সাম্প্রতিক সময়ে কেশবপুরে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হুইপ ওহাবের গাড়ী বহরে হামলা
মিজানুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ যশোরের কেশবপুর উপজেলায় ২০১২ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো স্থানীয় এমপি হুইপ আব্দুল ওহাবসহ তা গাড়ী বহরে উত্তেজিত শত শত জনতার হামলা, যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন পূর্ন উদ্ধার আন্দোলন, উপজেলা চেয়ারম্যান আমির হোসেনের নামে আপন শ্যালক বিপুল সিদ্দিকির মামলা, ফতেপুর বিলে ১৪৪ ধারা জারি ও উন্মুক্ত জলাশয়ে সরকারী পর্যায়ে ছাড়া মাছ নিয়ে নিরীহ কৃষকদের নামে ষড়যন্ত্রমূলক চাঁদাবাজির মামলা।
জানা গেছে, গত ২ জুন সকালে যশোর-৬ (অভয়নগর-কেশবপুর-মনোহরপুর) আসনের এমপি হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব কপালিয়া বিলে টিআরএম প্রকল্পের কাজ উদ্ভোধন করতে গেলে শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে তার বহরের ৯ টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ হামলায় হুইপ ওহাব, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান, এএসপি আবুল কালাম আজাদ (ক সার্কেলের), নওয়াপাড়া পৌর আ’লীগের সভাপতি হাজী রফিকুল ইসলামসহ অনেকে আহত হন। এঘটনায় মনিরামপুর ও অভয়নগর থানায় ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪/৫ হাজার জানকে আসামী করে পৃথক দুটি মামলা হয়। গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় হুইপের সমর্থকরা কপালিয়া বিল সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ভাংচুর করে। এ ঘটনায় পুলিশ ৬ জনকে আটক করে। কপালিয়া বিলে টিআরএম প্রকল্প বন্ধ, মামলা প্রত্যাহার, আটক ৬ ব্যক্তির মুক্তির দাবীতে ভুক্তোভুগি হাজার হাজার জনতা গত ১৭ জুন কীটনাশকের বোতল হাতে নিয়ে প্রতিকী অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। এ ভাবে বিল সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা প্রায় এক মাস ব্যাপী নানা আন্দোলন সংগ্রাম করায় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কপালিয়া বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্প স্থগিত ঘোষনা করে। উল্লেখ্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০০৫ সালে কেশবপুর উপজেলার বিলখুকশিয়ায় দু’বছর মেয়াদী টি.আর.এম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেণ্ট) প্রকল্প গ্রহন করে গত ৬ বছরেও সমাপ্ত করতে না পারা ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরন না দেওয়ায় বিলখুকশিয়া সংলগ্ন ১১ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফলে ১৩ ডিসেম্বর কৃষক সমাজ স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে বিল খুকশিয়ার টিআরএম’ প্রকল্পের কাটিং পয়েন্টের মুখ বাঁধার কাজ শুরু করতে বাধ্য হয়। কেশবপুর পৌর কাউন্সিলর এবাদাত সিদ্দিক বিপুল জানান, তার পিতার সমুদয় সম্পত্তি দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে রেকর্ড করা ও মিস কেসের মাধ্যমে ১১৩/১ খতিয়ান খুলিয়া পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমীর হোসেন পরিকল্পিতভাবে তাকে বঞ্চিত করেছে। কাউন্সিলর এবাদাত সিদ্দিক বিপুল উপজেলা চেয়ারম্যান ও আলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আমীর হোসেনের একমাত্র শ্যালক। এবাদাত সিদ্দিক বিপুল উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেনকে আসামী করে ২৪ জুন যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা করে । যার নং-১৬২/১২। জমিজমা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আমির হোসেন ও উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক বিপুল সিদ্দিকি মামলা মকর্দমায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে সারা বছরই উপজেলা ব্যাপী আলোচনা সমালোচনা চলেছে। কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের ফতেপুর বিলে আগষ্ট মাসে সরকারী পর্যায়ে ১১৪.৫ মণ মাছের পোনা অবমুক্ত করে। নিয়মানুযায়ী মাছ অবমুক্ত করার তিন মাস পর ঔ মাছ জমির মালিক ও গরীব, হতদরিদ্র, নিঃস্ব হওয়া মানুষ ধরতে পারবে। তিন হাজার বিঘা জমি নিয়ে গঠিত ফতেপুর বিলের ৫০/৬০ লাখ টাকার মাছ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি আত্বসাত করতে নানা তৎপরতা শুরু করে। বিলের মাছ প্রভাবশালী মহল যাতে আত্বসাত করতে না পারে এবং বিলের মাছের উপর সকল শ্রেণীর মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবীতে স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক নিকট অভিযোগ করায় ঐ প্রভাবশালী মহল কৃষকদের নামে ষড়যন্ত মুলক দুটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করে। যার মামলা নং-১৮, ২০। এ মামলায় উপজেলার কাস্তা গ্রামের মতলেব শেখের পুত্র হানিফ শেখ, মৃত মমিন শেখের পুত্র শাহিনুর শেখ, ফতেপুর গ্রামের চাঁদ আলীর পুত্র আব্দুল খালেক, লিয়াকত মোল্যার পুত্র হাবিবুর রহমান ও চিংড়া গ্রামের তারাই গাজীর পুত্র মতলেব গাজীসহ ৬ প্রতিবাদী কৃষককে জেল খাটতে হয়েছে। বিলে মাছ ধরা বন্ধ করতে পুলিশ ৮ ডিসেম্বর নোটিশ দিয়ে ফতেপুর বিলে ১৪৪ ধারা জারি করায় পুলিশি আত্বংকে কৃষকরা বীজ তলা তৈরি করতে ও মাছ ধরতে ঔ বিলে নামতে সাহস পারছে না। গত ৫ ডিসেম্বর কেশবপুর থানায় কর্মরত পুলিশ কনষ্টেবল রফিকুল ইসলাম থানার স্টাফ কোয়াটারে নিজ স্ত্রী সুমি ইসলাম (২৫) কে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হয়। পুলিশ কনষ্টেবল রফিক হলেন, নড়াইল জেলার কলাবেড়া গ্রামের আবুল কালাম মোল্যার পুত্র। ১লা ডিসেম্বর কেশবপুর উপজেলার বগার মোড় নামকস্থান থেকে জনতা ১৮ লক্ষ টাকা, মটর সাইকেলসহ সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার গাড়াখালী গ্রামের শহিদুল আলমের পুত্র শামিমুল আলম (৩০) ও আবুল কালাম আজাদের পুত্র জাহিদ হোসেন (২৭) নামে দু’হন্ডি ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করে। কেশবপুর উপজেলাকে নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদীয় আসন-৯০, যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন ফিরে পেতে কেশবপুরের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ সারা বছর ধরে নানা আন্দোলন সংগ্রম করেছে। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন সম্পুর্ন অযুক্তিকভাবে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনটি ভেঙ্গে ১৩০ কি.মি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ৩টি প্রশাসনিক এলাকা নিয়ে যশোর-৬ (অভয়নগর-কেশবপুর-মনোহরপুর) নামে আসন পুর্নগঠন করে। এ সব ঘটনা ছিল কেশবপুর উপজেলা বাসীর আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দু।