মদ্যপান করে রাজধানীর সূত্রাপুরে ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৮ জন অসুস্থঃ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজধানীর স্বামীবাগে মদ্যপানে সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৮ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে দু’জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এ ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক কারনে মৃত্যর সংখ্যা গোপন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর সাথে পুলিশের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
নিহতরা হলেন, সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতির কথিত স্ত্রী রেশমা আক্তার (৩০) ও রেশমার মামাতো বোন তুসি। মদ্যপানে অসুস্থ সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আবু হানিফ সেতুকে ন্যাশনাল হাসপাতালে এবং তার বন্ধু রাসেদ রেজা রিজভীসহ অন্যরা ঢাকা মেডিকেল ও অন্যান্য ক্লিনিকে চিকিত্সা নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ রাতে স্বামীবাগে মিতালী বিদ্যাপীঠে এক অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন রকমের মদ এক সঙ্গে মিশিয়ে ককটেল বানিয়ে এক কক্ষে বসে ৮-১০ মদ্যপান করছিলেন। সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আবু হানিফ সেতু, শেখ রাসেল শিশু-কিশোর সংগঠনের ওয়ারি থানার সহ-সভাপতি রাসেদ রেজা রিজভীসহ ৮ থেকে ১০ জন গুরুতর অসুস্থ হয়। এর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রেশমা এবং রাত ৩টায় তুসি মারা যান। কাইকে না বলে ময়না তদন্ত না করেই দক্ষিণ মুসুন্ডি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের নেতা সেতুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রেশমা তার বান্ধবী। সে হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে। এ খবর শুনে সেতু অসুস্থ’ হয়ে পড়লে তিনি ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অত্মগোপনে আছেন। বিষাক্ত মদ্যপানে মৃত্যুর ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও বিষয়টি জানেন না ওয়ারী থানার ওসি। স্থানীয় সূত্র জানায়, সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগ ১৫ ডিসেম্বর রাতে মিতালী বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে বিজয় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান খান দীপু। বিশেষ অতিথি ছিলেন ময়নুল হক মঞ্জু ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান (ক্রিকেট) রাইসুল ইসলাম শাহীন। এতে সভাপতিত্ব করেন আবু হানিফ সেতু। আলোচনা শেষে স্কুলের একটি কক্ষে মদ্যপানের আসর জমে। এলাকাবাসী জানায়, বিজয় দিবসর অনুষ্ঠান করার জন্য সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আবু হানিফ সেতু এলাকার মুদি দোকান থেকে শুরু করে বেশ কিছু বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা আকের চাঁদা সংগ্রহ করে। আর সেই চাঁদা তুলে আবু হানিফ সেতু মদের আসর বসায়। এদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ৭৫নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি ময়নুল হক মঞ্জু বলেন, আমি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বক্তৃতা করে আমি এবং এমপি সাহেব সন্ধ্যার আগেই চলে এসেছি। পরে শুনেছি একটি অঘটন ঘটেছে। একজন মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান (ক্রিকেট) রাইসুল ইসলাম শাহীন বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। ছাত্রলীগের ছেলেরা থাকবে এজন্য গেলাম। গঠনমূলক বক্তৃতা করেছি। এরপর আমি চলে এসেছি। এমপি সাহেবও বক্তৃতা করে চলে গেছেন। ঘটনা শুনে হতভম্ব হয়েছি। এই সেতুকে আমি নেতা বানিয়েছি। এখন দল ক্ষমতায় তারা তো আর আমার কথা শোনে না। ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে নেতা নির্বাচনে সব দলই ভুল করে। আমরাও হয় তো করেছি। রেশমার বাবা ফারুক বলেন, রেশমা মারা যাওয়ার খবর টেলিফোনে পাই। তবে কোন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সে বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। রেশমার সঙ্গে শরীফুল নামে এক পুলিশ ইন্সপেক্টরের বিয়ে হয়েছিল। তার সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর সেতুর সঙ্গে বিয়ে হয়। সেতুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। রেশমা ১৩/ই কে এম দাস লেনে নিজের ‘মা মনি’ বিউটি পার্লার পরিচালনা করত। তুসির ৯ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল। তার মেয়ে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আগামী চারদিন পর স্থানীয় লোকদের নিয়ে বৈঠক করে বিচার সালিশ করবেন। তুসির বাবা দিনমজুর মাসুম মেয়ের মৃত্যুর সংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি দয়াগঞ্জ বাজারে দিনমজুরি করেন। ওয়ারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, এ রকম ঘটনা আমার জানা নেই। কেউ মারা গেলে তাদের লোকজন আমাকে জানালে আমি জানতে পারতাম।