বেড়ে যাচ্ছে সরকারের বাজেট ঘাটতিঃ ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেবে সরকার!
জাহিদ হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বাজেটের বৈদেশিক ঋণের ঘাটতি মেটাতে সরকার চড়া সুদে ৫০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া ফের শুরু করেছে। সরকারি গ্যারান্টিতে সভরেন (সার্বভৌম) বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে এই ঋণ নেয়া হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগেও সরকার একবার সভরেন বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। পরে তা নিয়ে আর সামনে এগোয়নি। এই প্রক্রিয়া অনেকটা স্থগিত হয়ে পড়েছিল। সরকার শেষ সময়ে এসে আবার সভরেন বন্ড ছেড়ে এই ঋণ নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের আপদকালীন ব্যয় মেটানোর মতো পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা থাকার পরেও কেন চড়া সুদে বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, গত দুই অর্থবছর ধরে সরকার বাজেট ঘাটতির বৈদেশিক অংশ মেটাতে পারছে না। ওই অংশ মেটাতে হচ্ছে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে। এতে সরকারের ব্যাংক ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এই সমালোচনা এড়াতে সরকার বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছে। সভরেন বন্ডের মাধ্যমে ঋণ নেয়ার বিষয়ে একটি নীতিমালা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৭ জানুয়ারি কমিটির প্রথম বৈঠক বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তারা বন্ডের মেয়াদ, সুদের হার, পরিশোধ পদ্ধতি, কারা কিনতে পারবেন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দেশের আপদকালীন বৈদেশিক ব্যয় মেটাতে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হয়। বর্তমানে গড়ে বাংলাদেশে প্রতি মাসে আমদানি খাতে ব্যয় হয় ৩০০ কোটি ডলার। এ হিসাবে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রয়োজন হবে ৯০০ কোটি ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য আমদানির বাড়তি কোনো চাপ নেই। ফলে ওই মাত্রার চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলা জরুরি নয়। তারপরও বাংলাদেশের বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। যা নিরাপদ মানের চেয়ে ৪০০ কোটি ডলার বেশি। বৈদেশিক দায় মেটানোতে সরকার সন্তোষজনক অবস্থায় থাকলেও কেবলমাত্র বৈদেশিক ঋণ ছাড় কম হওয়ায় বাজেট ঘাটতি মেটাতে চড়া সুদে ঋণ নেয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরে অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৪৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ায় ঘাটতির পরিমাণ আরো বেড়ে ৪৬ হাজার ৩২৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি থেকে বেড়ে ২৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অনুদান ছাড়া ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকার ঘাটতি ধরা হয়। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ধরা হয় ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার কোটি টাকা।
বৈদেশিক ঋণ ছাড় কম হওয়ায় সরকার আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। ঘাটতি মেটাতে সরকার সময় মতো বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাচ্ছে না। ফলে সরকারের বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে।