গোয়েন্দারা জানান,রাজধানী ও এর বাইরে ৫০ শীর্ষ গাড়ি ছিনতাইকারী সক্রিয়। এসব শীর্ষ ছিনতাইকারীর প্রতি গ্রুপে অন্তত ৫ জন করে সদস্য থাকে। গোয়েন্দাদের তালিকার শীর্ষে আছে গাড়ি ছিনতাইকারী বিল্লাল। রাজধানী ঢাকা ও এর বাইরের বিভিন্ন জেলা শহরে তার একাধিক গ্রুপ সক্রিয়। বিল্লালের পর রাজধানী দাবড়াচ্ছে যেসব ছিনতাইকারী তারা হলোঃ গুলজার, হান্নান, বেলায়েত, আক্তার, হাবিল, রাজু, রনি, শহীদ, হাবিব, শাহ আলম, শফিক, জামাল, সাইফুল, সাগর ওরফে পরিমল, মতি, মামুন ও জুয়েল। ঢাকা, সিলেট, হবিগঞ্জ, যশোর ও মাদারীপুরের গাড়িচোর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে গুলজার। রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকার গাড়ি চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত হান্নান ও তার গ্রুপ। মিরপুর ও গুলশানের একাংশ নিয়ন্ত্রণ করে বেলায়েত। বাড্ডা ও উত্তরা নিয়ন্ত্রণ করে আক্তার। হাবিলের নিয়ন্ত্রণে আছে ধানমন্ডি,মতিঝিল ও মোহাম্মদপুরের একাংশ। এছাড়া উত্তরার গাড়িচোর হিসেবে কুখ্যাত রাজু। মাঝে-মধ্যে মোহাম্মদপুর, গুলশান ও ধানমন্ডি এলাকাতেও হানা দেয়। মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সক্রিয় রনি গ্রুপ। খিলগাঁও, বাড্ডায় আছে শহীদ গ্রুপ। মোহাম্মদপুর ও আদাবরে আছে হাবিব গ্রুপ। খিলক্ষেত ও উত্তরায় সক্রিয় শাহ আলম। পল্টন ও ধানমন্ডি একাংশের নিয়ন্ত্রক শফিক। খিলগাঁও, মাদারটেক, মতিঝিল ও বাসাবোর নিয়ন্ত্রক জামাল। শেরেবাংলা নগর ও ধানমন্ডিতে গাড়ি চুরি/ছিনতাই কাজে সক্রিয় সাইফুল গ্রুপ। খিলক্ষেত, উত্তরা,গুলশান,যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকার গাড়ি চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত সাগর ওরফে পরিমল ও মতি গ্রুপ। তেজগাঁও, মতিঝিল ও পল্টন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে জুয়েল। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জানান, শফিক, রাজু, মতি, শহীদ ও হাবিল একাধিক হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামি। এদের কাছ থেকে গাড়ি উদ্ধারসহ তাদের একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই এরা জামিনে বের হয়ে ফের গাড়ি চুরি/ছিনতাই কাজে জড়িয়ে পড়ে। গোয়েন্দা সূত্র মতে, এসব গাড়ি ছিনতাইচক্রের সঙ্গে পুলিশ ও পুলিশের সোর্সও জড়িত। বেশির ভাগ থানা পুলিশের সিভিল টিমের সদস্য গাড়িচোর চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে মাসোহারা নেয়। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ও সোর্স মিলে মাসে একাধিক গাড়ি চুরি করে। পরে ৩-৪ মাস অন্তর চুরি করা গাড়িগুলোর মধ্য থেকে একটি গাড়ি উদ্ধার দেখিয়ে তারা সুনাম অর্জন করে থাকেন।
পুলিশের বক্তব্যঃ অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এ তথ্যে খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তারা জানান, গাড়ি চুরির প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ। বেশির ভাগ চুরির ঘটনায় কোন মামলা হয় না। এ কারণে পুলিশের তথ্যে গাড়ি চুরির প্রকৃত হিসাবও পাওয়া যায় না। পুলিশের রমনা জোনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চুরি বা ছিনতাইকৃত যেসব গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকে না,সেসব গাড়ির মালিকরা সাধারণত মামলা করতে চান না। তারা জিডি করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন,গাড়িচুরি বা ছিনতাই হলে তা উদ্ধারে যে পরিমাণ জনশক্তি এবং প্রযুক্তি প্রয়োজন তা পুলিশের কাছে নেই। ফলে এ সংক্রান্তে থানায় যেসব মামলা হয় তা ডিবির গাড়িচুরি প্রতিরোধ টিমের কাছেই ন্যস্ত করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিসের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বলেন, রাজধানীতে গাড়ি চুরির ঘটনা বাড়লেও উদ্ধারের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। চলতি বছরে রাজধানীর বিভিন্নস্থান থেকে সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল ছিনতাই হয়। নিউনেশনের আব্দুলাহ আল মামুন, কালেরকণ্ঠের ইফতেখার রাসেল ও পার্থ প্রতিম আচার্যসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের মোটর সাইকেল রয়েছে এর মধ্যে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র ডিসি ডিবি বলেন, গাড়ি চুরি প্রতিরোধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গাড়ি চুরির কোনো কোনো ক্ষেত্রে চরমপন্থীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অপরদিকে, ঢাকা সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমএইচ ইকবাল মিরাজ বলেন,অটোরিকশা চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। চোরাই গাড়ি উদ্ধারে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। যদিও তাদের আশ্বাসের বাস্তব কোন প্রতিফলন এখনও দেখা যায় নি।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।
jsb.shuvo@gmail.com