শাহবাগের আন্দোলন এবং সাংবাদিকতায় নতুন অভিজ্ঞতা
______________________________________________________________________
এক.
একজন ব্লগার। ছদ্মনামে লেখেন। ব্লগের অধিকাংশ লেখক-ই এই কাজটি করেন। ছদ্মনামে লেখা একজন ব্লগারকে খুঁজে বের করা সহজ কথা নয়। অন্তত আমাদের পুলিশ/গোয়েন্দা বাহিনী’র কাছে তো এটা রীতিমতো অসম্ভব ব্যাপার। তাহলে ‘থাবা বাবা’ নামে পরিচিত এই ব্লগারের নাম,ঠিকানা যোগাড় করে তাকে কারা খুন করলো? শত্রু আন্দোলনে ঢুকেছে। বহু আগেই এমন আশঙ্কা আমি করেছিলাম। সেটার আংশিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিলো লাকীকে আহত করার মাধ্যমে। সেটা অনেকে মানতে চাননি। বলেছেন,লাকীর উপর আক্রমণ জামায়াতের অপপ্রচার। আমাকে সরাসরি এমন কথা বলেছেন একজন প্রবাসী। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে তিনি কী বলবেন? এটাও কী জামায়াতের অপপ্রচার? শত্রু আমাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে। আমাদের বন্ধু সেজে। এই মৃত্যুকে যদি সহজভাবে নেয়া হয়,তাহলে পরিণাম নিশ্চিত ভয়াবহ।
দুই.
সহজ কথায় বলতে গেলে বর্তমান প্রযুক্তি সম্পর্কে আমার জ্ঞান কম। আমি অন্যের সহযোগিতা ছাড়া ঠিক মতো কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারি না। এটা আমার ব্যর্থতা সন্দেহ নেই। আমার ফেসবুক আইডি,বিভিন্ন ব্লগ আইডি,আমার বন্ধু বা সহকর্মীদের খুলে দেয়া। আমি কোন মতে ব্যবহার করি। তবে,ব্লগে নিজের নাম ব্যবহার না করে কেন ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়,সেটা আমার সীমিত বুদ্ধিতে আজও বুঝতে সক্ষম হইনি। ফেসবুকে ফেইক আইডি নিয়ে আমার এক ধরণের ঘৃণা কাজ করে। তেমনি ব্লগ লেখকদের নিজের পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টিও আমাকে পীড়া দেয়। প্রযুক্তির আশীর্বাদকে আমরা স্বচ্ছ রাখতে পারিনি। পরিচয়ের গোপনীয়তার ফলে,আজে-বাজে কথা লেখা,অন্যকে হেয় করা,অহেতুক গালালালি করা খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয়তো সেই কারণেই তরুণ সমাজের এক শ্রেণী এই ধরণের ফেইক আইডি খুলে বসেছে। এর ফায়দা লুটছে জামায়াতের মতো সুবিধাভোগী কর্মীরা। তারাও ফেইক আইডি খুলে,বিভিন্ন ব্লগ,ফেসবুকে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। অন্যের কর্মকাণ্ড নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে। পরে ঝোপ বুঝে কোপ মারে। আমার মনে হয়,এই ধরণের ফেইক আইডি বন্ধ করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও অপরাধ প্রবণতা কমানো সম্ভব। শুধু মাত্র ফেইক আইডি’র জন্য আমি ব্লগে লেখা ছেড়ে দিয়েছি। ক্ষেত্র বিশেষ,লেখা প্রকাশে নিজের নাম ব্যবহার করতে ভয় বা আপত্তি থাকে। কিন্তু আমার মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে কেন নিজের নাম পরিচয় গোপন করবো? তাহলে সেই মতামতের গুরুত্ব থাকলো কোথায়?
তিন.
ছদ্মনাম ব্যবহারের কিছু নৈতিক কারণ থাকতে হয়। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলছি। ‘নতুনদেশ’ নামের একটি সাপ্তাহিক অনলাইন পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকে এটির সাথে আমি জড়িত। না। আমাকে কেউ লেখা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেনি কখনও। আমি নিজে পত্রিকাটির সম্পাদক (শওগাত আলী সাগর) সাগর ভাইকে লেখা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। প্রথমে সাগর ভাই আমাকে বলে বসলেন,আমরা তো লেখার পারিশ্রমিক দিতে পারবো না,আপনি বিনা পারিশ্রমিকে কেন লিখবেন? আমি বিনীতভাবে আমার পরিচয় তার কাছে তুলে ধরলাম। আমি প্রয়াত বিশিষ্ট সাংবাদিক সুনীল ব্যানার্জির একমাত্র সন্তান জানার পর তিনি আর কোন প্রশ্ন করেননি। মেডিকেল কলেজের পড়া ছাড়তে হয়েছে নানান পারিপার্শ্বিক কারণে। এরপর সাংবাদিকতা। লিখতে হলে পড়তে হবে। জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। অশিক্ষিত সাংবাদিক হয়ে সম্মান পাওয়া যায় না। আমি লিখি সম্মান আর ভালোবাসার জন্য। ইংরেজী সাহিত্যে মাষ্টার্স পাশ করেও আমার জ্ঞানের পরিধি যথেষ্ট সীমিত। তথাপি,আমাকে অশিক্ষিত অন্তত কেউ বলতে পারবে না। যাই হোক। ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর। আমি দৈনিক বাংলাদেশ সময়ে সহযোগী সম্পাদক হিসেবে চাকরি করি। দেশের বিভিন্ন দৈনিকে লিখি এবং নতুনদেশে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত লেখা দেই। এই বিশেষ তারিখটির কথা এজন্য উল্লেখ করলাম, ঐ তারিখে আমার একটি লেখা প্রকাশ হয়েছিলো নতুনদেশে। লেখাটির শিরোনাম ছিলো ‘সাংবাদিক ছোটন এখন পত্রিকার শিরোনাম’। ছোটন ছিলো আমার অনুজ সাংবাদিক। আমাকে খুব শ্রদ্ধা করতো। লালন উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে ট্রলারডুবিতে তার মৃত্যু হয়। ঐ ঘটনায় আমি মানুষের বিবিধ ভন্ডামি দেখেছি। সেই কথা আমি আমার লেখায় তুলে ধরেছিলাম। একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সেই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির কথা লিখেছি। সুতরাং আমাকে আর ঐ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে দেয়া হয়নি। আমি চাটুকারিতা না করে প্রকৃত সত্যি লিখেছি,এটাই আমার বড় অপরাধ। আমাকে কারও খুঁজে বের করতে কোন সমস্যা হয়নি,কারণ আমি লিখেছি আমার নিজের নামে। সৎ সাহস না থাকলে ছদ্মনামে লিখতে পারতাম। সেই কাজটি আমি করিনি। যা এখন অহরহ ব্লগ কিংবা ফেসবুকে ঘটছে। আমি বলেছি, ছদ্মনাম ব্যবহারের কিছু নৈতিক কারণ থাকতে হয়। এবার আসছি সেই প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ সময় থেকে আমাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। আমি ছেড়েও দেই। কিছুদিন পর চাকরি হয় দৈনিক সকালের খবরে। সেখানে আমি ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতাম। কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লেখার অভ্যাস আমার দীর্ঘ কয়েক বছরের। এর ফলে আমার বাড়তি কিছু আয়ও হতো। আমাকে বলা হলো,সকালের খবরে চাকরি করে অন্য কোথাও লেখা যাবে না। আমি একটা মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে গেলাম। লেখা-লেখি করা আমার নেশা। এই নেশা ছাড়বো কি করে? নতুনদেশের সম্পাদক সাগর ভাই আমার সুখ-দুঃখের সাথী। তার কাছে পরামর্শ চাইলাম। তার উপদেশ মতো নতুনদেশে আমি ছদ্মনামে লিখতাম। তবে সেটা অবশ্যই কলাম হিসেবে। বিশেষ কোন রিপোর্ট নয়। সাগর ভাই আমাকে বলেছিলেন, নীতি বজায় রেখে লিখতে। আমি তার উপদেশ মেনে চলতে চেষ্টা করেছি। যেহেতু আমি একটি পত্রিকার ষ্টাফ রিপোর্টার,সেক্ষেত্রে অন্যত্র কোন রিপোর্ট দেয়া মানে পত্রিকাটির সাথে বেঈমানী করা। আমি সেটা কখনও করিনি। সকালের খবরে চাকরি করার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য আমার বেশিদিন হয়নি। সেখান থেকেও চাকরি ছাড়তে হয়েছে। চাকরি ছাড়ার পর আবার নতুনদেশে লিখেছি নিজের নামে।
চার.
আমার বাবা বিখ্যাত সাংবাদিক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার রক্ত আমার শরীরে। অন্যায়ের সাথে কখনও বাবাকে আপোষ করতে দেখিনি। আমিও একই পথের পথিক। অন্যায় মেনে নেয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি চাটুকারিতা পারি না বলে অনেকের বিরাগভাজন। আমার কথা হলো,পরিশ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেবো,সেক্ষেত্রে চামচামি কেন করতে হবে? আমি হয়তো সময়ের উল্টো শ্রোতে চলছি। এই কারণে আমার কোথাও চাকরি জুটছে না। গত বছর ২০ এপ্রিল। দিনটি আমার বাবার জন্মবার্ষিকী। ফেসবুকে বাবার একটি ছবি পোষ্ট করেছিলাম। সেটি দেখে,বাবার জনকন্ঠের এক সময়ের সহকর্মীর বুক ফেটে গেলো। তিনি আমার ওয়ালে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে বললেন। এই ভদ্রোলোককে আমি বাবা বেঁচে থাকতে চিনতাম। বাবা তাকে খুব স্নেহ করতেন। চমৎকার চেহারার মানুষটিকে বাবা ক্লিনটন বলে ডাকতেন। উনার বাড়ি ময়মনসিংহে। আমার মায়ের বাড়িও ময়মনসিংহে। সুতরাং বাবার বহু সহকর্মী আমার মাকে বৌদি বলে সম্বোধন করলেও তিনি দিদি বলে সম্বোধন করতেন। এখন তিনি বাংলাভিশন টেলিভিশন চ্যানেলের কর্ণধারদের একজন। আমি তার ডাক পেয়ে ছুটে গেলাম অফিসে। একটি চাকরি আমার খুব দরকার। ঘরে অসুস্থ মা। পেশায় সচল না থাকলে,আয়-রোজগার না থাকলে এই যুগে টিকে থাকবো কী করে? সব কিছু তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইলেন। মায়ের সাথে ফোনে কথাও বললেন। আমার টিভি চাকরিতে কোন অভিজ্ঞতা নেই জেনেও তিনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন। আমাকে বললেন,আমি যেন তার মোবাইলে মিস কল দেই। তিনি কল ব্যক করবেন। আমার সেল নম্বরটি সেভ করে রাখলেন। অযথা বেকার মানুষ হয়ে কেন পয়সা খরচ করে তাকে ফোন করবো? বাহ! তার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বাংলাভিশনে চাকরি নিশ্চিত জেনে বেশ পুলক অনুভব করলাম। পুলক উবে যেতে কিছুটা সময় লেগেছে। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত তিনি আমার কোন ফোন কল রিসিভ করেননি। ফেসবুকে শত শত ম্যাজেস পাঠিয়েও তার কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এই ভন্ডামির রহস্য আজও আমায় বিস্মিত করে। কেন উনি এমন আন্তরিকতা দেখালেন,আর কেনই বা সাড়া বন্ধ করে দিলেন!
পাঁচ.
চাকরির সন্ধান করতে গিয়ে আমি মানুষের বহুরূপিতা দেখেছি। প্রথমে অনেকেই আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু পরবর্ত্তীতে কেউ কথা রাখেননি। কেন রাখেন নি,সেটা আমার কাছে রহস্য। আমার যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে,সেটা আমাকে পরিস্কারভাবে বলতে অসুবিধা কোথায়? আশ্বাস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে কি আনন্দ? অপরকে দুঃখ দিয়ে কোথায় সুখ? গত বছর অনুসন্ধানী রিপোর্টিং এর জন্য আমাকে জাতিসংঘের ইউএনডিপি পুরস্কার দেয়া হয়। সেই পুরস্কারের প্রাইজ মানি দিয়ে আমি একটি অনলাইন পত্রিকা খুলেছি। এটা খোলার পেছনে আমার উদ্দেশ্য ছিলো,আমি শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়েদের কাজের সুযোগ দেবো। তাদের কাজে ভুল হলে, নিজের সাধ্য অনুযায়ী সেটা সংশোধন করবো। আমি অনেকের সাথে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করলাম। সবাই আমাকে উৎসাহ দিলেন। আমার পত্রিকাটির শ্লোগান ঠিক করে দিলেন সাগর ভাই। রাজীব হাসান নামে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার বিনা মূল্যে পত্রিকাটির ব্যানার করে দিলেন। যাদের উৎসাহে এটির কাজ শুরু করলাম, এখন আর তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। মানুষের এরূপ মানসিকতায় আমি বিপর্যস্ত। এমন কেন হবে? এমন শত শত ‘কেন’ আমার মনে সারাক্ষণ ঘুরপাক খায়। শত চেষ্টা করেও আমি এর উত্তর আবিস্কার করতে পারি না।
ছয়.
শাহবাগের আন্দোলনের আজ ১২তম দিন। আন্দোলনের সূত্রপাত রাজাকার কাদের মোল্লার ফাঁসি’র দাবী। সেখান থেকে সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে প্রতিবাদ মুখর শাহবাগ চত্বর। এই আন্দোলন আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। রায় ঘোষণার দিন সকাল থেকে আমি টিভি আর ফেসবুক খুলে বসে আছি। ঘোষণার পর রীতিমতো মুষড়ে পড়লাম। এটা কী শুনছি? ভুল নয় তো? না ভুল শুনিনি। কাদের মোল্লা’র মতো ভয়ংকর রাজাকারকে ফাঁসি দেয়া হয় নি। সে যখন দুই আঙ্গুলে ‘ভি’ চিহ্নিত ঈঙ্গিতটি টিভি ক্যামেরার সামনে তুলে ধরে প্রহসনের হাসি হাসছিলেন,তখন নিজের মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। এরপর শাহবাগের আন্দোলনের শামিল হলাম। আমি টিভিতে নিজের চেহারা দেখানোর জন্য কিংবা পাবলিক রিলেশন বাড়ানোর জন্য সেখানে যাই না। আমি যাই প্রাণের তাগিদে। আমি দেখেছি,অনেকেই ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছেন,হাস্য-রসিকতা করছেন। কেউ বা সুযোগ মতো নিজের তদ্বির করছেন। বিষয় গুলো আমাকে হতাশ করেছে। যারা সেখানে নিয়মিত যান,তারা কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না,যে আমি মিথ্যে বলছি। এই বিষয় গুলো আমার মতো অনেকের কাছে খারাপ লাগলেও কেউ লেখেননি। এড়িয়ে গেছেন। তারুণ্যের এই উন্মদনাকে এক তরফা স্বাগত জানিয়েছেন। আমিও তাদের স্বাগত জানাই। পাশাপাশি স্বার্থান্বেষী মহলকে জানাই ঘৃণা। আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে দেখেছি, ‘শাহবাগ যাচ্ছি,তবে আন্দোলনে যোগ দিতে নয় আড্ডা দিতে’। এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেন একটি মেয়ে। সে একটি অনলাইন পত্রিকায় কাজ করে। আমি আবিস্কার করলাম, লাকীর মতো নারীও এই দেশে আছে আবার ঐ নব্য রাজাকার সাংবাদিকের মতো নারীও আছে। যাদের স্ট্যাটাসে লাইক/কমেন্টের বহর পড়ে যায়। কেউ কেউ নিজের বইয়ের সাফাই গাইছেন। অমুক চ্যানেলে তার সাক্ষাৎকার দেখানো হবে,সেই কথা জানাচ্ছেন। তাদের এই আন্দোলন নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তারা আছেন নিজস্ব অর্থের বৃত্তের গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে। কিছুদিন আগে জামায়াত যখন প্রথম এককভাবে হরতাল আহ্বান করেছিলো তখন প্রবাসী একজন মহিলা বিশাল এক স্ট্যাটাস দিলেন। তিনি লিখলেন আওয়ামীলীগ ঠেকাতে হলে জামায়াতকে সমর্থন করার কোন বিকল্প নেই। এই মহিলাকে আমি চিনি। তিনি সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ’র আত্মীয়া। ফরহাদ খাঁ দম্পতি নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর,আমার কলম চলেছে সবচেয়ে বেশি। নিজের ঢাক পেটানোর জন্য নয়,কথাটা বলছি বিষন্ন বেদনা বোধ থেকে। আমি নির্যাতিত হয়েছি। সন্ত্রাসীদের হুমকী তোয়াক্কা না করে অবিরাম লিখেছি এই হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবী নিয়ে। অসংখ্য পুলিশ কর্মকর্তা,সাংবাদিক বন্ধু রাতারাতি আমার শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। আমার অপরাধ আমি ফরহাদ খাঁ’র হত্যাকারীদের ফাঁসি’র দাবী জানিয়ে লিখছি। অবশেষে হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। এখনও কার্যকর না হলেও অবিলম্বে হবে আশা করা যায়। এর পর থেকে ঐ মহিলা কিংবা ফরহাদ ভাইয়ের একমাত্র প্রবাসী তনয়া একটি বারের জন্যও আমাকে একটি ধন্যবাদ জানায়নি। বরং তারা বিভিন্ন জায়গায় আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন শুনেছি। অথচ এই রায়ের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তারা দু’জন আমার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। আমি যদি এদের বহুরূপি বলি তাহলে কী খুব বেশি ভুল হবে? এমন বহুরূপি, ছদ্মবেশী আমাদের ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় যেমন অনেক রয়েছেন,তেমনি রয়েছেন আমাদের চারপাশে। এখন তাদের মুখোশ কিছুটা হলেও উন্মোচন হচ্ছে। আরও হবে। এই বহুরূপিদের কেউ না কেউ রাজিব হায়দার এর খুনের সাথে জড়িত। আমি নিশ্চিত, খুব কাছের কেউ না হলে ছদ্মনামধারী এই ব্লগারকে শনাক্ত করতে পারতেন না। রাজিবের বন্ধু সেজে মিশে থাকা কেউ না কেউ তার রক্ত চুষে খেয়েছে। ধিক্কার জানাই এই মনুষ্যত্বকে। শত শত ব্লগার এখন নিজেদের নেতা ভাবতে শুরু করেছে। আমি নিজে এমন দুই/একজন ফালতু ছেলেকে দেখেছি। তারা অপেক্ষায় থাকে কখন কোন বিখ্যাত কেউ আসবে। তার সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করবে। আমি পরিস্কার ভাবে বলতে চাই,এই আন্দোলনের ছত্রভঙ্গ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। কোনভাবে যদি এই আন্দোলন বিফলে যায়,তাহলে সেটা হবে সমগ্র জাতির জন্য ব্যর্থতা। আমাদের বিবেক বোধকে জাগ্রত করে অপশক্তিকে রুখতে হবে। দিনের পর দিন এভাবে আন্দোলন চলতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট সময় বেধে দিতে হবে। সার্বিক প্রচেষ্টাই হতে পারে সফলতার চাবিকাঠি।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।
Jsb.shuvo@gmail.com