আসুন শিবির ঠেকাই বাঁচাই দেশ
মীর আব্দুল আলীমঃ ভয়ঙ্কর রুদ্ররূপে জামায়াত-শিবির। পুলিশ হতচকিত, অসহায়। জনগন আতংতিক। পুরনো উদ্দেশ্য সাধনের নয়া কৌশলে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির। উদ্দেশ্যটা স্পস্ট। ‘৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের রক্ষা করা। শিবিরের ক্যাডাররা অতর্কিত হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করছে,যানবাহন ভাঙচুর করছে, জ্বালিয়ে দিচ্ছে, হাতবোমা ছুড়ে মারছে। তাদের হামলার মূল লক্ষ্য এখন পুলিশ। ৩১ জানুয়ারীরর হরতালে যশোহরের মনিরামপুওে জহুরর ইসলাম নামে এক পুলিশ সদস্য জামায়েত- শিবিরের হাতে খুন হয়েছে। দেশে ত্রাস সৃষ্টি করে ধর্মের অপব্যবহারকারী দেশদ্রহে তুষ্ট দলটি তাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে যুদ্ধাপরাধিদের বিচারকাজ বানচাল করতে চাইছে। বর্তমান সরকারের ৪ বছরে যত তান্ডব হয়েছে হাল সময়ের জামাত শিবিরের তান্ডব সবকিছুকে হার মানাচ্ছে। ৩১ জানুয়ারি জামায়ত শিবিরের ডাকা হরতলের আগের দিন এবং হরতালের দিন তাদের তান্ডব চালিয়েছে। ২৮ জানুয়ারী কমান্ডো স্টাইলে প্রায় একই সময় রাজধানীসহ বহু জেলায় একযোগে শিবির গাড়ি ভাংচুর করল, আগুন দিল; পুলিশকে পিটিয়ে জখম করল। চোরাগোপ্তা হামলায় এবারও শিবিরকর্মীদের মূল টার্গেট ছিল পুলিশ। শিবিরের হামলার পর গোয়েন্দাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ে পৌঁছার অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে অনেকটা নির্বিঘেœ সচিবালয়ের সামনে হামলা চালাল শিবির? অনেক স্থানে শিবির ক্যাডারদের হাতে পুলিশ সদস্যরা অসহায়ের মতো মার খাচ্চেন। এরই মধ্যে তারা জীবনও দিয়েছেন। প্রশ্ন, পুলিশ কি বারবার শিবির ক্যাডারদের হাতে মার খাবে ? জীবন হারাবে ? নাকি শক্ত হাতে তাদের মোকাবেলা করবে? অসৎ উদ্দেশ্যে তারা এর আগেও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের প্রতিবাদের নামে আবারও মাঠে নামতে চাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবেই জামায়াত-শিবির নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে । ‘৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই শিবির ক্যাডাররা পুলিশকে তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। রাজধানীর কাকরাইলে তারা সুপরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়ে নৈরাজ্যেও যাত্রা শুরু করে। এরই মধ্যে তারা পুলিশের ওপর অনেকবার হামলা চালিয়েছে, পুলিশকে পিটিয়ে জখম করেছে। শুরু থেকেই জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্য দমনে পুলিশের শৈথিল্য কাজ করছে। এমনও দেখা গেছে, সহকর্মী পুলিশ সদস্যকে শিবিরের হামলার শিকার হতে দেখেও অন্য পুলিশ সদস্যরা নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে। মূলত দায়িত্ব পালনে পুলিশের শৈথিল্যের কারণেই শিবিরের নৈরাজ্য এখনও চলছে।
দিন যত গড়াচ্ছে মৌলবাদী জামায়াত-শিবির ততই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। ক্রমেই তাদের জঙ্গি চেহারা স্পষ্ট হচ্ছে। জামায়াত-শিবির যে চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে,তা এককথায় ভয়ংকর। তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় থেকে শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করার কথা বললেও মানসিকতায় জঙ্গিবাদকেই লালন করে এটা আবারও প্রমাণিত হলো। পুলিশের ওপর হিংস্র তান্ডবের মধ্য দিয়ে তাদের জঙ্গিবাদী মানসিকতা অনেকবারই প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও তাদের দমনে এ পর্যন্ত সরকার যে ভূমিকা রেখেছে তাকে বলতে হবে অনেক নমনীয়। সরকারের এই নমনীয়তা ভবিষ্যতে সারা জাতির জন্য সংকট বয়ে আনতে পারে। সরকারকে জামায়াত-শিবিরের এই নৈরাজ্য কঠোর হাতে দমন করতে হবে। তা না হলে এ অবস্থায় যে কোন সময় বড় ধরনের জঙ্গী হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। হঠাৎই ক্ষেপে ওঠেনি জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা। পুলিশের সঙ্গে আকস্মিকভাবে তাদের সংঘর্ষ বাঁধেনি। তারা সংঘর্ষ বাধানোর প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছে । পাঠন নিশ্চই মনে আছে, গত ৫ ও ৬ নভেম্বর ব্যাগে করে ইট-পাথর, অস্ত্র, আর লাঠিসোটা এনেছিল। ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবির একই কায়দায় নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছে। এর আগেও ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কয়েকজন শীর্ষ জামাত নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ আমলে নেয়ার নির্ধারিত দিনে রাজধানীতে একই সময়ে ১৪টি স্থানে ব্যাপক বোমাবাজি, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়। যা দেশ নয় পাশ্বর্তী দেশগুলোকেও আতংকিত করে তোলে। এদিকে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শীর্ষ পাঁচ জামাত নেতার মুক্তির দাবিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তান্ডব চালায় জামাত। বলতেই হবে, এসব ঘটনা বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিত। জামায়াত-শিবির পরিকল্পনার বাহিরে কিছু করে না এটাও স্পস্ট। তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যাহত করতে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। ঢাকা, খুলনা, দিনাজপুর, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে জামাতকর্মীদের সংঘর্ষে এ যাবৎ অন্তত সহ¯্রাধীক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশের মনোবল নষ্ট করতেই পুলিশেরন উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা । দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতেও জামায়াতের এ তৎপরতা । গত কয়েক দিনের জামাতি তান্ডবে জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করেন, যুদ্ধাপরাধ বিচার বানচালের পাশাপাশি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার সুযোগ খুঁজছে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীও তাদের মিত্ররা। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই আবারো নাশকতা চালাতে মাঠে নেমেছে তারা। গত ৫ ও ৬ নভেম্বওে ২৮ জানুয়ারী রাজধানীসহ সারা দেশে জামাতের সহিংস তান্ডবকে আকস্মিক কোন ঘটনা মনে করার কোনো সুযোগ নেই। যা কেনোভাবেই প্রশ্রয় পেতে পারে না। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলা, যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর চালায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এই দলটি। বিক্ষোভ কর্মসূচির নামেই জামাতকর্মীরা দেশজুড়ে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা চালায়। দলটির শীর্ষ নেতারা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। ফলে গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে জামায়াত। স্বাভাবিকভাবেই এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্যই জামায়াত নতুন নতুন কৌশল খুঁজে বের করছে।
জামায়াত-শিবির দলটি গত ৪ বছরে কোন আন্দোলন করেই সুবিধা করতে পারেনি। এখন থেকে আর ঘরে বসে থাকা কর্মসূচি হবে না এমন নিতিই পোষন করেছে জামায়াত। তাদের কথা রাজপথে আন্দোলন হবে।’ পূর্বপ্রস্তুতি জামায়াত-শিবিরের কৌশলের সঙ্গে পেরে উঠছেন না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জামায়াতের আন্দোলন ঠেকাতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও সহিংসতা হয়। এক স্থানে ঘোষণা দিয়ে তাৎক্ষণিক অন্য স্থানে মিছিল-সমাবেশ করে ব্যতিব্যসত্ম রেখেছে পুলিশকে। জামায়াত-শিবিরের এ কৌশল প্রশাশনকে বেকায়দায় ফেলেছে। তারা রিতিমত হিমশীম খাচ্ছে। জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা এখন কারাগারে। জামায়াত কর্মীরা তাদের মুক্তির দাবি করছে। প্রশ্ন হল, তাদের এই দাবি কতটা যৌক্তিক। অভিযুক্ত জামায়াত নেতারা যদি নির্দোষ হয়ে থাকেন, তাহলে তো ট্রাইব্যুনালের রায়েই তারা মুক্ত হবেন। আর যদি তারা দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে সেই রায় মেনে নিতে আপত্তি কোথায়? ৭১’রে বাংলাদেশের মানুষ যখন পাকিস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত, তখন এ দেশেরই কিছু মানুষকে পাকিস্থানের পক্ষাবলম্বন করতে দেখা গেছে। সে সময় পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হয় রাজাকার, আলশামস, আলবদর প্রভৃতি বাহিনী। পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী দেশজুড়ে যে তান্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চালায়, সে অপকর্মে সহযোগী হিসেবে কাজ করে এসব বাহিনীর সদস্যরা। একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে আলবদর বাহিনীর সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টিও সবার জানা। কর্মসূচি পালনের অধিকার যেকোনো রাজনৈতিক দলেরই আছে। কিন্তু কর্মসূচি পালনের নামে সহিংসতা মেনে নেওয়া যায় না। জামায়াত সহিংসতার পথই বেছে নিয়েছে।৭১’এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গণহত্যা ও নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কামারম্নজ্জামানসহ জামাতের ৯ শীর্ষ নেতার বিচার চলছে আমত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আরো অনেক নেতাকে এই বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। সরকার পক্ষের অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষে পরিকল্পিতভাবে এই তান্ডব চালিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটি। জামায়াত –শিবিরের নেতৃত্বকে তাই মানুষের মন থেকে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাগুলো দূর করার লক্ষ্যেই শান্তিপূর্ণ রাজনীতির পথ গ্রহণ করা উচিত। সহিংসতা পরিহার করা উচিত।
বরাবরই আমরা লক্ষ করে আসছি, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই এ বিচার ভন্ডল করতে বেপরোয়া হয়েই মাঠে নেমেছে জামাত। এ বিচারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে, বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লবিস্ট পর্যন্ত নিয়োগ করেছে। বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করতে এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক নেতাদের বিচার থেকে বাঁচাতে দেশের অভ্যন্তরেও তারা নানা অঘটন ঘটিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে চাইছে। তাদের ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচিতেই দেখা যাচ্ছে তারা মারমুখী হয়ে মাঠে নামছে। কমান্ডো স্টাইলে পুলিশের ওপর হামলা করছে। হত্যা করছে। নাশকতা চালাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া যতো অগ্রসর হচ্ছে, এ ধরনের অপতৎপরতা বাড়েই চলেছে। গত দেড় বছর ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশে জামায়াতের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি রাজপথে ‘যুদ্ধংদেহী’রূপে নিজেদেও আবিভূত করেছে দলটি। আমরা মনে করি কোন অবস্থাতেই দেশে অরাজকতা সৃষ্টিকারী দলটি এমন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে না, যা দেশ ও সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে। দেশে কোনোরকম নৈরাজ্য সৃষ্টি হোক তা কেউ কোর দল চাইতে পারে না। জামায়াত-শিবির ‘কর্মসূচি’র নামে যা করছে তা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন নয়। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী সে যেই হোক, তাকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। জামাত-শিবিরের নাশকতা ও তান্ডবের পুনরাবৃত্তি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। সদা সতর্ক থাকতে হবে গোয়েন্দাদের; সচেতন থাকতে হবে দেশের আমজনতাকে যেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার ব্যাহত করতে কোনো মহল যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ না পায়। মনে রাখতে হবে মিত্রের অভাবে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে জামায়াত। তারা এখন মরণ কামরের অপেক্ষায়। সে সুযোগ কিছুতে যেন তারা না পায় এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিতরা মাথায় ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন; সর্বপরি জামায়াত-শিবিরের তান্ডব মোকাবেলায় এবং দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
(লেখক-মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, কলামিষ্ট, নিউজ-বাংলাদেশ ডটকমের সম্পাদক)